ইউক্রেন চুক্তি লঙ্ঘন করে জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে: অভিযোগ রাশিয়ার
Published: 5th, April 2025 GMT
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আজ শনিবার দাবি করেছে, তাদের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। আজ সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের ১৪টি নিশানায় হামলা চালানো হয়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় উভয় দেশ পরস্পরের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা না চালাতে সম্মত হয়েছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এসব দাবি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘ড্রোন ও কামানের গোলা ব্যবহার করে রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর একতরফাভাবে একাধিক হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।’
বিবৃতি অনুযায়ী, ইউক্রেনের হামলায় রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক, বেলগোরোদ, স্মোলেনস্ক, লিপেটস্ক এবং ভোরোনেজ অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের ভূখণ্ড লুহানস্ক ও খেরসনেও হামলা হয়েছে।
এসব হামলার কথাবার্তা সংস্থা রয়টার্স আলাদা করে যাচাই করে দেখতে পারেনি।
রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইউক্রেন। তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছিল, ১৮ মার্চ থেকে তারা রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা বন্ধ রেখেছে।
আরও পড়ুনরাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনে শিশুসহ ১৪ জন নিহত১৬ ঘণ্টা আগেপরস্পরের জ্বালানি অবকাঠামোতে ৩০ দিন হামলা না চালাতে গত মাসে সম্মত হয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন। কিন্তু এর পর থেকে উভয় দেশ ওই চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রুত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে চায়। এটা তাঁর অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। তাই ক্ষমতা গ্রহণ করেই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের উদ্যোগ নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। যুদ্ধ বন্ধের অংশ হিসেবে গত মাসে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে ৩০ দিন মেয়াদি ওই চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুনরাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টা বানচালের অভিযোগ০৪ এপ্রিল ২০২৫আজ আলাদাভাবে রাশিয়ার দুটি অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ স্থানীয় শিল্প অবকাঠামোতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার অভিযোগ করেছে।
গতকাল শুক্রবার ইউক্রেনের ক্রিভি রিহ শহরে রাশিয়ার হামলায় ৯ শিশুসহ অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা ওই অঞ্চলে একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রাশিয়া অপতথ্য ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে।
আরও পড়ুনইউক্রেনের আরও একটি গ্রাম দখলে নিল রাশিয়া০২ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র অবক ঠ ম ত ত হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের
আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।
দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।
মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।
হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’
সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।
হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।
বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’
এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।
এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে
তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।
দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।
এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’