অধ্যাপক ইউনূসকে পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী চান সারজিস, এনসিপির অবস্থান কী
Published: 5th, April 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য একটি নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। এই আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়ে সারজিসের দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্ট নানা আলোচনা তৈরি করেছে। কিন্তু সারজিস আলমের এই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে কি তাঁর দল এনসিপি একমত?
এ বিষয়ে এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ ছয়জন নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা বলেছেন, অধ্যাপক ইউনূসকে নিয়ে সারজিস ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছেন, সেটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। এটি এনসিপির দলীয় অবস্থান নয়। দলের নেতৃত্বের জায়গা থেকে সারজিসের এ ধরনের পোস্ট করা অনুচিত বলেও তাঁদের কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন।
ঈদুল ফিতরের এক দিন আগে গত ২৯ মার্চ দুপুরে এনসিপি নেতা সারজিস আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘প্রফেসর ড.
আজ শনিবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬১ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী এই পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১ লাখ ৬৭ হাজার ব্যবহারকারী ‘লাভ’ ও ৩০ হাজারের বেশি ‘কেয়ার’ রিঅ্যাক্ট দিয়েছেন। অর্থাৎ, প্রতিক্রিয়া দেওয়া অধিকাংশ ব্যবহারকারী বিষয়টিকে সমর্থন করছেন। এর পাশাপাশি সারজিসের ওই পোস্টে পক্ষে–বিপক্ষে ৩৯ হাজারের বেশি মন্তব্যও এসেছে।
সারজিস আলমের এই পোস্ট নানা আলোচনা তৈরি করেছে। সারজিসের পোস্টের পর ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আরও অনেকেই এ বিষয়ে ফেসবুকে পক্ষে–বিপক্ষে পোস্ট দেন। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনা হচ্ছে।
সারজিসের এই পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারজিস যা লিখেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত চাওয়া। এটা এনসিপির দলীয় অবস্থান নয়।’ একই কথা বলেছেন এনসিপির আরেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, দলের নেতৃত্বের জায়গা থেকে সারজিসের এ ধরনের পোস্ট করা অনুচিত।’
এই বিষয়ে সারজিস আলমের সঙ্গে শনিবার বিকেলে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। অধ্যাপক ইউনূসকে নিয়ে তাঁর আকাঙ্ক্ষাটা ব্যক্তিগত বলে উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘আমি নির্বাচিত সরকারের কথা বলেছি, বর্তমান সরকারের কথা বলিনি। অন্তর্বর্তী সরকার যত দিন থাকা যৌক্তিক বলে সব অংশীজন মনে করবে, সেটা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। অধ্যাপক ইউনূস একজন বৈশ্বিক নেতা। সেই জায়গা থেকে আমি আমার ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার কথা ফেসবুকে লিখেছি। এটা এনসিপির দলীয় অবস্থান নয়।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনস প র অবস থ ন সরক র র ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।