খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৯৮তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় আজকের (সোমবার) সভায় উপস্থাপন করা হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেট গ্রহণ করে। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম আগামী ৪ মে শুরু হবে এবং আবাসিক হলগুলো আগামী ২ মে থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

তবে কোন কোন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তাঁদের বহিষ্কারাদেশ কত দিনের জন্য, সেসব তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেছেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী হল না খোলা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত হল খোলা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা এই অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

হল খুলে দেওয়ার দাবিতে কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে তোলা ছবি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলি যুদ্ধযন্ত্রকে থামাইতেই হইবে

শুক্রবার হইতে ইরানের উপর কোনো প্রকার উস্কানি ব্যতিরেকে ইসরায়েল যেই হামলা চালাইয়া যাইতেছে, উহাতে জায়নবাদী রাষ্ট্রটির আগ্রাসী চরিত্রই পুনরায় ফুটিয়া উঠিয়াছে। বিশ্বের অন্যান্য শান্তিপ্রিয় ও যুদ্ধবিরোধী রাষ্ট্র, জাতি ও জনগণের ন্যায় আমরাও জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সকল সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘনকারী এই আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাই। ইরানি কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুসারে, ইসরায়েলের এই হামলায় একাধিক সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৭৮ জন ইরানি নাগরিক নিহত হইয়াছেন; আহত হইয়াছেন ৩২৯ জন। আমরা ইসরায়েলি হামলায় নিহত ইরানিদের প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা এবং আহত ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি জানাই। আমরা জানি, ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলেও বেশ কয়েকজন হতাহত হইয়াছেন। এই সকল প্রাণহানির দায়ও ইসরায়েলি যুদ্ধোন্মত্ত সরকারকে বহন করিতে হইবে। 

স্মরণ করা যাইতে পারে, মূলত দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত হইবার কারণে ইসরায়েল বিশেষত আরব ও সমগ্র বিশ্বের ন্যায়ানুরাগী মানুষের নিকট অবৈধ রাষ্ট্র হইলেও, মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও বিশ্বশান্তির স্বার্থে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধপূর্ব সীমানার ভিত্তিতে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রস্তাব আরব নেতৃবৃন্দসহ অধিকাংশ রাষ্ট্র সমর্থন করিয়া থাকে। এমনকি ১৯৯০-এর দশকে ইসরায়েলি নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি নেতৃবৃন্দও এই বিষয়ে এক প্রকার সমঝোতায় উপনীত হইয়াছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলের বর্তমান চরম রক্ষণশীল নেতৃত্ব হীনস্বার্থ চরিতার্থ করিবার লক্ষ্যে উক্ত সমঝোতা উপেক্ষা করিয়া গত কয়েক বৎসর যাবৎ গাজায় নির্মম গণহত্যা ও অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চালাইয়া আসিতেছে। যাহার ফলে এক চিলতে গাজায় নারী-শিশুসহ অর্ধলক্ষাধিক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন বহু মানুষ। তদুপরি উক্ত আগ্রাসনকে নির্বিঘ্ন করিবার লক্ষ্যে বিশ্ব জনমতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করিয়া ইসরায়েল লেবানন ও সিরিয়ায়ও এই সময়ে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করে। ইরানের উপর চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনও যে অভিন্ন নীলনকশার অংশ– তাহা হলফ করিয়াই বলা যায়। কারণ বরাবরের ন্যায় ইরান গাজায় পরিচালিত সাম্প্রতিক ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও সোচ্চার থাকিয়াছে। এই বিষয়ে বিশ্বজনমত গঠনেও তৎপর।

অধিকতর উদ্বেগজনক হইল, যুক্তরাষ্ট্রসহ যেই সকল পশ্চিমা রাষ্ট্র নিজেদের আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পাহারাদার ভাবেন, তাহারা সকলেই গাজার ন্যায় চলমান ইরান আগ্রাসনেও ইসরায়েলকে সমর্থন-সহযোগিতা চালাইয়া যাইতেছেন। এই নীতির মাধ্যমে তাহারা বস্তুত সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকেই অগ্নিকুণ্ডে পরিণত করিতে যাইতেছেন। এমনকি বিশ্ব অর্থনীতিকে নিক্ষেপ করিতেছেন টালমাটাল পরিস্থিতিতে। বিশেষত বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহে ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অগ্রগণ্য ভূমিকা সর্বজনবিদিত। বৈশ্বিক বাণিজ্যে ইরানের প্রভাবাধীন হরমুজ প্রণালির ভূমিকাও অজানা নহে। সর্বোপরি সামরিক শক্তিতেও ইরান উপেক্ষণীয় নহে। আমাদের বিশ্বাস, এই সকল কারণ বিবেচনায় রাখিয়াই ইতোপূর্বে বিশ্বশক্তিসমূহ পারমাণবিক অস্ত্র ইস্যুতে শক্তি প্রয়োগের পরিবর্তে ইরানের সহিত আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি সম্পাদন করিয়াছিল। এমনকি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অগ্র-পশ্চাৎ না ভাবিয়া উক্ত চুক্তি বাতিল করিবার পরও সম্প্রতি একই প্রশ্নে ইরানের সহিত আলোচনাকেই প্রাধান্য দিয়াছেন, যাহার অংশরূপে ১৫ জুন ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ দফা পারমাণবিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হইবার কথা ছিল। কিন্তু ইরানে ইসরায়েলি আগ্রাসন সেই আলোচনাকে বানচাল করিয়া দিল। 
আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘকে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করিতে হইবে। চলমান সংঘাতের অবসান এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আনিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বিশ্বনেতাদের মধ্যে এ বিষয়ে শুভবুদ্ধির উদয় ঘটাইতে দেশ দেশে যুদ্ধবিরোধী মানুষের সোচ্চার হইবার সময় সমুপস্থিত বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। ইসরায়েলি যুদ্ধযন্ত্রকে যেই কোনো মূল্যে থামাইতে হইবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ