জুলাই হত্যাকাণ্ড কি জেনোসাইডের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে
Published: 2nd, April 2025 GMT
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট সময়কালে সংঘটিত সহিংস হত্যাযজ্ঞ আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সরকার-নিয়ন্ত্রিত বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক গোষ্ঠী যেভাবে নিরস্ত্র শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়েছে, তা গোটা পৃথিবীর ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনাকে ‘ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন’ বলে চিহ্নিত করলেও কোনো কোনো দেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে একে সরাসরি ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করছে। এ নিবন্ধে আমরা আধুনিক গবেষকদের সংজ্ঞা ও তত্ত্বের আলোকে দেখব আমরা এ ঘটনাকে পরিকল্পিত গণহত্যা বলতে পারি কি না?
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের একটি রায় সামনে আসার পর শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা মনে করেছিলেন, এই কোটা স্বচ্ছ নিয়োগব্যবস্থা ও মেধার মূল্যায়নে অন্তরায় সৃষ্টি করবে এবং দলীয় সুবিধা পাওয়ার পথ খুলে দেবে। রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ১৫ জুলাইয়ের পর রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও শাসক দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডাররা একযোগে এই আন্দোলনকে দমনে নামে।
দ্রুতই সরকারের পদক্ষেপ রণাঙ্গনের রূপরেখা নেয়। শুরু হয় ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করা, কারফিউ জারি করা আর ছাত্রদের ওপর গণহারে গুলিবর্ষণ। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, এই কয়েক সপ্তাহে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, যাঁদের বড় অংশই তরুণ শিক্ষার্থী। এ সময় অনেকেই গুম বা নিখোঁজ হয়ে যান। ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন, কিন্তু তত দিনে হাজারো পরিবার তাদের স্বজন হারায়। ইতিহাসের পাতায় এ সময়কে কেউ কেউ তুলনা করছেন বর্বরতম রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন হিসেবে।
‘Genocide’ শব্দটির উদ্ভাবক রাফায়েল লেমকিন ১৯৪৪ সালে এ ধারণাটি এনেছিলেন মূলত নাৎসি জার্মানির অত্যাচার বোঝাতে। তাঁর মতে, গণহত্যা মানে কেবল গুলি করে বা হত্যা করে মানুষ শেষ করা নয়; বরং একটি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পিত অভিযান। লেমকিনের সংজ্ঞা ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের সনদে গৃহীত হয়। তবে জাতিসংঘের গৃহীত সংজ্ঞায়নে জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর ওপর নিধনকে গণহত্যা বলা হলেও রাজনৈতিক বা সামাজিক গোষ্ঠীর ওপর পরিকল্পিত নিপীড়নকে যুক্ত করা হয়নি। তবে লেমকিন নিজে দেখিয়ে গেছেন, হোক রাজনৈতিক আর জাতিগত গোষ্ঠী, যেকোনো সিস্টেমেটিক গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডই গণহত্যা।
২০২৪ সালে বাংলাদেশের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এখানে হত্যার মূল টার্গেট ছিল সরকারবিরোধী ছাত্রসমাজ ও তাদের সমর্থকগোষ্ঠী। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে স্পষ্ট নির্দেশে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী ও দলীয় ক্যাডাররা একত্রে নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ করে। এটি লেমকিনের সেই মূল স্বর ‘একটি সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করা’, এর সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়।
গণহত্যা বিশ্লেষণে বহুল আলোচিত নাম সমাজতত্ত্ববিদ ইরভিং লুই হরোউইটজ মনে করেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের আমলাতান্ত্রিক কাঠামো ব্যবহার করে যদি কোনো গোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়, তা স্পষ্টতই গণহত্যা। এই সংজ্ঞার আলোকে আমরা দেখতে পারি, চব্বিশের জুলাই–আগস্টে বাংলাদেশের রাষ্ট্র-প্রণোদিত পুলিশ, র্যাব ও দলীয় ক্যাডারদের সমন্বিত অভিযানে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে যেভাবে টার্গেট করে, পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়েছে, তা–ও নিঃসন্দেহে গণহত্যা।
অন্যদিকে ডাচ আইনবিশারদ পিয়েতার এন ড্রস্ট বলেছেন, কোনো গোষ্ঠীর সদস্য হওয়াই যদি মৃত্যুর একমাত্র কারণ হয়, তবে সেটি অবশ্যই গণহত্যা; চব্বিশে আমরা দেখেছি সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ নেওয়াটাই বাংলাদেশে অনেকের জন্য ‘অপরাধ’ হয়ে দাঁড়ায়। আবার প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ থমাস আর্ল পোর্টার দেখিয়েছেন, কোনো গোষ্ঠীর সামাজিক বন্ধন ভেঙে দেওয়ার সুপরিকল্পিত চেষ্টা গণহত্যার বড় লক্ষণ; জুলাই-আগস্টের ওই সময়ে শিক্ষার্থীদের ঐক্য ধ্বংসে রাষ্ট্র যে পরিমাণ সহিংস পদক্ষেপ নিয়েছে, তা পোর্টারের বিশ্লেষণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
গবেষক নেহেমিয়াহ রবিনসন, যিনি জাতিসংঘের ‘Genocide Convention’ ব্যাখ্যায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন, স্পষ্ট করে বলেন, যদি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষকে বৈষম্যমূলকভাবে হত্যা করা হয়, সেটি গণহত্যা। আমরা দেখেছি, গত বছর ছাত্র পরিচয়ই ছিল প্রাণঘাতী শাস্তির প্রবল ভিত্তি।
আরেক ইতিহাসবিদ টনি বার্টা উল্লেখ করেছেন, রাষ্ট্র যখন ‘নিরাপত্তা’র নামে আসলে গোষ্ঠী ধ্বংসের কর্মসূচি গ্রহণ করে, তখন সেটি এক গণহত্যামূলক সমাজের ইঙ্গিত বহন করে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে যে নির্বিচার কায়দায় ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে গণহত্যামূলক।
গণহত্যা গবেষক হেনরি হুটেনবাখ বলেন, কোনো পরিকল্পিত ব্যবস্থা যদি কোনো গোষ্ঠীর অস্তিত্ব বিলোপের ঝুঁকি তৈরি করে, সেটিকেও গণহত্যা বলতে হবে। বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টের সহিংসতায় আন্দোলনকারী গোষ্ঠীকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, যা গণহত্যা। রাজনীতিবিজ্ঞানী বারবারা হার্ফ ‘Genocide and Politicide’-এ দেখিয়েছেন, রাষ্ট্র যদি রাজনৈতিক গোষ্ঠীকেও নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে মানুষকে হত্যা করে, তবে তাকেও গণহত্যাই বলতে হবে।
দার্শনিক স্টিভেন টি ক্যাট্জ বলছেন, পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংসের স্পষ্ট অভিপ্রায় থাকলেই সেটি গণহত্যা; বাংলাদেশের সরকার সেই সময়ে একধরনের ‘সবাইকে শেষ করে দাও’ মনোভাব নিয়ে আন্দোলনকারীদের গোষ্ঠীকে টার্গেট করেছে। আমরা দেখেছি, জুলাইতে বিরোধী দলের সমর্থক, ছাত্র ও তরুণদের চিহ্নিত করে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ সূচিত হয়, পুলিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোনে দেখিয়ে বলে, ‘একটা মারলে আরেকটা আসে, এটাই সমস্যা’; অর্থাৎ মেরে ফেলা সমস্যা নয়, আন্দোলনকারীদের সংখ্যা বেশি হওয়াটাই সমস্যা। অর্থাৎ আন্দোলনকারী সংখ্যায় কম হলে তাঁদের সবাইকে শেষ করে ফেলতে পারত। অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য ছিল টোটাল এলিমিনেট করা। ফলে নিঃসন্দেহে এটা গণহত্যা।
মনোবিজ্ঞানী ইসরায়েল ডব্লিউ চার্নি বলেছেন, নিরুপায় নিরস্ত্র গোষ্ঠীর ওপর যখন সংঘবদ্ধভাবে গণহারে হত্যা চালানো হয়, সেটিকে নিঃসন্দেহে গণহত্যা বলে চিহ্নিত করে। চব্বিশে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ছিলেন নিরস্ত্র, আর রাষ্ট্রের হাতে ছিল ভারী অস্ত্র ও সাংগঠনিক শক্তি; এর চেয়ে অসম সংগ্রাম আর কী হতে পারে?
জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। রাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে কাঠামোগত উপায়ে বিরোধী ছাত্র ও তরুণদের নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছে। এ ঘটনাকে যদি ‘অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ’ বা ‘অভিযান’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তবে ক্ষমতাসীনদের এ ধরনের অপরাধ ছাড় পেয়ে যাবে। এটি কেবল ‘সহিংস দমন’ নয় কোনোভাবেই, এটার পেছনের বল প্রয়োগটা দেখলেই শুধু চলবে না, দেখতে হবে পেছনের ইনটেনশন ও পরিকল্পনা।এই গবেষকদের সংজ্ঞা ও বিশ্লেষণ পাশাপাশি রেখে যদি আমরা বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ঘটনাবলিকে দেখি, তবে এটি সুস্পষ্ট হয় যে রাষ্ট্র সযত্ন পরিকল্পনায় একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠী, অর্থাৎ ‘বিরোধী দল’ ও ‘আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজ’কে নিশ্চিহ্ন করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। রাষ্ট্রশক্তি ও ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন শাখার একীভূত তৎপরতা, গুম ও নির্বিচার হত্যা, সর্বোপরি ভয়াবহ দমন-পীড়ন সব মিলিয়ে এটিকে গণহত্যার একটা টেক্সট বুক এক্সাম্পলে পরিণত করেছে।
গবেষক গ্রেগরি স্ট্যান্টন গণহত্যার আটটি ধাপ চিহ্নিত করেছেন: ১.
১. ক্ল্যাসিফিকেশন বা বিভাজন: সরকার ও ক্ষমতাসীনদের ভাষায়, ‘সরকারপন্থী বনাম সরকারবিরোধী’, ‘দেশপ্রেমিক বনাম রাজাকার’ ইত্যাদি তকমা দেওয়া হয়েছে। সরকারের বিরোধিতা করলেই পূর্ণাঙ্গ শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
২. সিম্বলাইজেশন (প্রতীকায়ন): সরকারের বিরোধিতা করা ছাত্রদের ‘উগ্র জঙ্গি’, ‘শিবির’, ‘রাজাকার-পরিবর্তী প্রজন্ম’ ইত্যাদি বলে ডাকানো, তাঁদের ওপর বিশেষ ট্যাগ প্রয়োগ করা হয়েছে। সরকারপন্থীরা কালো রংকে বেছে নিয়ে আন্দোলনকারীদের লাল রংকে আক্রমণ করেছে।
৩. ডিহিউম্যানাইজেশন (অমানবিকীকরণ): শিক্ষার্থীদের ‘নাশকতাকারী কীট’, ‘রাষ্ট্রের দুশমন’ বলে দেখানো; যাতে হত্যা করা ন্যায়সংগত ঠেকে।
৪. অর্গানাইজেশন (সংগঠিত করা): পুলিশ, র্যাব, বিজিবির পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগকে মাঠে নামিয়ে পরিকল্পিত হামলা; সারা দেশে সামরিক ধাঁচের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।
৫. পোলারাইজেশন (মেরুকরণ): ‘তোমরা হয় আমাদের পক্ষে, নয় শত্রু’ ধরনের বক্তৃতা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষ, গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনকারীদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
৬. প্রিপারেশন (প্রস্তুতি): ইন্টারনেট শাটডাউন, অবাধ গ্রেপ্তার, সাদা পোশাকের গোয়েন্দা তৎপরতা ইত্যাদি; যেন একযোগে হামলা চালানো যায়।
৭. এক্সট্রিমিনেশন (বিনাশ): নির্বিচার গুলিবর্ষণ, গুম, যথেচ্ছ হত্যা—জাতিসংঘের তথ্যমতে হাজারের বেশি লোকের জীবনহানি; এটি ‘গণহারে ফিনিশিং’ পর্যায়।
৮. ডিনায়াল (অস্বীকার): তৎকালীন সরকারের বক্তৃতায় প্রথমে মৃত্যু সংখ্যা কমিয়ে বলা, শত্রুপক্ষের ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দেওয়া, ‘কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে চিত্রিত করা। এখন পর্যন্ত সরকারপন্থী অ্যাকটিভিস্টদের অনলাইনে সক্রিয়ভাবে হত্যাকাণ্ডকে অস্বীকার করে যাওয়া, একে ষড়যন্ত্র বলা, সবই ডিনায়ালের অংশ।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো—অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জুলাই-আগস্টের ঘটনাকে ব্যাপক ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ ও ‘mass atrocity’ বলে চিহ্নিত করেছে। জাতিসংঘের এক প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সরকারি বাহিনী ও দলীয় অনুগতরা সুসমন্বিতভাবে নির্দিষ্ট নির্দেশে অত্যধিক বলপ্রয়োগ করেছে।’ অনেক শিশু ও কিশোর মারা গেছে, বহু তরুণ গুম হয়েছেন। এটা সাধারণ নির্যাতন নয়; বরং পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞেরই প্রমাণ।
আমরা আগেই দেখেছি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে নির্মিত আইনি সংজ্ঞায় রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে গণহত্যার আওতায় আনা হয়নি। সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বড় শক্তিগুলো তখন নিজেদের রাজনৈতিক নিপীড়নকে আইনি বিচারের বাইরে রাখতে সচেষ্ট ছিল। ফলে আধুনিক সময়েও অনেক রাষ্ট্র ‘রাজনৈতিক গণহত্যা’র বিষয়টি এড়িয়ে যায়। কিন্তু ওপরে আমরা বিশ্বব্যাপী গবেষকদের আধুনিক আলোচনা দেখলাম বারবারা হার্ফ, স্টিভেন টি ক্যাট্জ, নেহেমিয়াহ রবিনসন, ইসরায়েল ডব্লিউ চার্নি প্রমুখ গবেষক দেখিয়েছেন, শাসকগোষ্ঠীর হাতে এভাবে পরিকল্পিতভাবে কোনো গোষ্ঠী নিধন হলে, সেটিকে গণহত্যা বলা উচিত।
জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। রাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে কাঠামোগত উপায়ে বিরোধী ছাত্র ও তরুণদের নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছে। এ ঘটনাকে যদি ‘অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ’ বা ‘অভিযান’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তবে ক্ষমতাসীনদের এ ধরনের অপরাধ ছাড় পেয়ে যাবে। এটি কেবল ‘সহিংস দমন’ নয় কোনোভাবেই, এটার পেছনের বল প্রয়োগটা দেখলেই শুধু চলবে না, দেখতে হবে পেছনের ইনটেনশন ও পরিকল্পনা।
আমি মনে করি, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট সময়ে সংঘটিত সহিংস নিধনযজ্ঞকে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত গণহত্যা বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত। সরকার ও ক্ষমতাসীন দল সুপরিকল্পিতভাবে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আধুনিক গবেষকদের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, জুলাই–আগস্টে তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশে সংঘটিত ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো নিঃসন্দেহে ‘গণহত্যা’র বৈশিষ্ট্য পূরণ করে। পাশাপাশি গ্রেগরি স্ট্যান্টনের ‘Eight Stages of Genocide’ মডেল অনুযায়ীও পুরো ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কার হয়ে ওঠে, এটি কোনো অনিয়ন্ত্রিত সহিংসতা নয় বরং পরিকল্পিত নির্মূলকরণ।
একাডেমিক ও নৈতিক যুক্তিতে এ ঘটনা যে গণহত্যা, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। ভবিষ্যতে এ ধরনের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে, ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং ইতিহাসের কাছে সত্যটা তুলে ধরতে একে গণহত্যা হিসেবেই পরিচিত করা উচিত। রাষ্ট্র পরিচালিত নিষ্ঠুর বলপ্রয়োগ যে কতটা ভয়ংকর রূপ নিতে পারে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ঘটনাই তার এক গভীর শিক্ষা। এই শিক্ষা থেকে বিশ্বজনমতের উচিত ব্যাপক গণহারে হত্যার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া—তা যে পরিচয়ের ওপরেই করা হোক না কেন।
আরিফ রহমান লেখক ও গবেষক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ হ ন কর র জ ল ই আগস ট র ও ক ষমত স ন গ ষ ঠ র ওপর ২০২৪ স ল র চ হ ন ত কর গণহত য র র জন ত ক ন রস ত র সরক র র এ ঘটন ক ত কর ছ র ঘটন ন ঘটন ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের রোডম্যাপে কবে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে মাস দেড়েক আগে বলা হয়েছিল, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। এ দেশে গত ১৫ বছরে সতি্যকার অর্থে কোনো নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন না থাকার কারণেই স্বৈরাচারী শাসন চেপে বসতে পেরেছিল।
নাগরিক কোয়ালিশনও অনেক আগেই নির্বাচনের জন্য ‘ফেব্রুয়ারি রোডম্যাপ’ দিয়েছিল। কিন্তু সরকার থেকে এখনো কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। এদিকে জোর গুজব উঠেছে, আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু তারিখ বললেই কি নির্বাচন হয়?
২.
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা অনুযায়ী আমরা কি আদৌ কিছু শুরু করতে পেরেছি, নাকি আবারও সেই পুরোনো অভ্যাস, অর্থাৎ সময়ক্ষেপণ, সন্দেহ আর পরস্পরবিরোধী বক্তব্য অব্যাহত রয়েছে? বাস্তবতা হচ্ছে, গত ১৩ জুন লন্ডনে তারেক রহমান ও সরকারপ্রধানের বৈঠক হলেও এরপর আর কোনো গঠনমূলক অগ্রগতি নেই।
অনেকেই ভাবছেন, নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট সময় হাতে আছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন মানে হাতে তেমন সময় নেই। বাস্তবতা হলো, সরকার যদি সত্যিই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে চায়, তাহলে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বড় সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করতে হবে। আর তা করতে হলে এখন থেকেই খুব জোরেশোরে কাজ শুরু করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানেই নিয়ন্ত্রিত প্রহসন। এ জন্য আমাদের হাতে যেসব কাজ রয়েছে:
ক. ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কারের জন্য জুলাই চার্টার।
খ. নির্বাচন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য ন্যূনতম সংস্কারসহ নতুন আইন প্রণয়ন।
গ. ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং সীমানা পুনর্নির্ধারণ।
ঘ. নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ে প্রস্তুতি। এর মধ্যে আছে অমোচনীয় কালিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের বিশাল ক্রয়াদেশ এবং লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা।
এই কাজগুলো সময়মতো না হলে তারিখ শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায় লেখা থাকবে; নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে; গণতন্ত্র ফিরবে না। এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে তা দেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।
৩.
এ স্থিতাবস্থার প্রথম কারণ ঐকমত্যের ঘাটতি। অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত—সব পক্ষই পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে সন্দেহের চোখে। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে গত বছরের জুলাইয়ে আন্দোলন করলেও এখন তাদের সবার পথ আলাদা। সংস্কার নিয়ে সবার আলাদা মত।
নাগরিক কোয়ালিশনের মূল যেসব প্রস্তাব ছিল, তার মধ্যে উচ্চকক্ষে আনুপাতিক বণ্টন নিয়ে বিএনপিসহ দু–একটি দল ছাড়া আর সবার মধ্যে স্পষ্ট মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একেকজন একেক রকম মত দিচ্ছে।
অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে যদিও সবাই একমত হয়েছে, এরপরও নারী আসনে সরাসরি ভোট নিয়ে এখনো কোনো পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নেই। নিরপেক্ষ নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে এখনো আলোচনা এগোচ্ছে না।
নাগরিক কোয়ালিশনের ৭ দফা সংস্কার প্রস্তাব ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জন্যই প্রয়োজনীয় ছিল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আবার তা বিবেচনা করার অনুরোধ রইল।
৪.
এদিকে কোনো রাজনৈতিক দলই নিজেদের দলীয় বা অভ্যন্তরীণ সংস্কারের কাজ শুরু করেনি। এত সব ডামাডোলে তা হারিয়েই যাচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনীতি করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে, নতুন রাজনীতির নিজ নিজ দলকে উপযোগী করে পুনর্বিন্যস্ত করতে হবে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ডিসেম্বরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বললেও প্রশাসন এখনো ‘ধীরে চলো’ নীতিতে আছে। নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি ও তালিকা হালনাগাদ খুব ধীরগতিতে চলছে।
এই অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেটে নির্বাচন কমিশন ২ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। এর মধ্যে শুধু নির্বাচন পরিচালনা করতেই ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে, যা ২০২৪ সালের নির্বাচনের খরচের প্রায় কাছাকাছি। বাজেট বরাদ্দ হলেও কাজে গতি নেই। এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে আস্থা পাচ্ছে না।
২০২৪ সালের নির্বাচনে পুলিশ, র্যাব, আনসার, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাড়ে ছয় লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আমাদের পুলিশ কি প্রস্তুত? গোপালগঞ্জের অবস্থা দেখে এ প্রশ্নের উত্তর মনে হয় সবাই জেনে গেছেন।
পত্রিকায় এসেছে, গাড়ির অভাবে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের প্যাট্রোলিং ব্যাহত হচ্ছে। এই গাড়িগুলো কবে কেনা হবে? ২০২৪ সালে নির্বাচনের জন্য শুধু পুলিশের জন্যই বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। এবার কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে, সেটা এখনো জানা যায়নি।
এবার নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি, রাতে পাহারা এবং বিস্ফোরণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা থাকতে হবে। ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি বুথে এই সিসিটিভি ক্যামেরার আয়োজন বিশাল কর্মযজ্ঞের ব্যাপার।
এ ছাড়া নির্বাচনের জন্য অমোচনীয় কালি থেকে শুরু করে বিশালসংখ্যক স্টেশনারি পণ্য প্রয়োজন হয়, টেন্ডারের মাধ্যমে কিনতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগে। কিন্তু এসবের জন্য এখনো কোনো টেন্ডারের প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না। এগুলো ছোটখাটো ব্যাপার হলেও অত্যাবশ্যকীয় এবং সময়সাপেক্ষ।
৫.
এদিকে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। তাঁদের বিবেচনায় রাখলে দেশের বাইরে প্রায় দুই কোটি ভোটার আছেন। নির্বাচনে কোন পদ্ধতিতে তাঁদের করা যুক্ত হবে কিংবা এত কম সময়ে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না, সেটা একটা বড় প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশে থাকা আমাদের দূতাবাসগুলোর আরও গতিশীলতা দরকার।
এদিকে সীমানা নির্ধারণ এখনো ঝুলে আছে। কোন এলাকা কোন আসনে পড়বে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ব্যাপারটি ঠিক না হলে প্রার্থীরা প্রস্তুতি নেবেন কীভাবে? সীমানা ঠিক না করে নির্বাচনের ঘোড়া ছুটিয়ে লাভ নেই।
প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ায় নির্বাচন মানে প্রায় বছরব্যাপী প্রস্তুতির একটি প্রক্রিয়া। এদিকে ঘোষিত সময় থেকে মাত্র সাত মাস আগে বাংলাদেশে এখনো আইনকানুন আর সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা চলছে।
তবে ব্যয়ের দিক থেকে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ করতে যাচ্ছি। ভারতের তুলনায় জনপ্রতি প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। কিন্তু এই খরচ জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারছে না।
৬.
আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে শুধু দেশের মানুষ নয়, আন্তর্জাতিক মহলও। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারত, চীন—সবাই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা চায়। কিন্তু স্থিতিশীলতা মানে শুধু একটি নিয়ম রক্ষার ভোট নয়। সংস্কার আর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে এ নির্বাচনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া কঠিন হবে। আমরা যদি নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান না করি, বাইরের চাপ আরও বাড়বে।
এদিকে মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সব শ্রেণি–পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। তারা ভেবেছিল, এবার কিছু বদলাবে। কিন্তু এখন দেখছে আবারও সময়ক্ষেপণ আর দোষারোপের রাজনীতি। তাদের যদি আবারও হতাশ করা হয়, তাহলে অনাস্থা আরও গভীর হবে। এটা শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নয়, দেশের ভবিষ্যতের জন্যও ভয়ংকর।
এদিকে অর্থনীতিও ঝুলে আছে; নেই বড় কোনো বিনিয়োগ। যে কোটামুক্ত সরকারি চাকরির জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে দৃশ্যমান কোনো কাজ চোখে পড়ছে না। ফলে বেকারত্ব বাড়ছেই।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কাঠামোগত সংস্কারের কোনো বরাদ্দ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে তবেই নতুন সরকার সংস্কারমুখী বাজেট নিতে পারবে। নতুন বিনিয়োগ আসা, আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) পরবর্তী কিস্তি পাওয়া—সবই এই সংস্কারের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু নির্বাচন দেরিতে হলে অর্থনীতিও সংকটে পড়বে।
৭.
সামনে কী হতে পারে? যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হয় এবং এ রকম অরাজকতা চলতেই থাকে, তাহলে সরকার যেকোনো সময় নির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারে। এতে নতুন করে সংকট তৈরি হবে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় ভয়—ক্ষমতার নতুন পুনর্বিন্যাস হবে; গণতন্ত্র ফিরবে না। বিশ্বাসের সংকট আরও প্রকট হবে। সে রকম কিছু হলে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়দায়িত্ব নিতে হবে।
বিগত স্বৈরাচারী সরকার এ দেশের মানুষের মনমানসিকতা অনেকখানি বদলে ফেলেছে, যার অনেক কিছুই আমরা শুনতে পাচ্ছি। আমাদের দরকার মানুষের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, যা হতে হবে সুষ্ঠু ও অবাধ। আর তার জন্য শুধু সরকার নয়, সব দলকেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
এ রকম অবস্থায় বড় দলগুলোর জন্য একটি সর্বসম্মত ‘রাজনৈতিক নৈতিকতা সনদ’ প্রণয়ন করতে পারে নির্বাচন কমিশন বা নাগরিক সমাজ। এর ভিত্তিতে দলগুলোই ‘কন্ডাক্ট সেল’ করে সরকারকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিতে পারে।
৮.
এখনো কিছু সময় হাতে আছে। আমরা যদি টাইমলাইন নির্ধারণ করে এবং সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করে কাজ শুরু করতে না পারি, তাহলে সরকার বদলাবে ঠিকই, কিন্তু পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত পাল্টাবে না।
সেপ্টেম্বরের মধ্যেই যদি রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়, সংবিধান সংস্কারের খসড়া তৈরি হয়, ভোটার তালিকা আর সীমানা নির্ধারণ শেষ হয় এবং সব দল যথাসাধ্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করে, তাহলেই শুধু এই নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হবে।
বিগত স্বৈরাচারী রেজিম এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তাই একটি নির্বাচনের জন্য আমাদের সবারই দায়দায়িত্ব নিতে হবে। আর যদি তা না পারি, ইতিহাস আমাদের কখনো ক্ষমা করবে না।
সুবাইল বিন আলম সদস্য, নাগরিক কোয়ালিশন
[email protected]
মতামত লেখকের নিজস্ব