বনশ্রীতে নারী সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩
Published: 3rd, April 2025 GMT
রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় দৈনিক নিউ এজের সাংবাদিক রাফিয়া তামান্নার ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সোয়েব রহমান জিশানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গতকাল বুধবার গভীর রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়ার অপর দুজন হলেন- রাইসুল ইসলাম (২১) ও কাউসার হোসেন (২১)।
র্যাব ৩-এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সনদ বড়ুয়া এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, রাজধানীর রামপুরা এলাকায় যৌন হয়রানি সংক্রান্ত একটি ঘটনা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ব্যাপকভাবে চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি করে। বিষয়টি র্যাব-৩ এর নজরে এলে তাৎক্ষণিকভাবে ছায়া তদন্ত শুরু হয়। এ ঘটনায় রামপুরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা হয়। মামলায় উল্লেখিত এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাতপরিচয় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এর একাধিক গোয়েন্দা এবং অপারেশনাল টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে। গোয়েন্দা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মামলার প্রধান অভিযুক্ত সোয়েব রহমান জিশানকে রাজধানীর রামপুরা থানাধীন মেরাদিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রমনার বেইলি রোড এলাকা থেকে রাইসুল ইসলাম ও শ্যামপুর থানাধীন গেন্ডারিয়া এলাকা থেকে কাউসার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়াদের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাংবাদিক রাফিয়া তামান্নার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় রাফিয়া শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হন। এ ঘটনায় রামপুরা থানায় জিসান নামে একজনকে আসামি করে মামলা করেন রাফিয়া। এতে অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
রামপুরা থানার ওসি আতাউর রহমান আকন্দ সমকালকে বলেন, রাফিয়া তাঁর ভাই ও আরও একজনকে নিয়ে একটি দোকানে জুস পান করতে যান। এ সময় ওই দোকানে তিন তরুণ উপস্থিত হন। রাফিয়ার দিকে তাকানো নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে রাফিয়া তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘নিজের বাসার সামনে নিরাপদ না? আমাকে টিজ করার সময় আমার ভাই ছেলেগুলোর সামনে এসে দাঁড়ায়। উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় আমার ভাইকে মারা শুরু করল। ভাইকে উঠাতে গেলে সবুজ জামা পরিহিত ছেলেটা আমার চুলে হ্যাঁচকা টান দেয়। কালো গেঞ্জি পরিহিত ছেলেটা লাথি মারে। সম্ভবত এলাকার মাস্তানদের পালিত মাস্তান এরা।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক পদায়নে নীতিমালা লঙ্ঘন কোথাও বাড়তি, কোথাও ঘাটতি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক পদায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৪০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে শিক্ষক পদায়নের কথা থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে তা মানা হয়নি। কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক কম, কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক বেশি। শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। এমন চিত্র বাঞ্ছারামপুর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যালয়ভিত্তিক চাহিদা নির্ণয়, সরেজমিন পরিদর্শন এবং স্বচ্ছ তালিকা প্রণয়ন করার কথা থাকলেও কোনো নিয়ম মানা হয়নি বাঞ্ছারামপুরে প্রাথমিকের শিক্ষক পদায়নে। নিজস্ব পছন্দ, ব্যক্তিগত লাভ ও রাজনৈতিক চাপের কাছে জলাঞ্জলি দিয়েছেন নীতিমালা। অনেক নারী শিক্ষককে ২৩ কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে, যা যাতায়াত ও নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পুরুষ শিক্ষকের ক্ষেত্রে নীতিমালায় দূরবর্তী এলাকায় পদায়নের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে দেখা গেছে, কয়েকজন শিক্ষককে নিজের এলাকায় পদায়ন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৪৫ জন সহকারী শিক্ষকের পদের বিপরীতে ফাঁকা ছিল ১১২টি। এসব শূন্য পদ পূরণ করতে গত ১৩ মার্চ নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বিভিন্ন বিদ্যালয় পদায়ন করা হয়। একাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৯টি বিদ্যালয়ে। একাধিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট না থাকার পরও নতুন শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। ২৮টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ ফাঁকা থাকলেও কোনো নতুন শিক্ষক পদায়ন করা হয়নি। নতুন নিয়োগ পাওয়া ৫২ শিক্ষকের মধ্যে ১৯ জনকে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলি হওয়াদের স্থলে পদায়ন করা হয়েছে। ৯টি বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে ২৭ জনকে।
তাতুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৬৬ জন। প্রধান শিক্ষকসহ সাতটি শিক্ষকের পদ রয়েছে। চারটি শূন্য পদের বিপরীতে চারজনকে পদায়ন করা হয়েছে। এখানে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা অতিরিক্ত। উলুকান্দি উত্তর সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯২ জন। এখানে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকের সাতটি পদে কর্মরত ছিলেন পাঁচজন। শিক্ষার্থী অনুপাতে পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকার পরও নতুন একজনকে পদায়ন করা হয়েছে।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয় দুটি। এর মধ্যে কালাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রাথমিকে ২৪৯ ও মাধ্যমিকে ১১৭ জন। এখানে প্রধান শিক্ষকসহ কর্মরত ছিলেন ১০ জন। নতুন করে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে। অথচ আগামী বছর থেকে এই বিদ্যালয়ের নিম্ন মাধ্যমিকের কার্যক্রম থাকবে না। চরশিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিকে ৫১০ জন ও নিম্ন মাধ্যমিকে ২৯৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ ১৩টি শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষকের পাঁচটি শূন্য পদে পাঁচজনকে পদায়ন করা হয়েছে। আগামী বছর থেকে এই বিদ্যালয়ের নিম্ন মাধ্যমিকের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যাবে।
ডোমরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬৪ জন। প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত ছিলেন ছয়জন। শিক্ষক সংকট না থাকার পরও আরও একজনকে পদায়ন করা হয়েছে। চরমানিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০৩ জন। এখানে কর্মরত ছিলেন পাঁচ শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচটি পদ শূন্য থাকলেও নতুন করে মাত্র একজন সহকারী শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
দরিয়া দৌলত দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮৮। প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত ছিলেন আটজন। শিক্ষক সংকট না থাকার পরও নতুন করে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে। শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩২। এখানে কর্মরত ছিলেন চারজন। প্রধান শিক্ষকসহ দুটি পদ শূন্য। এখানে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে, তাও আবার প্রতিস্থাপনকৃত বদলি হয়ে থাকা শিক্ষককে ছাড় করার জন্য। বর্তমানে দুটি পদ শূন্য।
দড়িকান্দি পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৩৭। কর্মরত রয়েছেন ছয়জন শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকসহ দুটি পদ শূন্য থাকলেও একজনকেও পদায়ন করা হয়নি। শেখেরকান্দি সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮০। প্রধান শিক্ষকসহ কর্মরত রয়েছেন ছয়জন। একটি পদ শূন্য থাকলেও কাউকে পদায়ন করা হয়নি। পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০৮। প্রধান শিক্ষকসহ কর্মরত ছিলেন তিনজন। তিনটি শূন্য পদের বিপরীতে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে।
উপজেলায় মেধা তালিকা প্রথম স্থান অধিকার করা জুয়েল রানাকে পদায়ন করা হয়েছে নিজ গ্রাম মরিচাকান্দি থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পাহারিয়াকান্দি গ্রামের জান্নাতুল ফেরদৌসকে পদায়ন করা হয়েছে নিজ গ্রাম থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরের তাতুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয় না করে ইচ্ছেমতো পদায়ন করায় শিক্ষকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সদ্য নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। যাতায়াতে অনেক কষ্ট হয়। কাছাকাছি পদায়ন করলে অনেক ভালো হতো, কারণ আসা-যাওয়ায় শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
সহকারী শিক্ষক জুয়েল মিয়া জানান, তিনি মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন। ভেবেছিলেন কাছাকাছি কোনো বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হবে, কিন্তু দেওয়া হয়েছে গ্রাম থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে।
নগরীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন পদায়ন হওয়া শিক্ষক শাহ আলী বলেন, ‘নতুন মাত্র চাকরি পেয়েছি, তারপরও আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষক হিসেবে। আমি কাজের কিছুই বুঝি না। বিদ্যালয়ে মাত্র তিনজন শিক্ষক। অফিসের কাজ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে গেলে পাঠদান ব্যাহত হয়।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ জানান, তারা তালিকা পাঠিয়েছিলেন, সেই হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। শিক্ষক সংকট রয়েছে এমন বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদায়ন না করে থাকলে তাঁর কিছু বলার নেই, কারণ পদায়ন করেছে ডিপিও অফিস।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, নীতিমালা অনুসরণ করেই শিক্ষক পদায়ন করা হয়েছে। শিক্ষক সংকটের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনে অন্য জায়গা থেকে শিক্ষক দিয়ে তা পূরণ করা হবে।