ইসরায়েলি পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রা করার অভিযোগে বিজেপি নেতা ও তার অনুগামীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মমতার দলের এক বিধায়ক।

সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলার চেষ্টা ও ভারতীয় জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে সাবেক বিজেপি সাংসদ ও বিজেপি নেতা অর্জুন সিং ও তার একাধিক অনুগামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দয়া করেছেন জগদ্দল বিধানসভা কেন্দ্রের মমতার দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। 

গত ৬ এপ্রিল রাম নবমীর দিন, সনাতনী পতাকা ও ভারতীয় পতাকার সঙ্গে ইসরায়েলি পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রা করেন ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাবেক বিজেপি সংসদ অর্জুন সিং। একাধিক মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার মধ্য দিয়ে এই শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। তৃণমূল বিধায়কের অভিযোগ, ইসরায়েলি পতাকা নেওয়ার মাধ্যমে ওই এলাকায় সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন ওই বিজেপি নেতা।  

আরো পড়ুন:

অগ্নিদগ্ধ পবন কল্যাণের ৮ বছরের পুত্র

ভারতে মুসলিম ওয়াকফ বিল ২০২৫ পুনঃবিবেচনার দাবি বিএনপির

বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসরায়েলের পতাকা নিয়ে রামনবমীর শোভাযাত্রা ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করেছে। বিজেপি ওই নেতার এমন কর্মকাণ্ডের ফলে ব্যারাকপুর জুড়ে সাম্প্রদায়িক ও অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ছবি ছড়িয়ে পড়ায় এখনো সাম্প্রদায়িক অশান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমি নিশ্চিত সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই ইচ্ছাকৃত এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তাই ভাটপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।”

এদিকে এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা অর্জুন সিং বলেন, “আমি তো লুকিয়ে ইসরায়েলি পতাকা বহন করিনি। আমি প্রকাশ্যে নিয়েছি। ভারতের বন্ধু দেশ ইসরায়েল, তাই তার পতাকা নিয়েছি। আমার কাছে ভিডিও ফুটেজ রয়েছে যে, এখানকার জিহাদিরা গত মহররমের দিন ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়াচ্ছিল। ইসরায়েল সনাতনীদের সমর্থন করে। আজ ভারতের প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী করার জন্য সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে, পাশে থেকেছে বন্ধুদেশ ইসরায়েল। তা আমি ইসরায়েলের পতাকা নেব না তো কী পাকিস্তানের পতাকা নেব? ভারতবর্ষের পতাকা উপরে তার নিচে ইসরায়েলের পতাকা লাগিয়েছি, আমি যা করেছি খুব চিন্তাভাবনা করে করেছি। পাকিস্তান জিতলে যারা পতাকা ওড়ায়, পটকা ফাটায় তাদের কাছে আবার কৈফয়ত দিতে হবে?”

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেসকে জিহাদিদের দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মমতা ব্যানার্জির দলটাই তো জিহাদিদের দল। এই দলে আর হিন্দু কোথায় এই দলে তো শুধু মুসলমানদের তুষ্টিকরণ। আজকে বাংলাদেশের মুসলমানরা হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালাচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করছে, ধর্ম পরিবর্তন করাচ্ছে, তৃণমূল কোথায়? উল্টে ওপার থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশিদের এনে তৃণমূল তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের সনদ প্রদান করছে। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, পাসপোর্ট বানিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের জিহাদি সংগঠন মমতা ব্যানার্জিকে বলছে পশ্চিমবঙ্গকে ভারতবর্ষ থেকে আলাদা করে ফেলতে। আমি যা করেছি ঠিক করেছি।”

তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম এর পাল্টা বলেন, “অর্জুন সিং কোনো দেশকে পছন্দ করেন বলে রাম নবমী মিছিলে সেই দেশের পতাকা নিয়ে না নেমে নিজের বাড়ির ছাদে ওড়ালেও তো পারতেন। আজ উনি ইসরায়েলের পতাকা নিয়ে মিছিল করছেন, পরবর্তীতে অন্য দেশের পতাকা নিয়ে মিছিল করবেন। এতে ভারত বিশেষ করে বাংলার সংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে।”

তৃণমূল বিধায়কের অভিযোগ, “অর্জুন সিং চাইছেন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ধর্মীয় কারণে বিশৃঙ্খলা হোক।”

সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ