চিকিৎসক সংকটে ধুঁকছে হাকিমপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
Published: 12th, April 2025 GMT
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যার। ১০ জন চিকিৎসকের চাহিদা বিপরীতে সেখানে চিকিৎসক আছেন মাত্র দুই জন। চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ উপজেলার মানুষ। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিকিৎসকের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তিন ইউনিয়ন ও এক পৌরসভা নিয়ে গঠিত হাকিমপুর (হিলি) উপজেলায় চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র একটিই— উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিদিন এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন ৪০০ থেকে ৫০০ জন এবং জরুরি বিভাগে আসেন ১০০ থেকে ১৫০ জন। চিকিৎসাধীন থাকেন ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী। দীর্ঘদিন ধরে এসব রোগীকে সেবা দিচ্ছেন মাত্র দুই জন মেডিকেল অফিসার।
বর্তমানে আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে সর্দি, জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ। তারা চিকিৎসাসেবা নিতে ভিড় করছেন হাসপাতালে। তাদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দুই চিকিৎসক। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক বাড়াবে সরকার, এ প্রত্যাশা রোগী ও তাদের স্বজনদের।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা জহিরুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, “গতকাল আমি আমার রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। বর্তমান রোগীর অবস্থা ভালো। ডাক্তার মাঝে-মধ্যে আসছেন, রোগী দেখে যাচ্ছেন। তবে, সব জায়গায় দেখছি এক জন ডাক্তারকে। আমাদের হাসপাতাল অনেক দিন ধরেই দুই জন ডাক্তার দিয়ে চলছে। আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাব, দ্রুত এই হাসপাতালে ডাক্তার বাড়ানো হবে।”
হাসপাতালের স্টোরকিপার শাহিনুজ্জামান বলেছেন, “আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ এবং অন্যান্য সামগ্রী আছে। কিন্তু, যতগুলো ডাক্তার থাকার কথা, তা নেই। ডাক্তার কম থাকায় জনগণকে সঠিক সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।”
নার্সিং সুপারভাইজার নুর নেহার বেগম বলেছেন, হাসপাতালে নার্সের কমতি নেই। তবে, মাত্র দুই জন চিকিৎসক আছেন। এত বড় হাসপাতালে দুই জন চিকিৎসক দিয়ে সেবা দেওয়া সম্ভব না। চিকিৎসক বাড়ানো প্রয়োজন।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.
হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইলতুতমিশ আকন্দ পিন্টু বলেছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট আছে। দীর্ঘদিন ধরে দুই জন চিকিৎসক দ্বারা সেবা দিয়ে আসছি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিকিৎসকের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব স থ য কমপ ল ক স ম ত র দ ই জন ন চ ক ৎসক বল ছ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে প্রপাগান্ডার সয়লাব
ট
১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন তৎকালিন বাকশাল সরকার চারটি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় রেখে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। এতে হাজারো সাংবাদিক রাতারাতি বেকার হয়ে দুঃসহ জীবনে পতিত হন। জনগন সঠিক তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ খবর জানা থেকে বঞ্চিত হয়। গোটা দেশে যেন অন্ধকার নেমে আসে। জবরদস্তিমূলকভাবে তখন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশাজীবীদেরকে বাকশালে যোগদানে বাধ্য করা হয়।
অনেক সাংবাদিক সেদিন জীবন-জীবিকার ভয়ে বাকশালের ফরম পূরণ করেন। তাই সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত। আজ দিবস আর কালো নেই। তথ্য প্রবাহের যুগে এখন মন খূলে লেখা যায়, প্রচার করা যায়। বিশেষ করে গেলো বছরের ৫ আগষ্টে ফ্যাসিবাদের পতনের পর গনমাধ্যমে অনেকটা স্বাধীনতা বেড়েছে। গণভবনের তেল তেলা তোষামদি প্রশ্ন এখন আর চলে না। বলা চলে গণমাধ্যম বিগত ১৬ বছরের চাইতে এখন বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। তবে একটা প্রশ্ন রয়েই গেছে তা হলো পেশাদার কিছু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে । এসব মামলা বেশির ভাগই আক্রোশের কারনে হয়েছে। বাদীকে না জানিয়ে একটা মহল মামলায় সাংবাদিকের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। এটা নিন্দনীয়। একজন সাংবাদিক মানুষ খুনের মামলার আসামী এটা মেনে নেয়া দুস্কর ।
৫ আগষ্টে আগে যারা তোষামদি করতো , সঠিক সংবাদ লিখতে কিংবা প্রচার করতো পারতো না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দোহাই দিয়ে যারা গনমাধ্যমের কন্ঠ রোধ করে রেখেছিল তাদের ভয়ে আতংকে থাকতো। তাদের অনেকে এখন গনমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে মিথ্যা প্রপ্রাগান্ডা চড়াচ্ছে। গনহত্যাার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি একটা দলের প্রতি বিশেষ দরদ দেখিয়ে মিথ্যা তথ্য চড়াচ্ছে। অনেকে তাদের ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। যাচাই বাছাই ছাড়া মিথ্যা তথ্য শেয়ার করছে। তাদের এখনই থামা দরকার। সত্য প্রকাশ করা একজন সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব । এ পেশাগত দায়িত্বের কেউ অপব্যবহার করলে মুলত তিনিই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। একসময় তার মিথ্যা সংবাদ পরিবেশের কারনে কেউ তার পাশে আর থাকবেন না। তাকে পেশাদার সাংবাদিক নয়, একজন দালাল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আস্তুাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।
পেছনের কথায় ফিরে আসি, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন সংবাদ পত্রের কালো দিবস পেরিয়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার অভাবনীয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর সাংবাদিকদের লেখার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত করেন।
জিয়াউর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক সব কালাকানুন শিথিল করে দেশের সব জায়গা থেকে সংবাদপত্র প্রকাশে উৎসাহ প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, প্রকাশিত সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখা সরকারেরই দায়িত্ব বলেই তিনি মনে করতেন। তিনি রাজশাহী থেকে ‘দৈনিক বার্তা’ নামে একটি প্রথম শ্রেণীর পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। এ পত্রিকা ঘিরে সমগ্র উত্তরাঞ্চলে তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে। বহু সাংবাদিকের কর্মসংস্থান হয়।ডিক্লারেশনের শর্ত শিথিল করার কারণে সে সময় ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয়, জেলা এমনকি থানা পর্যায় থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশ হতে থাকে। এসব পত্রিকা টিকিয়ে রাখতে জিয়াউর রহমান সরকারি বিজ্ঞাপন বণ্টননীতিও শিথিল করেন। বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বণ্টন ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেন। একই সঙ্গে সরকারি বিজ্ঞাপনের ৬০ ভাগ ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় এবং বাকি ৪০ ভাগ মফস্বল থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় বণ্টনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে সারা দেশে সংবাদপত্র প্রকাশনায় নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই প্রথম টার্গেট করে সংবাদমাধ্যমকে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও একই পথে হাঁটে দলটি। গত প্রায় ১৫ বছরে আমার দেশ, দিনকাল, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, সিএসবিসহ জনপ্রিয় সংবাদপত্র, বেসরকারি টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে কয়েক হাজার সাংবাদিককে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দিয়েছিল । ৬০ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে। একের পর এক কালাকানুন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। কথায় সাংবাদিক গ্রেফতার তখন নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাংবাদিক পরিচয়ে একদল চাটুকার আওয়ামীলীগের দু:শাসনের মদদ দিয়ে জাতির উপর জুলুমের মাত্রা আরো বাড়িয়েছিল। ছাত্রজনতার বিপ্লবে ফ্যাসিবাদের ভয়াবহ পতনে মানুষ যেমন স্বস্তি ফিরে পেয়েছে তেমনি গণমাধ্যম ফিরেছে অবাধ স্বাধীনতায়।
লেখক : সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)