ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না বাঁওড়ের ১২৬ দশমিক ৪৫ একর বিল শ্রেণির জমির মধ্যে ২৯ দশমিক ৪৫ একর জমি নিজেদের দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বেড়াদী গ্রামের ৩৫ জন বাসিন্দা।

গ্রামবাসীর দাবি, নিজেদের নামে এসএ ও আরএস রেকর্ডভুক্ত ওই জমিতে তাঁরা দীর্ঘদিন চাষাবাদ করছেন। সরকারি খাজনা দেওয়ার পরও সরকারের নাম ব্যবহার করে ওই জমি দখলের চেষ্টা চলছে।

তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, সিএস রেকর্ডে নড়াইলের জমিদার এস্টেটের নামে এক খতিয়ানে ১২৬ দশমিক ৪৫ একর জমি রেকর্ডভুক্ত ছিল। এর মধ্যে এসএ ও আরএস রেকর্ডে ২৯ দশমিক ৪৫ একর জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে মামলা করলে পুরো জমি সরকারের বলে রায় দেন আদালত। এরপরও দখলকারীরা জমি ছাড়েননি। বিল শ্রেণির ওই জমি ব্যক্তি মালিকানায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আজ বুধবার বেলা ১১টায় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জমির মালিকানা দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সবার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহাদেব রায়। তিনি দাবি করেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির পাশের সাগান্না বাঁওড়ের জলমহাল ইজারা দেওয়ার সময় সরকার ব্যক্তি মালিকানাধীন বেড়াদী গ্রামের জমিও অন্তর্ভুক্ত করছে, যা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। ইতিমধ্যে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেই জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার বেড়াদী মৌজাভুক্ত সাগান্না বাঁওড়ের মোট জমির পরিমাণ ১২৬ দশমিক ৪৫ একর। একসময় ওই জমি নড়াইল জমিদার এস্টেটের মালিকানাধীন ছিল। পরে জমিদারি বিলুপ্ত হলে ১৬৭ নম্বর দাগভুক্ত ওই সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে চলে যায়। তবে একই দাগের ২৯ দশমিক ৪৫ একর জমি সদরের হলিধানী ইউনিয়নের বেড়াদী গ্রামের কয়েকজনের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। এসএ ও আরএস রেকর্ডমূলে তাঁরা ওই জমি ভোগদখল করছেন। একই দাগে বিল শ্রেণির জমির কিছু অংশের শ্রেণি পরিবর্তন করে ব্যক্তির নামে রেকর্ডের বিষয়টি জানার পর আদালতে মামলা করে জেলা প্রশাসন। পরে ১২৬ দশমিক ৪৫ একর জমির পুরোটার মালিক সরকার বলে রায় দেন আদালত। রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে বেড়াদী গ্রামের কয়েকজন কৃষক আপিলও করেন।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল কুমার দাসের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

হলিধানী ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা লিটন বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ১২৬ দশমিক ৪৫ একর জমিই সরকারি। কয়েকজন দুটো রেকর্ড নিজেদের নামে করিয়েছেন। যার বিরুদ্ধে সরকার মামলা করে পক্ষে রায় পায়। দখলকারীরা আবার আপিল করেছেন। সরকার জমি দখলে নিতে গতকাল মঙ্গলবার সেখানে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল সরক র র র কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ