অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকই ৩ দেশের, ২৫ ভাগ প্রবাসী
Published: 11th, April 2025 GMT
শেষ হলো চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন। বিদেশি বিনিয়োগকারীর সামনে বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে তুলে ধরতে এবারের আয়োজন ছিল অন্য বছরের চেয়ে ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, তা থেকে বিনিয়োগকারীকে নতুন ধারণা দিতে আয়োজকদের প্রাণান্ত চেষ্টা ছিল লক্ষণীয়।
বিনিয়োগ পরিবেশের সীমাবদ্ধতা কাটাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) থেকে তুলে ধরা হয়েছে বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ। প্রথা ভেঙে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা দিতে সফররত বিনিয়োগকারী বা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে সরেজমিন দেশের তিন প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে নিয়ে যায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
বিডা থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সম্মেলনে ৪২ দেশ থেকে চার শতাধিক অংশগ্রহণকারী সরাসরি অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে তিন শতাধিক ছিলেন বিদেশি। অবশ্য তালিকায় থাকা ১৫টির বেশি নাম একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে। আবার যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের অনেক প্রবাসীও এ বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
অংশগ্রহণকারীর তালিকা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী বা বর্তমানে বিনিয়োগ রয়েছে– এমন কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান বা প্রতিষ্ঠাতা বা সহপ্রতিষ্ঠাতা বা শীর্ষ নির্বাহী পদমর্যাদার ১৬০ জন সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। কোম্পানির পরিচালক বা শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন শতাধিক।
এর বাইরে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকেও প্রতিনিধিরা বিনিয়োগ সম্মেলন পর্যবেক্ষণে আসেন। কয়েকটি দেশের ব্যবসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আটজন এ সম্মেলনে যোগ দেন। এর বাইরে কয়েকটি দেশের ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।
চীন থেকে অংশগ্রহণকারী বেশি
চীনের সর্বাধিক ১৪৭ জন এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বলে তথ্য মিলেছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ রয়েছে, এমন কোম্পানির পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগ সম্ভাবনা খুঁজতেও কিছু কোম্পানির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি এ সম্মেলনে এসেছেন।
দেশভিত্তিক অংশগ্রহণকারী বিবেচনায় এর পরের অবস্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র (৪৪ জন), যুক্তরাজ্য (২৯ জন), ভারত (২৩ জন), জাপান (২০ জন)। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল মোটের অর্ধেক।
অংশগ্রহণকারী ১০ বড় কোম্পানি
চীনের ই-কমার্স জায়ান্ট, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি আলিবাবা এবারের সম্মেলনে যোগ দেয়। লন্ডনভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রফেশনাল সার্ভিসেস ফার্ম ডেলোয়েট প্রতিনিধি এ সম্মেলনে ছিল। অবশ্য বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম আগে থেকেই রয়েছে।
সম্মেলনে বিশ্বের অন্যতম বড় ইলেকট্রনিকস উৎপাদক প্রতিষ্ঠান স্যামসাং, বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে প্রভাবশালী কোম্পানি টয়োটা ট্যুসো করপোরেশন, বিশ্বজুড়ে পেমেন্ট নেটওয়ার্ক সেবা প্রদানকারী কোম্পানি ভিসা, রাইড শেয়ারিং এবং লজিস্টিক সেক্টরে সুপরিচিত কোম্পানি উবার, চীনের সরকারি মালিকানাধীন বড় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং, চীনের শক্তি এবং অবকাঠামো নির্মাণে বিশেষায়িত কোম্পানি পাওয়ার-চায়নার প্রতিনিধিরা সম্মেলনে যোগ দেন।
উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান
আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগ সংস্থার মধ্যে ছিল কেএফডব্লিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে সক্রিয় একটি শীর্ষস্থানীয়, স্বাধীন প্রকৌশল ও পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ফিচনার, ডাচ্ ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি রয়েল হাসকোনিংডিএইচভি।
উচ্চ প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের মধ্যে ছিল ফিনল্যান্ডভিত্তিক ওয়্যারপাস, নবায়নযোগ্য শক্তিতে এনভিশন এনার্জি, টাইকন সিস্টেমস। এ ছাড়া ফ্রান্সভিত্তিক খেলাধুলার সামগ্রী প্রস্তুতকারক ও খুচরা বিক্রেতা ডেকাথলন, বিশাল অবকাঠামো প্রকল্পের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন (সিআরবিসি)।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়ায় নারী এশিয়া কাপ: শক্তিশালী গ্রুপে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে।
আগামী বছরের ১-২৩ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে নারী এশিয়া কাপ। ১২ দলের এই টুর্নামেন্টের ড্র সিডনিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ দুপুরে। যেখানে শক্তিশালী গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ।
‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ উজবেকিস্তান, চীন ও উত্তর কোরিয়া। জাঁকজমকপূর্ণ ড্রতে বাংলাদেশ ছিল চার নম্বর প্লটে। সঙ্গী ছিল ইরান ও ভারত। গ্রুপিং ড্রতে টুর্নামেন্টের একমাত্র অভিষিক্ত দল বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপের তৃতীয় দল নির্বাচিত হয়।
পরের রাউন্ডে ‘বি’ গ্রুপের চতুর্থ দল হয় উজবেকিস্তান। এরপর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন চীন বাংলাদেশের গ্রুপের দ্বিতীয় দল হয়। সবশেষ দল হিসেবে এই গ্রুপে যুক্ত হয় উত্তর কোরিয়া। যারা ২০১০ সালে প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয়েছিল।
ড্র অনুষ্ঠানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও এএফসি অংশগ্রহণকারী সকল দেশের অধিনায়ক ও কোচকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। প্রথমবার নারী এশিয়া কাপে সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের কেউ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেনি। গতকাল অংশগ্রহণকারী দলগুলোর কোচ, খেলোয়াড়রা ট্রফি নিয়ে ফটোসেশন করে হারবার ব্রিজের সামনে। সেখানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ছাড়া, তাইওয়ান,ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাছাইপর্বে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল দুর্বার। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২৮ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ পড়েছিল কঠিন ‘সি’ গ্রুপে, যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল বাহরাইন (র্যাঙ্কিং ৯২), তুর্কমেনিস্তান এবং স্বাগতিক মিয়ানমার (র্যাঙ্কিং ৫৫)। র্যাঙ্কিংয়ের বিচারে পিছিয়ে থাকলেও মাঠের পারফরম্যান্সে বোঝার উপায় ছিল না।
প্রথম ম্যাচেই বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ঋতুপর্ণার জোড়া গোলের নৈপুণ্যে ২-১ ব্যবধানে হারায় মিয়ানমারকে। শেষ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকেও ছাড়েনি মেয়েরা। ৭-০ গোলের দাপুটে জয় তুলে নেয় তারা।
এই জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। আগামী বছর মার্চে বসবে টুর্নামেন্টের ২১তম আসর, যেখানে খেলবে ১২টি দেশ।
ঢাকা/ইয়াসিন