বর্তমান যুগে প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এই পরিবর্তনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ডিজিটাইজেশন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ গ্রহণের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সামাজিক চাপ, দ্রুত পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রা এবং ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোর সমাধানে সহজলভ্য এই সেবা তরুণদের কাছে এক নতুন আশার আলো হয়ে উঠেছে। এই সেবার প্রসার ও গ্রহণযোগ্যতার পেছনে রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা, যা আমাদের সমাজে একটি বৃহত্তর মানসিক স্বাস্থ্য বিপ্লবের সূচনা করতে পারে।
বাংলাদেশে অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তরুণদের মধ্যে ৩৬.
বিশ্বব্যাপী, কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি, আর্ট থেরাপি এবং মেডিটেশনসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ডিজিটাল মাধ্যমে সহজলভ্য হয়েছে। বাংলাদেশেও এই প্রবণতা অনুসরণ করে তরুণরা তাদের মানসিক সমস্যাগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার সুযোগ পাচ্ছে, যা আগে সমাজে অনেকটা নেতিবাচক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হতো।
তরুণদের মধ্যে মানসিক চাপের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে– দ্রুত পরিবর্তনশীল সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং পারিবারিক প্রত্যাশা। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহারও তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করার প্রবণতা তরুণদের মাঝে হতাশা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি করছে।
তরুণরা প্রায়ই মনে করে যে, তাদের সমস্যাগুলো প্রকাশ করলে তারা সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হবে। এ পরিস্থিতিতে অনলাইন পরামর্শ একটি গোপনীয় এবং নিরাপদ বিকল্প হিসেবে কাজ করছে।
অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ তরুণদের জন্য একটি কার্যকর সমাধান হয়ে উঠেছে। এটি তাদের সময় এবং অর্থ সাশ্রয় করতে সহায়তা করে। এই সেবার মাধ্যমে তরুণরা তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারছে এবং তাৎক্ষণিক সমাধান পাচ্ছে। এ ছাড়া, গোপনীয়তার নিশ্চয়তা তাদের জন্য একটি বড় সুবিধা হিসেবে কাজ করছে। ব্র্যাকের মতো
প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশিক্ষিত মনোবিদ এবং সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলরের মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করছে, যা মানসিক সমস্যাগুলোর কার্যকরী সমাধান দিতে সক্ষম।
যদিও অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ নানাবিধ সুবিধা প্রদান করছে, তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একজন মনোবিদও নেই, সেখানে প্রশিক্ষিত ও পেশাদার কাউন্সেলরের অভাব অনলাইন সেবার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া, অনেক তরুণ এখনও এই সেবা গ্রহণ করতে দ্বিধাগ্রস্ত থাকে। কারণ তারা মনে করে এটি তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্যকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে। আমাদের উচিত, এই উদ্যোগকে আরও প্রসারিত করা এবং তরুণদের জন্য একটি নিরাপদ ও সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা তাদের সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারবে।
মো. ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ্:
লেখক ও গবেষক
ibrahimkhalilullah010@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমস য গ ল র জন য এই স ব
এছাড়াও পড়ুন:
কারা বেশি কাঁদেন?
কান্না একটি এমন একটি স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর মানসিক প্রক্রিয়া যা শরীরকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ‘‘যারা বেশি কাঁদেন তাদের মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এর কারণ কখনও মানসিক কখনও শারীরিক আবার কখনও পারিপার্শ্বিক বিষয়।’’ বেশি কান্না করা মানুষের আচরণে বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
উচ্চ মানসিক সংবেদনশীলতা
এই ব্যক্তিরা সাধারণত অন্যের আবেগ ও অনুভূতি খুব সহজেই বুঝতে পারেন এবং গভীরভাবে অনুভব করেন। সামান্য ঘটনায় তারা বেশি প্রভাবিত হন।
আরো পড়ুন:
যেসব কারণে মানুষ স্বর্ণ জমায়
বিশ্বে কারা বেশি পড়েন, কোন বই বেশি পড়েন?
সহানুভূতির প্রবণতা
যাদের মধ্যে সহানুভূতির মাত্রা বেশি, তারা প্রায়শই বেশি কাঁদেন। তারা নিজেদের পাশাপাশি অন্যের কষ্টেও সহজে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
মানসিক চাপ বা বিষণ্নতা
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্নতার কারণে মানুষ বেশি কাঁদতে পারে। কান্না এক্ষেত্রে জমে থাকা মানসিক চাপ কমানোর একটি উপায় হিসেবে কাজ করে।
হরমোনের প্রভাব
হরমোনের তারতম্য, বিশেষ করে নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে, কান্নার প্রবণতাকে প্রভাবিত করতে পারে। ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মতো হরমোনের মাত্রা কান্নার সাথে সম্পর্কিত।
অতীত অভিজ্ঞতা
অতীতের কোনো দুঃখজনক বা আঘাতমূলক ঘটনা মানুষের মধ্যে সহজে কেঁদে ফেলার প্রবণতা তৈরি করতে পারে।
যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কান্না
কিছু মানুষের জন্য কান্না হল নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করার একটি উপায়, কারণ তারা হয়তো কথা বলে তা প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।
উল্লেখ্য, যদি অতিরিক্ত কান্না দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে বা বিষণ্নতার লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়, তাহলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ঢাকা/লিপি