বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা লক্ষণীয়। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে গাজা ও রাফায় বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে ছাত্রদল আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। 

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের সমস্ত পণ্য বর্জন করব, তার মানে এই না আমরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করব। গতকাল (সোমবার) বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। এখানে সরকাররে ব্যর্থতা লক্ষণীয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা লক্ষণীয়। তাদের উচিত ছিল, আগে থেকে এখানে সতর্কতা অবলম্বন করা। তাহলে বাংলাদেশকে আজ এই বদনাম নিতে হতো না।’

তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার পরোক্ষভাবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তারা বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত সকল রাষ্ট্রে গমনের’ কথাটি সরিয়ে দিয়েছিল। অথচ তারা বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য মায়াকান্নাও করেছিল। তারা আড়িপাতার যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক দলের বিরুদ্ধে যে নির্যাতনের সূচনা করেছিল, সেই যন্ত্র পেগাসাস ইসরায়েল থেকে কিনেছিল।

সালাহ উদ্দিন আরও বলেন, পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার মানুষ ইসরায়েলের গণহত্যায় নিহত হয়েছে। যারা অপুষ্টিতে ভুগে নিহত হয়েছে, যারা চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছে, তাদেরকেও এই গণহত্যার শিকার হিসেবে গণ্য করতে হবে।

ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে সামনে বিএনপির পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের প্রতিবাদে অতি দ্রুত সারাদেশে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির এ নেতা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক দেন। তিনি বলেন, ‘গাজায় গণহত্যা দেখেও যেসব রাষ্ট্র নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে আছেন, তাদেরকে ধিক্কার জানাই। মানবাধিকারের সর্বোচ্চ লঙ্ঘন হওয়ার পরও অনেক মানবাধিকার সংগঠন কিছুই করছেন না। গাজায় লাখো মানুষকে নির্বিচার হত্যা করার পরও জাতিসংঘ কিছুই করছে না। যেখানে ইসরায়েলের পণ্য থাকবে, সেখানেই বয়কট করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘ইসরায়েলের নৃশংসতাকে ব্যাখ্যা করা যায়, এমন কোনো শব্দ নেই। ২০২৩ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত তারা ৫১ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। এর বিরুদ্ধে সারাবিশ্বের ছাত্রজনতা এরই মধ্যে রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজপথে শামিল হয়েছেন।’

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় সম্প্রতি পাঁচ বাংলাদেশিসহ চার শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীর যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্টুডেন্ট ভিসা’ বাতিলের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান ছাত্রদল সভাপতি। এছাড়াও ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি সমাবেশ থেকে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার নিন্দা জানান তিনি।

তিনি বলেন, এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সরকারের এত এত বড় ব্যর্থতা মেনে নেওয়া যায় না। এ সময় তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়াও সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টে মুসলিম সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা আইন সংশোধনের ওয়াকফ বিল পাসের নিন্দা জানান তিনি এবং দ্রুত এটি বাতিল করার দাবি জানান।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ছ ত রদল ইসর য় ল ইসর য় ল র ছ ত রদল ব এনপ র গণহত য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে

সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।

শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।

পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।

শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহরুখ খান: গণহত্যার সময় বিলিয়নিয়ার হওয়ার অর্থ কী
  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল