বিধিবহির্ভূতভাবে ছাঁটাই করা হলে মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: শ্রমসচিব
Published: 9th, April 2025 GMT
বৈঠকে না এসে সমাবেশ করার বিষয়ে টিএনজেডের এক শ্রেণির শ্রমিকদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেছেন, কিছু শ্রমিকের অসৎ উদ্দেশ্য আছে। এ ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে ছাঁটাই করা হলে মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার তৈরি পোশাক খাত–বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (আরএমজি-টিসিসি) ২০তম সভা শেষে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শ্রমসচিব। বৈঠক ডাকার কারণ ব্যাখ্যা করে শ্রমসচিব বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা এমন প্রতিবেদন দিচ্ছে যে ঈদের পর শ্রমিকেরা যখন কাজে ঢুকবে, তখন বড় ধরনের ছাঁটাই করা হবে এবং আরেকটা উত্তেজনা তৈরি করা হবে। সে কারণেই গতকাল বৈঠক ডাকা হয়েছিল। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করলে কারখানামালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
গত সোমবার টিএনজেডের শ্রমিকেরা কারখানার কাছে সমাবেশ করেছেন। শ্রমসচিবের প্রশ্ন, তাঁরা মঙ্গলবার বৈঠকে না এসে ওখানে সমাবেশ করছেন কেন? মনে হচ্ছে আবার তাঁরা পানি ঘোলা করবেন। সমস্যা সমাধানের জন্য যখন আলোচনা চলছে, তখন আরেক গ্রুপ বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাসে চড়ে এসে শ্রম ভবনের সামনে বসে আছেন। এগুলো কেন হবে? পুরো জিনিসটাকে খুব সরলভাবে দেখলে হবে না। পেছনে অনেক বিষয় আছে।
শ্রমসচিব বলেন, ‘একটি পক্ষ চাচ্ছে না যে আমাদের কারখানাগুলো চলুক। তারা পরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদের দিয়ে নানা রকম সমস্যা তৈরি করছে। তারা প্রকৃত অর্থে এই দেশের শত্রু। এ ছাড়া ছাঁটাই করতে হলে আইন অনুযায়ী করতে হবে। বিধিবহির্ভূতভাবে ছাঁটাই করা হলে মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়া হবে। ধরে নেওয়া হবে যে মালিক শ্রমিক ছাঁটাই করে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরির মাধ্যমে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছেন।’ তিনি আরও বলেন, যারা পোশাক খাত নিয়ে চক্রান্ত করবে, তারা দেশের শত্রু।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, অনেক শ্রমিকনেতা উসকানি দিচ্ছেন। উসকানিদাতাদের খুঁজে বের করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে কেউ রাস্তা দখল করতে পারবেন না। বিক্ষোভের অধিকার আছে; কিন্তু রাস্তা আটকে রাখার অধিকার নেই কারও। কেউ তা করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রমসচিব বলেন, দুই দফায় টিএনজেডকে টাকা দিয়েছে সরকার। তারপরও বকেয়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি তারা। নভেম্বরে ১৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এখন আবার ১৭ কোটি টাকা বকেয়া। কোরবানির ঈদের সময় আবার ১৫ কোটি টাকা বকেয়া হবে। এটা হতে পারে না। সিদ্ধান্ত হয়েছে, টিএনজেডের চারটি কারখানাই বন্ধ করে দেওয়া হবে। এসব কারখানার শ্রমিকসংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ২০০।
বেক্সিমকো মডেল টিএনজেডের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, দেশে ফিরতে টিএনজেডের মালিককে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারি করা হবে। তাঁর ওপর আস্থা রাখা যাচ্ছে না।
শ্রমসচিব বলেন, টিএনজেডের সমস্যা সমাধানে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে। তাদের সম্পদ মূল্যায়ন করা হবে এবং বের করা হবে, শ্রমিকদের পাওনা কত আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ রমসচ ব ব ট এনজ ড র ব যবস থ ট ই কর
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।
সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকার পক্ষে নন তিনি। শ্রমিক–মালিকদের স্বার্থ রক্ষাসহ শিগগিরই তা করা হবে। বিষয়টি এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, তা বলতে রাজি হননি শ্রম উপদেষ্টা।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।
জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।
এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।