গাছ কাটা নিয়ে সংঘর্ষে প্রাণ গেল দুজনের
Published: 10th, April 2025 GMT
নওগাঁর নিয়ামতপুরে গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় ১১ জন আহত হয়েছেন। চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চন্দননগর এলাকার বুধুরিয়া ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন– বুধুরিয়া ডাঙ্গাপাড়া এলাকার মৃত ওছির আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম ও একই এলাকার মৃত আফসের আলীর ছেলে আজিজুল হক।
জানা গেছে, শরিফুল ইসলাম ও লালচানের বুধুরিয়া এলাকায় পাশাপাশি জমি রয়েছে। শরিফুল ইসলামের বাবা তাদের জায়গায় গাছ লাগান। মাপজোক করে দেখা যায়, গাছটি লালচানের জমিতে পড়েছে। উভয় পক্ষের সম্মতিতে শরিফুল ইসলাম বুধবার মেহগনি গাছটি কাটতে গেলে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে শরিফুল ইসলামকে তাঁর অংশ বেড়া দিয়ে ঘিরে নিতে বলেন লালচান। শরিফুল এখন ব্যস্ত আছেন জানালে লালচান ক্ষিপ্ত হন। পরে লালচান, কাশেম হাজিসহ ২০-২২ জন রামদা, কুড়াল, হাসুয়া দিয়ে শরিফুল ও তাঁর লোকজনের ওপর হামলা করে। এতে ঘটনাস্থলেই শরিফুল ইসলামের মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে আজিজুল ইসলাম রাজশাহী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি সেখানে মারা যান।
নিয়ামতপুর থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
উত্তেজনার মধ্যে সীমান্তের কাছে পাকিস্তানের সামরিক মহড়া
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এমন উত্তেজনার মধ্যেই সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) সংলগ্ন এলাকায় পূর্ণমাত্রার সামরিক মহড়া চালিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার এই সামরিক মহড়ায় গোলাবর্ষণের অনুশীলনসহ যুদ্ধপ্রস্তুতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ‘শত্রুপক্ষের সম্ভাব্য আগ্রাসনের জবাবে সশস্ত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে সেনাবাহিনী প্রস্তুত- এমন একটি বার্তা দিতে চেয়েছে ইসলামাবাদ।’
এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা এবং সৈন্যরা এ মহড়ায় অংশ নেন। বাহিনীর হাতে থাকা উন্নত যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৌশলগত দক্ষতা প্রদর্শন করা হয় সেখানে।
এর আগের দিন বুধবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতীয় বাহিনীর ‘উসকানিমূলক’ গুলির জবাবে কিয়ানি ও ম্যান্ডাল সেক্টরে একটি ভারতীয় চৌকি ধ্বংস করে দিয়েছে তারা।
গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার ইসলামাবাদ দাবি করে, ভারত আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিজেদের আকাশসীমার নিরাপত্তা ও বিমানবন্দরগুলোয় সতর্কতা জারি করেছে দেশটি। এরই মধ্যে পাকিস্তানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করেছে ভারত।
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীন দুই পক্ষকে শান্ত থাকতে বলেছে। এনডিটিভি অনলাইন জানায়, গতকাল বুধবারও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন মোদি। পেহেলগামে হামলার পর এটি কেবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটির (সিসিএস) দ্বিতীয় বৈঠক। প্রথম বৈঠকে সিন্ধুর পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
এদিকে ভারতের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে নিরাপত্তা উদ্বেগের মধ্যে নিজেদের আকাশসীমায় নজরদারি জোরদার করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) দেশটির আকাশসীমা দিয়ে চলাচলকারী দেশি-বিদেশি সব ফ্লাইট চলাচলের ওপর নজরদারি চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে। বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইটগুলো বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিমানবন্দরগুলোতেও বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, সন্দেহজনক যেকোনো উড়োজাহাজের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কোনো ফ্লাইট নিয়ে সন্দেহ হলে উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন ছাড়া ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হবে না। নিরাপত্তার কারণে বুধবার পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের গিলগিট ও স্কারদু শহরের নির্ধারিত সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, সতর্কতা হিসেবে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ার কারণে নিজেদের আকাশসীমা সুরক্ষিত রাখতেই পাকিস্তান এসব পদক্ষেপ নিয়েছে।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আত্তাউল্লাহ তারার বলেন, পাকিস্তানের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য আছে যে, ভারত ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে। তিনি কীসের ভিত্তিতে এমন তথ্য জানালেন, তা পরিষ্কার করেননি।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার রাতেও কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। টানা ষষ্ঠ রাতের এ গোলাগুলিতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সীমান্তে উত্তেজনার জন্য দু্ই দেশ একে অপরকে দোষারোপ করছে।
উত্তেজনা নিরসনে মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, মহাসচিব ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মর্মান্তিক পরিণতি হতে পারে, এমন সংঘাত এড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি। সেই সঙ্গে গুতেরেস মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন।
পরিস্থিতি শান্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেলেহগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ বেসামরিক মানুষ নিহত হন। ভারতের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করা হলেও কোনো ধরনের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। অন্যদিকে পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। এরই মধ্যে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি পাকিস্তানের নাম না নিয়ে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তানও। দেশটির সরকারের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, ইসলামাবাদ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা জানায় এবং ভারতের যে কোনো সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ‘সুচিন্তিত ও নিশ্চিত’ পদক্ষেপ নেবে।
একই কথা বলেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। মঙ্গলবার পাকিস্তানের সিনেট অধিবেশনে তিনি বলেন, পাকিস্তান প্রথমে ভারতে আক্রমণ করবে না। তবে কোনো আঘাত এলে তার জবাব দেবে। ভারতের অভিযোগ মোকাবিলায় পাকিস্তান যে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। পেহেলগাম হামলার জেরে সিন্ধুর পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার ভারতীয় ঘোষণা প্রসঙ্গে ইসহাক দার বলেন, ‘ভারত দুই বছর ধরে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বদলাতে চাচ্ছে। আমার মতো অনেকেরই সন্দেহ— এ নাটক (পেহেলগাম হামলা) হয়তো সেই চুক্তি স্থগিতের অজুহাত।’
সিনেট অধিবেশনে পিপিপির সদস্য সৈয়দ মাসরুর আহসান কারাবন্দি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই-প্রধান ইমরান খানকে সর্বদলীয় বৈঠকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানোর পক্ষে সমর্থন দেন। পিপিপির মাসরুর আহসান বলেন, সরকারকে নমনীয়তা দেখাতে হবে এবং বিরোধীদের কথা শুনতে হবে। উভয় পক্ষেরই অহংকার ত্যাগ করতে হবে। এর আগে তিনজন সিনেটর– আল্লামা নাসির আব্বাস, গুরদীপ সিং ও দোস্ত মোহাম্মদ পিটিআই নেতা ইমরানের মুক্তির দাবি জানান।
দ্য নিউজ জানায়, চলমান পরিস্থিতিতে বুধবার জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন পিটিআই নেতা ইমরান খান। তিনি বলেন, কিছু বিষয়ে দেশের মানুষের মধ্যে বিভাজন থাকতে পারে; কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির আগ্রাসন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়ে সবাইকে ঐকবদ্ধ থাকতে হবে। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়াল কারাগারে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ইমরান এসব কথা বলেন।
দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানায়, পাশাপাশি আকাশসীমায়ও শুরু হয়েছে নজরদারি। বুধবার কাশ্মীর সীমান্তে ভারতীয় বিমানবাহিনীর চারটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান টহল দিচ্ছিল। এ সময় পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান সেগুলোকে শনাক্ত ও ধাওয়া করে। এতে রাফায়েল যুদ্ধ বিমানগুলো পালিয়ে যায়।
চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও উস্কানির অভিযোগ তুলেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। মঙ্গলবারর সেনাবাহিনী এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করে, সম্প্রতি এক ভারত-প্রশিক্ষিত পাকিস্তানি নাগরিককে আটক করা হয়, যার কাছ থেকে একটি ভারতীয় ড্রোন ও ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) উদ্ধার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে ভারতীয় রুপিও পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাকিস্তানকে সমর্থন করে পোস্ট দেওয়ায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে অন্তত ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভবিষ্যতেও এ গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আরো একটি যুদ্ধ লাগার শঙ্কা তৈরি হওয়ায় পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ অস্বস্তিতে পড়েছে।