আইএমএফের ঋণের বাকি কিস্তি মিলবে কবে, জানা যাবে জুনে
Published: 17th, April 2025 GMT
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের বাকি কিস্তি কবে পাওয়া যাবে চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ তা জানা যাবে। ওই সময় সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে। আইএমএফ মিশনের বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন সঠিক পথেই আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের আলোচনা শেষ হয়নি, আলোচনা চলমান।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কমূর্সচি ছাড়ের বিভিন্ন শর্ত রয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে বাংলাদেশ কতটা শর্তপূরণ করেছে, তা পর্যালোচনায় গত ২ এপ্রিল সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসে। সংস্থাটির গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি প্রায় দুই সপ্তাহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে করেছে। বৈঠক শেষে আজ এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংস্থাটির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তিতে ১১৪ কোটি থেকে সর্বোচ্চ ১৩০ কোটি ডলার ছাড় নিয়ে দরকষাকষি চলছে। এর আগে চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে গত ডিসেম্বরে আইএমএফ মিশন ঢাকায় এসেছিল। ওই মিশনের বৈঠক শেষে স্টাফ লেভেলের ঐক্যমতের কথা জানানো হয়।
তখন ধারণা দেওয়া হয়েছিল, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আইএমফের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে চতুর্থ কিস্তি ছাড় হবে। স্টাফ লেভেলের ঐকমত্যের পর পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের বিষয়টি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা। তবে ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা এবং কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংস্থাটির সঙ্গে টানাপোড়েনে বিষয়টি সামনে আসে।
এর মধ্যে মিশনের সঙ্গে কোনো ঐকমত্য ছাড়াই মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের আলোচনা শেষ হয়নি। আগামী সপ্তাহ থেকে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠক শুরু হচ্ছে। সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা সব সময় বিনিময়হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার কথা বলে থাকি। তবে বাংলাদেশকে এখনই পুরো বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি তেমন না। স্বল্প মেয়াদে বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করার একটা ভালো সময় যাচ্ছে। কেননা, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে। আগে নিয়মিতভাবে যা কমছিল। আবার ব্যাংক এবং খোলাবাজারে ডলারের দরে ব্যবধান অনেক কম। এ সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ব্যাপক বাড়ছে। দেশের মূল্যস্ফীতিও কমছে। অবশ্য জিডিপির তুলনায় এখনও মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আগামীতে এটা ৫ থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। আর নীতি সুদহার বাড়ানো–কমানোর বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে। এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর শর্তের বিষয়ে মিশনপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের কর–জিডিপি অনুপাতের ব্যবধান অনেক বেশি। জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আয় দীর্ঘদিন ধরে একই থাকছে। কখনো–কখনো কমে যাচ্ছে। এই অবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের করছাড় রয়েছে। আবার ভিন্ন–ভিন্ন করহার রয়েছে। এসব বিষয়ে সংস্কার আনতে হবে।
খেলাপি ঋণের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আদায় ও তদারকি ব্যবস্থা জোরদারের মাধ্যমে এসব পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। এছাড়া পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
আইএমএফের সঙ্গে কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে সংস্থাটি থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। চলমান ঋণ কর্মসূচি শেষ হবে ২০২৬ সালে। এ সময়ের মধ্যে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি ব্যাংকের ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার শর্ত রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইএমএফ আইএমএফ র অন প ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।