সাড়ে চার বছর আগে কাবিনের টাকা না দিতে স্ত্রীকে গলাটিপে খুনের মামলায় স্বামীসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। তাঁরা হলেন স্বামী মো. ফরহাদ ও তাঁর মামা মো. সেলিম ওরফে মনির। আজ বুধবার চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ সিরাজাম মুনীরা এই রায় দেন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালত দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ, ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ ছাড়া লাশ গুমের দায়ে ওই দুই আসামিকে তিন বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা হাজির ছিলেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

আদালত সূত্র জানায়, পেশায় দিনমজুর ফরহাদের গ্রামের বাড়ি ভোলায় প্রথম স্ত্রী ছিলেন। পরে পোশাককর্মী জেসমিন আক্তারকে বিয়ে করেন। এতে কাবিন নির্ধারিত হয় ৬ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ফরহাদ স্ত্রী জেসমিনকে নিয়ে নগরের আকবর শাহ থানার একে খান এলাকার পাহাড়ে নিয়ে যান পরিকল্পিতভাবে। সেখান আগে থেকে ছিলেন তাঁর মামা সেলিম। মামা মুখ চেপে ধরেন আর ফরহাদ গলা টিপে ধরেন জেসমিনকে। এতে মারা যান জেসমিন। পরে পাহাড়ের ঝোপের মধ্যে লাশটি লুকিয়ে রাখেন।

২ অক্টোবর পুলিশ জেসমিনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তাঁর ছোট ভাই বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে পুলিশ ফরহাদ ও তাঁর মামাকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ফরহাদ বলেন, একসঙ্গে দুটি সংসার চালানো কষ্টকর। তালাক দিলেও কাবিনের টাকা দিতে হবে। এই দুটি বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন ফরহাদ। এ জন্য জেসমিনকে মেরে ফেলেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পরের বছরের ১৭ আগস্ট দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে আদালত এই রায় দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফরহ দ

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ

বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস-কালীবাড়ি মোড় সড়কে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের পসরা। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন শর্মা, মিটবক্স—সবই মিলছে রাস্তার পাশের এসব দোকানে। ক্রেতারা মূলত কিশোর ও তরুণ-তরুণী।

দোকানগুলোতে নেই কোনো আলাদা শেফ। বিক্রেতারাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করছেন, পরিবেশনও করছেন। কারও হাতে গ্লাভস নেই, শরীরে নেই অ্যাপ্রোন। বিকেল গড়াতেই এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে ভিড় জমছে। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের পাশেই আছে ‘পিজ অ্যান্ড বার্গ’, ‘পদ্মা ফুডস’ ও ‘হিলিয়াম রেস্টুরেন্ট’-এর মতো নামীদামি খাবারের দোকান। একসময় সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার ঢল নামত। এখন সে ভিড় চলে গেছে রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর দিকে।

পদ্মা ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত এ এলাকায় একটি খাবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। এসব নবায়নে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভবন ভাড়া, দামি শেফ ও কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে খরচ বিপুল। অথচ রাস্তার পাশে ভ্যানে বসা দোকানে বিনিয়োগ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোনো সনদ নেই, দোকানভাড়া নেই, কর্মচারীও নেই। শুধু দামে সস্তা বলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন ওদিকে। সড়ক দখল করে দোকান বসায় যানজটও বাড়ছে। অভিযোগ করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মিলছে না।

বগুড়া হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলেশ্বরীতলা অভিজাত এলাকা। এখানে দোকান দিতে বিপুল বিনিয়োগ লাগে। নামীদামি দোকানে একটি পিৎজার দাম ৫০০ টাকা হলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেখান থেকেই কিনছেন। এতে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো লোকসানে পড়ছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘আমরা স্ট্রিট ফুড ব্যবসার বিরোধী নই। তবে সেটা অভিজাত এলাকা থেকে সরিয়ে পৌর পার্ক, অ্যাডওয়ার্ড পার্কসংলগ্ন সড়ক কিংবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাশের এলাকায় নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’

সড়কজুড়ে দোকান, ভোগান্তিতে শহরবাসী

সম্প্রতি দেখা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সড়কের এক পাশে ২০-২৫টি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসেছে। অন্য পাশে ফলের দোকান। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণের সামনে যানজট লেগেই থাকে।

এ ছাড়া পৌরসভা লেন, জেলা খানা মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, মহিলা ক্লাব মোড়, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, সাতমাথা-সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের নানা সড়কেই বসছে ফুচকা, চটপটি, জুস, ফাস্ট ফুড ও ফলের দোকান।

সাতমাথায় প্রতিদিন বসছে অর্ধশতাধিক দোকান। জিলা স্কুলের সামনে চটপটি ও কাবাবের দোকানগুলোর চেয়ার বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা—সবখানেই দুই পাশে দোকান।

রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় বেশির ভাগ সময় যানজটে থাকে শহরে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ