রাজধানীতে ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কুমিল্লার মুরাদনগরের ফাইম খান (২১)। সূত্রাপুর থানার মামলায় ১৭ জানুয়ারি গ্রেপ্তারের পরদিন তাঁর জামিন হয়। তাঁর মতো গত আড়াই মাসে রাজধানীতে ছিনতাই, ডাকাতি ও দস্যুতার মামলায় গ্রেপ্তার অন্তত ১৫০ জন জামিন পেয়েছেন। গত সপ্তাহের কেবল প্রথম দুই কর্মদিবসে অন্তত ৪০ জনের জামিন হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ছিনতাই, দস্যুতা ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের শঙ্কা তৈরি হয়। ঢাকা ও এর আশপাশে ২৭৯টি ছিনতাইপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করেছে র‌্যাব।

ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে সারা দেশে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নানা অভিযোগে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ছিনতাই-ডাকাতির মামলার অনেক আসামি জামিনে বেরিয়ে আসায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে চিন্তা দেখা দিয়েছে।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৪২৬টি, যা আগের একই সময়ে ছিল ১৮২টি। অর্থাৎ ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে ১৩৪ শতাংশ। সর্বশেষ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে ১৪৬টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৬২টি।

গত সাত মাসে দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৩৮টি, যা আগের বছরে একই সময়ে ছিল ৭৩৫টি। অর্থাৎ দস্যুতা বেড়েছে ৪১ শতাংশ। গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে ৪২২টি। গত বছর এই দুই মাসে দস্যুতার ঘটনা ঘটে ২৩৫টি।

* গ্রেপ্তারের এক দিন পরেও ডাকাতির মামলার আসামির জামিন। * জামিন হলেও অন্য মামলা ‘শোন অ্যারেস্ট’-এর চিন্তা পুলিশের। * তথ্যভান্ডারের মাধ্যমে অপরাধীদের ওপর নজরদারি চলছে। * অপরাধীদের জামিনের বিষয়ে সরকারের কাছে পুলিশের উদ্বেগ।

এ অবস্থায় ছিনতাই, ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এসব অপরাধীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি এ ধরনের মামলার আসামিরা কোনো পক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করে জামিন পাওয়ার পথ তৈরি করছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখতে মাঠপর্যায়ের পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অপরাধ অনুযায়ী মামলা না নিয়ে দুর্বল ধারায় মামলা হচ্ছে কি না, তা–ও দেখতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) মো.

রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধ মোকাবিলা ছিল আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। জনমনে স্বস্তি ফেরাতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে এ ধরনের অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, আইনের ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে প্রকৃত অপরাধীরা যেন ছাড়া না পায়, এ বিষয়ে নজর রাখতে মাঠপর্যায়ের পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জামিনের বর্তমান চিত্র

ছিনতাই-ডাকাতির মামলার আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে আবার একই ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে—পুলিশের মাঠপর্যায় থেকে দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের অভিযোগ আসছিল। পরিস্থিতি বুঝতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বিভিন্ন ইউনিটকে মামলা ও গ্রেপ্তারের পাশাপাশি এ ধরনের আসামিদের জামিনের হিসাব তৈরি করতে বলা হয়। সেখান থেকে জামিনের একটি চিত্র পাওয়া গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত রাজধানীতে ৩২০টি মামলায় ৮৫২ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ১৪২ জন জামিন পেয়ে গেছেন। দুজনকে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

দণ্ডবিধি অনুযায়ী, দস্যুতার ক্ষেত্রে অপরাধীর সংখ্যা এক থেকে চারজন হয়ে থাকে। আর চারজনের বেশি ব্যক্তি দস্যুতায় জড়ালে তা ডাকাতি হিসেবে গণ্য হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, ছিনতাই মামলাসহ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলাকারী আসামিদের জামিনে মুক্ত হওয়া নিয়ে অসন্তোষের কথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সরকারকে জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকৃত অপরাধীরা যাতে ছাড়া না পায়, সেই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ কারাগারে থাকায় এ ধরনের অপরাধ কমেছে। তিনি বলেন, ‘মামলার দুর্বলতার কারণে কিছু আসামির জামিন হতে পারে। তবে প্রসিকিউশন থেকে আমরা এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স (শূন্য সহনশীলতা) দেখাচ্ছি। এরপর অস্বাভাবিকভাবে কারও জামিন হলে সেই বিষয় খতিয়ে দেখা উচিত।’

জামিনে মুক্তদের ওপর নজরদারি

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ছিনতাই-ডাকাতির মামলার আসামিরা জামিনে বেরিয়ে নতুনভাবে কোনো অপরাধে জড়াচ্ছে কি না, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সেদিকে নজর রাখতে মাঠপর্যায়ের পুলিশকে বলা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র বলছে, নজরদারির ক্ষেত্রে পুলিশের তথ্যভান্ডার থেকে ছিনতাইকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলোকে কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। এ ধরনের পেশাদার অপরাধীদের যারা জামিনে বের হচ্ছে, তাদের অন্য মামলায় ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখাতে বলা হচ্ছে। আলোচিত অপরাধীরা জামিন পেলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) যেন জানানো হয়, সে বিষয়েও আলাপ-আলোচনা চলছে।

গত ১৩ জানুয়ারি কলাবাগান থানার ডাকাতির একটি মামলায় গ্রেপ্তার হন সোহেল রানা ওরফে স্পিকার সোহেল (৩৩)। এই মামলায় জামিন পেলে ১৬ জানুয়ারি একই থানার আরেকটি মামলায় তাঁকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়।

একইভাবে ২৭ জানুয়ারি পল্লবী থানার একটি ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হন মো. মলিন খান (২৪)। ৩ মার্চ এই মামলায় তাঁর জামিন হলে ৯ মার্চ আরেকটি মামলায় তাঁকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়।

ডিএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অভ্যাসগত ও দাগি অপরাধীদের জামিনে বের হয়ে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। এ জন্য এ ধরনের অপরাধীদের যারা কারাগার থেকে বের হয়েছে, তাদের গতিবিধির ওপর পুলিশের নজরদারি রয়েছে।

প্রয়োজন কঠোর তদারকি

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আদালত অপরাধের মাত্রা বা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যে কাউকে জামিন দিতে পারেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মামলার তদারকিতে উদাসীনতা প্রকৃত অপরাধীর জামিন পাওয়ার পথ তৈরি করে। পেশাদার অপরাধীরা জামিনে বেরিয়ে গেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের আগে জামিনের নেপথ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘জামিন বাণিজ্য’ থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্বল ধারায় মামলা এবং অপরাধের বিবরণকে হালকাভাবে উপস্থাপন করে প্রকৃত অপরাধীদের জামিন করানো হয়। সুতরাং এর পেছনে কারও গাফিলতি বা অসৎ উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটি গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ নত ই ড ক ত র ম ধরন র অপর ধ ড ক ত র ঘটন প রথম আল ক ত অপর ধ র ম ঠপর য য় অপর ধ দ র এ ধরন র নজরদ র অন য য় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন মাদক এমডিএমবি জব্দ, চক্রের হোতাসহ গ্রেপ্তার ৪

দেশে প্রথমবারের মতো নতুন ধরনের মাদক এমডিএমবির চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। ভেপ বা ই-সিগারেটের মধ্যে গোপনে এই মাদক সরবারহ করা হতো।মালয়েশিয়া থেকে সংগ্রহ করা এই মাদকের হোতাসহ চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত খন্দকার তৌকিরুল কবির তামিম (২৬), মেহেদী হাসান রাকিব (২৬), বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেলস ও মার্কেটিং কর্মকর্তা মাসুম মাসফিকুর রহমান ওরফে সাহস এবং সম্প্রতি ভারতে পড়ালেখা করে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করা আশরাফুল ইসলাম।

আরো পড়ুন:

টেকনাফে বিজিবির অভিযানে ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার

উখিয়ায় ৩ লাখ ৬০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার

তাদের কাছে পাওয়া গেছে, ৩৪০ মিলিলিটার এমডিএমবি, গাঁজার চকলেট, ভেপ ডিভাইস, ই-লিকুইড ও এমডিএমবি বিক্রির জন্য প্রস্তুত খালি ক্যানিস্টার।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিএনসির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসির মহাপরিচালক হাসান মারুফ বলেন, “সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে তরুণ সমাজের মধ্যে ই-সিগারেট ও ভেপের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবের (ভেপ) ভেতরে ইদানিং নতুন সাইকোঅ্যাকটিভ পদার্থসহ (এনপিএস) এমডিএমবির ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইএনসিবি বিশ্বব্যাপী একটি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও এমডিএমবির বিস্তার রোধে নজরদারিতে নামে ডিএনসি ঢাকা গোয়েন্দার একটি চৌকস দল। তাদের তৎপরতায় উন্মোচিত হয় ভয়ংকর মাদক এমডিএমবি-পিনাকা ছড়িয়ে পড়ার বাস্তব চিত্র।”

অনলাইন-ডার্ক ওয়েবে নজরদারি 
আইএনসিবির নির্দেশনার পর ডিএনসির অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ বদরুদ্দীনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ঢাকার গোয়েন্দা দল অফলাইন ও অনলাইন মার্কেটপ্লেস, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডার্ক ওয়েবে নজরদারি শুরু করে। এ সময় ভেপের মাধ্যমে গোপনে ছড়িয়ে পড়া নতুন ধরনের সিনথেটিক মাদক এমডিএমবির সন্ধান পাওয়া যায়।খুচরা বিক্রেতা হিসেবে তামিমকে চিহ্নিত করা হয় এবং সোর্স ব্যবহার করে তার কাছে স্যাম্পল অর্ডার করা হয়। অর্ডারকৃত মাদক ডেলিভারির মুহূর্তে ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে, ঢাকা মেট্রো উত্তর ও ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের একটি সমন্বিত দল ১০ ডিসেম্বর পল্লবীতে ২০ মিলি এমডিএমবিসহ প্রথম সরবরাহকারী তামিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও তার ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বিশ্লেষণ করে এই ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট মেহেদী হাসান রাকিবের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা নজরদারি ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে ১০ মিলি এমডিএমবিসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মালয়েশিয়া থেকে সংগ্রহ করা হত এমডিএমবি
রাকিবের জবানবন্দি ও ডিভাইস বিশ্লেষণে উদঘাটিত হয় দেশের অভ্যন্তরে থাকা একটি এমডিএমবি–সাপ্লাই নেটওয়ার্ক। সেই সঙ্গে শনাক্ত করা হয় দেশে এমডিএমবি আনা দুই হোতার নাম- আশরাফ ও সাহস।

পরবর্তীতে সমন্বিত অভিযানে চক্রের দুই প্রধানকে গ্রেপ্তার করে তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালালে উদ্ধার হয়-৩১০ মিলিলিটার এমডিএমবি-পিনাকা (৫টি কন্টেইনারে), সিবিডি ইনফিউজড গাঁজার চকলেট, এমডিএমবি গ্রহণে ব্যবহৃত ৫টি ভেপ ডিভাইস, ই-লিকুইড এবং খালি ক্যানিস্টার।

সেগুনবাগিচায় ডিএনসির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মিরপুর সেনপাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আশরাফকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সমাজের এলিট শ্রেণির মাঝে সে এই ধরনের মাদক সরবরাহ করত। সে মূলত ই-সিগারেট ও ভেপ ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে তার সহযোগী সাহসের সমন্বয়ে এমডিএমবির মার্কেট তৈরির প্রচেষ্টা করছিল। বিভিন্ন সময় মালয়েশিয়ায় যাতায়াত করায় সেখান থেকে সে এই মাদক সংগ্রহ করে দেশে সরবরাহ করত।

এমডিএমবির ক্ষতিকর দিক
এমডিএমবির কয়েক ফোটাই মানুষের স্নায়ুতন্ত্র বিপর্যস্ত করতে সক্ষম। তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় ভেপ ডিভাইসকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে এই মাদক দ্রুত নেশা ধরায়, হ্যালুসিনেশন, আক্রমণাত্মক আচরণ থেকে শুরু করে হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হওয়ার মতো মারাত্মক শারীরিক ঝুঁকি তৈরি করে। সাধারণ ফ্লেভারড লিকুইডের মতো দেখতে হওয়ায় এটি চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব। ফলে ব্যবহারকারীরা বুঝতেই পারে না যে তারা আসলে গ্রহণ করছে এক উচ্চমাত্রার প্রাণঘাতী মাদক, যা আন্তর্জাতিকভাবে নেক্সট জেনারেশন সিনথেটিক ড্রাগ হিসেবে শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রচলিত নিকোটিন সম্বলিত ভেপ লিকুইডের সঙ্গে শুধু ১-২ ফোটা এমডিএমবি যুক্ত করে এই মাদক সেবন করা হয়।

বিক্রয় কৌশল
চক্রটি অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুককে পুরোপুরি ‘অদৃশ্য বাজার’ হিসেবে ব্যবহার করত। ফেসবুকের ক্লোজড গ্রুপ, রিভিউ পেজ ও ভুয়া অ্যাকাউন্টে গোপন সংকেতভিত্তিক পোস্ট দিত তারা—যেখানে সাধারণ ফ্লেভার, গেমিং টুল বা ‘পোর্টেবল ডিভাইস’–এর আড়ালে বোঝানো হতো আসল পণ্য। আগ্রহী ক্রেতা ইনবক্সে মেসেজ পাঠালে তাকে নিয়ে যাওয়া হতো হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে, যেখানে কোডওয়ার্ডে দাম ঠিক করা হতো। অবস্থান শেয়ার, লাইভ ট্র্যাকিং এবং নির্দিষ্ট ইমোজি ব্যবহার করে সরবরাহ নিশ্চিত করা হতো—যা দেখে সাধারণ ব্যবহারকারী বুঝতেই পারত না যে এটি আসলে এমডিএমবির গোপন ডিজিটাল বিক্রয় নেটওয়ার্ক।

ঢাকা/এমআর/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনিয়ম রোধে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন
  • নতুন মাদক এমডিএমবি জব্দ, চক্রের হোতাসহ গ্রেপ্তার ৪
  • নির্বাচন ভবনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা, কড়া নজরদারি