জায়নবাদী ইসরায়েল বিশ্বমানবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফিলিস্তিনে ইতিহাসের জঘন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় বোমা হামলা করে শত শত নারী-শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করছে। টানা প্রায় ১৮ মাস ধরে চালানো এ আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫০ সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে গত ২০ দিনে গাজায় প্রায় ৫০০ শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এই গণহত্যা বন্ধে ও ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
গাজায় বোমা হামলার ঘটনা শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনই নয়, এটি আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবতার প্রতি সীমাহীন অবজ্ঞা। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরও ইসরায়েল গাজায় বর্বরতা চালাচ্ছে। অথচ মানবতার ধুয়া তোলা বিশ্বমোড়লরা এখন নিশ্চুপ। মসজিদুল আকসা ও ফিলিস্তিনকে রক্ষার জন্য ওআইসি গঠন করা হয়েছিল। তারাও আজ নির্জীব।
মহান আল্লাহ সুরা আল ইমরানের ১০৩ আয়াতে এরশাদ করেন: তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিভক্ত হয়ো না। আর তোমাদের প্রতি আল্লাহর সেই অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে তখন তিনি তোমার হৃদয় প্রীতির বাঁধনে বেঁধে দিলেন এবং তোমরা তারই অপার অনুগ্রহে ভাই ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা এক অগ্নিকুণ্ডের কিনারায় ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করলেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা হেদায়াত লাভ করো।’ এই আয়াতের শিক্ষা অনুযায়ী, আমাদের মাঝে গড়ে উঠবে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সুদৃঢ় ঐক্য। এই ঐক্যই আমাদের এক উম্মতে পরিণত হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করবে, যার ফলে আমরা এক শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হতে পারব ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক হচ্ছে সুদৃঢ় ঐক্য। আমরা যদি আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরি আর মহানবীর (সা.
মুসলমানদের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। সে যুগের মুসলমানরা রাসুলে পাক (সা.) এর অনুসরণের মাধ্যমে প্রবল প্রতাপ ও শানশওকতের সঙ্গে শাসন করেছে অর্ধজাহান। শৌর্য-বীর্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রকৃতি– সর্বক্ষেত্রে তাদের ব্যাপক সাফল্য ছিল। সে যুগে মুসলমানরাই বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। আজ এত এত মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন পারছে না মজলুম ফিলিস্তিনি ভাইদের রক্ষা করতে? এর একমাত্র কারণ মুসলমানদের মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য না থাকা। তাই মুসলিম বিশ্বকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং পরস্পর বিভক্ত না হয়ে পবিত্র কোরআনের শিক্ষা এবং মহানবী (সা.) এর আদর্শ অনুসারে জীবন পরিচালনার মাধ্যমে মুসলিম ভ্রাতৃত্বকে ইস্পাতকঠিন প্রাচীরের মতো মজবুত করতে হবে। মানবতাবিরোধী জালিমদের কালো হাত ভেঙে দিতে হবে। মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে এবং নিরাপদ ও শান্তিময় পৃথিবী গড়তে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের বিকল্প নেই।
বর্তমানে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা মুসলিম উম্মাহর ওপর ফরজ হয়ে গেছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াই ছাড়া মুক্তি নেই। আরব বিশ্বকে পশ্চিমা আগ্রাসী দানবদের তেল সরবরাহ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। মুসলিম দেশে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সব পর্যায়ে ইহুদিদের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে হবে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি। যুদ্ধাপরাধী ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তাঁর বাহিনীকে যে কোনো মূল্যে শায়েস্তা করতে সব বিভেদ ভুলে গিয়ে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ওআইসি এবং আরব লিগ নেতাদের অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
হে আল্লাহ! মুসলিম উম্মাহকে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তৌফিক দান করুন।
ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ম সলম ন আল ল হ ম নবত
এছাড়াও পড়ুন:
এটিএম বুথে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ, নিরাপত্তাকর্মী পলাতক
গাজীপুরের শ্রীপুরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে বেসরকারি একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে এক কিশোরীকে (১৪) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর থেকে ওই বুথের নিরাপত্তাকর্মী পলাতক।
আজ রোববার বিকেলে ওই কিশোরীর বাবা শ্রীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার মুলাইদ গ্রামের একটি কারখানার পাশের এটিএম বুথের ভেতর এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত মো. লিটন মিয়া শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ গ্রামের আতাবুদ্দিন মুসার বাড়ির ভাড়াটিয়া। তাঁর গ্রামের বাড়ির ঠিকানা জানা সম্ভব হয়নি। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দায়। সে মা–বাবার সঙ্গে শ্রীপুরের একটি গ্রামে ভাড়া বাড়িতে থাকে।
কিশোরীর বাবা প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, তিনি টাকা তোলার জন্য ওই এটিএম বুথে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। একপর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মী মো. লিটনের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁর মেয়ে একটি স্পিনিং কারখানায় স্বল্প বেতনের চাকরি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে লিটন অন্য কারখানায় ভালো বেতনের চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। আশ্বাস পেয়ে রোববার তিনি তাঁর মেয়েকে নিয়ে ওই বুথে যান।
ওই কিশোরীর বাবা আরও বলেন, বুথে যাওয়ার পর লিটন মিয়া তাঁর মেয়েকে বুথের ভেতরে থাকা ছোট্ট একটি কক্ষে নিয়ে বসান। অন্য একটি কারখানার এক কর্মকর্তা কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আসবেন বলে অপেক্ষা করিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে লিটন মিয়া ওই কিশোরীকে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন এবং তাঁর বাবাকে বাড়িতে চলে যেতে বলেন। কিশোরীর বাবা সেখান থেকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর খবর নিতে এসে দেখেন তাঁর মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বুথের ভেতর থেকে বের হচ্ছে। পরে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে গেলে ধর্ষণের বিষয়টি তার মাকে জানায়।
পলাতক থাকায় এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. লিটন মিয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহম্মদ আবদুল বারিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই নিরাপত্তাকর্মী পলাতক আছেন। তাঁকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।’