শুধু দখল ও দূষণ নয়, একটা নদীকে কতভাবে ‘হত্যা’ করা যায়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে যশোরের মুক্তেশ্বরী নদীটি। বেসরকারি আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটির একটি অংশ নির্মাণ করা হয়েছে নদীর জায়গা দখল করে। হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে যাতায়াতের জন্য যশোর শহরের পুলেরহাট এলাকায় মুক্তেশ্বরী নদীর দুই তীর কংক্রিট দিয়ে বাঁধাই করে একটি লোহার সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর নিচের অংশে থাকা কংক্রিট আর লোহার অবকাঠামোয় আটকে গেছে নদীর পানির প্রবাহ। এতে একদিকে পানি থাকলেও অন্য পাশ শুকিয়ে মাটি বেরিয়ে গেছে। এখন সেই মাটিও কেটে নেওয়া হচ্ছে।

অবৈধ সেই সেতু নদীর মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দিলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তাদের ভাষ্য, অস্থায়ীভাবে লোহার বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে সেতু নির্মাণ করার সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি আইনকানুনের ঊর্ধ্বে? প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সঙ্গে বেইলি সেতুর একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সেতুর কারণে কীভাবে মুক্তেশ্বরী নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ২০২০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যশোর কার্যালয় মুক্তেশ্বরী নদীর দখলদারদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় বলা হয়, ৯৭ ফুট প্রস্থ ও ২৪২ ফুট দৈর্ঘ্যের নদীর অংশে আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাততলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তালিকায় আরও কয়েকটি স্থাপনার উল্লেখ করা হয়েছিল।

প্রশ্ন হচ্ছে, তালিকা তৈরির পর চার বছর পেরিয়ে গেলেও কেন দখলদারদের হাত থেকে মুক্তেশ্বরীকে রক্ষা করা গেল না? পাউবো বলছে, দ্রুতই দখল উচ্ছেদের নোটিশ পাঠানো হবে। নোটিশ দিতেই যদি এত বছর পেরিয়ে যায়, তাহলে উচ্ছেদ করতে আরও কত বছর লেগে যাবে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় পরিবেশবাদীরা হাসপাতালটি নির্মাণের শুরু থেকে আন্দোলন করে এলেও জেলা প্রশাসন কিংবা পাউবো তাতে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। নদী রক্ষায় যারা অভিভাবক, তারাই যদি এমন গা–ছাড়া আচরণ করে, তাহলে নদী বাঁচবে কীভাবে।

ভৈরব নদের শাখা নদী মুক্তেশ্বরী চৌগাছা দিয়ে যশোর শহরে প্রবেশ করেছে। এই নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের বর্ষার পানি নিষ্কাশিত হয়। নদীটি ভবদহ বিলে গিয়ে মিশেছে। ফলে যশোরের পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে মুক্তেশ্বরী নদীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা মনে করি, মুক্তেশ্বরী নদীর ওপর অবৈধভাবে নির্মিত সেতু অবিলম্বে অপসারণ করে নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে হবে। আদ্-দ্বীন সখিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ অন্য দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদীটাকে আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে হবে। জেলা প্রশাসন ও পাউবোকেও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যেকোনো মূল্যে ধুঁকতে থাকা নদীটাকে বাঁচান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর ম ক ত শ বর

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি

ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।

যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।

কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা  সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ
  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান