পাল্টাপাল্টি আন্দোলনে উত্তাল কুয়েট, বাড়ছে সেশনজট
Published: 16th, April 2025 GMT
উত্তাল হয়ে উঠেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাস। উপাচার্যকে অপসারণের দাবির পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীরা। উপাচার্যকে অপসারণ করা না হলে সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আর বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি না হলে ক্লাসে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। এদিকে গত প্রায় ২ মাস ধরে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাড়ছে সেশনজট।
কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
শিক্ষার্থীরা বলেন, মঙ্গলবার তারা তালা ভেঙে ৬টি হলে উঠলেও কর্তৃপক্ষ খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেয়নি। ২ মাস হল বন্ধ থাকায় ধুলাবালি জমেছে। এর ফলে তারা বিপাকে পড়েছেন। তারপরও উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
মিছিল শেষে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অবিলম্বে উপাচার্যকে অপসারণ, শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন উপাচার্য নিয়োগ করে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করতে হবে। যদি এটা করা না হয় তাহলে আমাদের ‘নতুন জুলাই’ হবে এই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের এই যুদ্ধ হবে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল নজরুলের বিরুদ্ধে, যেসব ছাত্র উপদেষ্টা আমাদের রক্তের বিনিময়ে আজকে ক্ষমতায় বসেছে তাদের বিরুদ্ধে।
এদিকে ‘কিছু শিক্ষার্থী কর্তৃক উপাচার্যকে হয়রানি ও তাকে অপসারণের অপচেষ্টার’ প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন কুয়েটের অধিকাংশ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুপুর ২টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি দুর্বার বাংলা চত্বরে গিয়ে মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
মানববন্ধনে কুয়েটের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম এম এ হাশেম বলেন, ছাত্ররা ভুল পথে আছে। তারা তালা ভেঙে হলে ঢুকে আইন লঙ্ঘন করেছে। তালা ভাঙা তাদের উচিত হয়নি। কারণ তালা দেওয়া হয়েছিল সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সালাউদ্দিন ইউসুফ বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের দিন উপাচার্যের গায়ে ছাত্রদের হাত তোলা ঠিক হয়নি।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের ১ দফা দাবি আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের এক দফা দাবি হচ্ছে যেসব ছাত্র দোষী সাব্যস্ত হবে, তারা শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ ক্লাসে ফিরে যাব না।
সেকশন অফিসার ইমদাদুল বলেন, উপাচার্যকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আমার সামনেই মারধর করা হয়। ছাত্ররা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে, এই রকম গালিগালাজ আমার জীবনে আমি শুনিনি। স্যারকে রক্ষা করতে গেলে আমাকেও মারধর করে।
কুয়েটের কর্মচারী ইমদাদ মোড়ল বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিক দাবি মানতে রাজি না। কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যকে মারধর, গালাগাল এবং তার গায়ে থু থু দিয়েছিল। এখন তাকে অপসারণের টার্গেট নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে।
এ দিকে কুয়েটে আগে থেকেই প্রায় দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। এর উপর গত ২ মাস কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। এ অবস্থা চলমান থাকায় বাড়ছে সেশনজট। আগামী ২ মে হল খোলা ও ৪ মে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
কুয়েটের শিক্ষার্থী ওবায়দুল্লাহ বলেন, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ভর্তি হই। ইতোমধ্যে ৫ বছর পার হয়ে গেছে। আমরা ১ বছর ৩/৪ মাস সেশনজটের মধ্যে আছি। কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে, পরীক্ষা হবে তা অনিশ্চিত। ফলে সেশনজট আরও বাড়ছে।
২০১৯ ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের দেড় বছর সেশনজট ছিল। আরও ২ মাস পিছিয়ে গিয়েছি। গত ৪ মার্চের মধ্যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর আমাদের চাকরিতে ঢোকার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পরীক্ষা বাকি রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে বিরোধের জেরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে দেড় শতাধিক আহত হন। এরপর সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে কুয়েটের আবাসিক হল ও একাডেমিক কার্যক্রম।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপ চ র য উপ চ র য স শনজট আম দ র পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
ভাত খাওয়ার সময় কেন ভাতটাই পরে খেতে বলেন চিকিৎসকেরা?
সুস্থ থাকতে ভাতের পরিমাণ যে কমিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, এ কথা অনেকেরই জানা। তবে ভাতের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, ভাত খেতে বসে শুরুতেই ভাত না খাওয়া। বিষয়টা মানতে পারলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিও কমে। সহজভাবে বিষয়টা বুঝিয়ে দিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
ভাত দিয়ে শুরু করলেভাতের সঙ্গে খানিকটা ভর্তা, সবজি, মাছ বা মাংস যা কিছুই মেখে নেওয়া হোক না কেন, ভাতটা বেশ দ্রুতই হজম হয়ে যায়। রসনার তৃপ্তির সঙ্গে যে হরমোনের সম্পর্ক আছে, ভাত দিয়ে খাওয়া শুরু করলে তার নিঃসরণ হতে দেরি হয়। অর্থাৎ সহজে ক্ষুধা মেটে না। অল্পতেই খাওয়া থামানো মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়; বরং অনেকটা খাওয়ার পরও আমাদের মন চায় আরও দুয়েক চামচ ভাত নিতে। হজমপ্রক্রিয়ায় ভাতের শর্করা ভেঙে তৈরি হয় গ্লুকোজ। এই গ্লুকোজ চলে আসে আমাদের রক্তে। আবার এই গ্লুকোজ অনায়াসেই আমাদের দেহের বিভিন্ন অংশে মেদ হিসেবে জমা হতে শুরু করে। এদিকে রক্তের গ্লুকোজ কমে গেলেই আমাদের ক্ষুধা পায়। ফলে ভাত খাওয়ার কিছু সময় পরই আরও কিছু খেতে ইচ্ছা করে।
শুরুটা হোক স্বাস্থ্যকরভাত খেতে বসে শুরুতেই যদি আপনি কিছুটা সবজি, স্বাস্থ্যকর তেল দেওয়া খাবার কিংবা আমিষ–জাতীয় খাবার খেয়ে নেন, তাহলে কিন্তু ব্যাপারটা অন্য রকম দাঁড়ায়। এসব খাবার হজম হয় ধীরে। ফলে এসব খাবার খাওয়ার পর যে ভাত আপনি খাবেন, তা–ও হজম হবে দেরিতে। বুঝতেই পারছেন, হুট করে রক্তে গ্লুকোজ বাড়া–কমার ঝক্কিটাই থাকে না এভাবে ভাত খাওয়া হলে।
তা ছাড়া শুরুতে ভাতের বদলে এসব খাবার খেলে রসনার তৃপ্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হরমোন নিঃসরণ হয় দ্রুত। অর্থাৎ সহজেই ক্ষুধা মিটে যায়। ক্যালরির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। মেদ জমার ঝুঁকিও কমে। এ ক্ষেত্রে রক্তে গ্লুকোজ বাড়ে ধীরে ধীরে, স্বাস্থ্যকর উপায়ে। এই গ্লুকোজ রক্তে থাকেও লম্বা সময়। তাই ভাত খাওয়ার খানিক পর আবার ক্ষুধাও লাগে না।
আরও পড়ুনআটা বা ময়দার রুটির চেয়ে কেন ভাত খাওয়া ভালো২৪ জানুয়ারি ২০২৫সুস্থ থাকতে যা করবেনভাত, রুটি, পাউরুটি বা শর্করা–জাতীয় যেকোনো খাবারের জন্য ব্যাপারটা একই। তাই এসব খাবার খেতে বসলে শুরু করুন সবজি, আমিষ কিংবা স্বাস্থ্যকর তেল দেওয়া কোনো খাবার দিয়ে। তবে খাওয়া শুরুর সময়ের সবজি হিসেবে কোনো ধরনের আলু বেছে নেবেন না; কারণ, আলু শর্করা–জাতীয় খাবার।
ভাত খাওয়ার শুরুতে আপনি টক দই বা জলপাই তেলের ড্রেসিং দেওয়া সালাদ খেতে পারেন। অথবা তিন–চার টেবিল চামচ সবজি দিয়ে শুরু করুন কিংবা মাছ বা মাংসের একটা বড় টুকরা খেয়ে নিতে পারেন শুরুতেই। অথবা আধা বাটি ঘন ডালও খেয়ে নেওয়া যেতে পারে। এ রকম কিছু খাবার দিয়ে খাওয়া শুরু করে এরপর ভাত দিয়ে বাকি তরকারি বা মাছ–মাংস খান।
রুটি খাওয়ার সময় শুরুতে অর্ধেকটা ডিম আর খানিকটা সবজি খেয়ে নিয়ে এরপর রুটি দিয়ে বাকি খাবারগুলো খেতে পারেন কিংবা রুটি খাওয়া শুরু করার আগে আধা মুঠো বাদাম খেতে পারেন।
মাঝেমধ্যে বিরিয়ানি, তেহারি, মোরগ–পোলাও খেলে সালাদ দিয়ে খাওয়া শুরু করুন।
স্যান্ডউইচ, বার্গার, পাস্তা, নুডলস বা এ ধরনের অন্য কোনো খাবার খাওয়ার আগে একইভাবে একটু বাদাম বা সালাদ খেয়ে নিন। স্যান্ডউইচ বা পাস্তার মতো খাবার একাই পুরোটা না খেয়ে ভাগ করে নিন অন্য কারও সঙ্গে।
আরও পড়ুনগরমকালে কেন কাঁঠাল খাবেন? জেনে নিন ৬টি আশ্চর্য উপকারিতা১০ জুন ২০২৫