বিয়ে হয়ে গেল কলকাতার বিজেপির দিলীপ ঘোষের
Published: 19th, April 2025 GMT
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বিয়ে সারলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিজেপির সাবেক সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আজ শনিবার ৬১ বছরে পা দিলেন এই নেতা। বিয়ে করলেন দলেরই এক নারী নেত্রী রিঙ্কু মজুমদারকে। ২০২১–এ দিলীপ ঘোষের সঙ্গে রিঙ্কুর পরিচয়, ২০২৫–এ বিয়ে।
রিঙ্কুর বাড়ি কলকাতার সল্টলেকের নিউটাউনেই। আর দিলীপ ঘোষের আসল বাড়ি ঝাড়গ্রামে থাকলেও তিনি এখন থাকেন কলকাতার সল্টলেকের নিউটাউনের আবাসিক এলাকায়। দিলীপের মা থাকেন গ্রামের বাড়িতে। ৮৫ বছর বয়সী মা অনেকটা একাই গ্রামে থাকতেন। বিয়ের জন্য সপ্তাহখানেক আগে নিউটাউনের ছেলের বাড়িতে এসেছেন, বিয়ে দিয়েছেন।
জানা গেছে, মায়ের পীড়াপীড়িতে দিলীপ ঘোষ রাজি হন বিয়েতে। রাস্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএসের দীক্ষা নেওয়া দিলীপ ঘোষ সংগঠনের রীতি মেনে বিয়ে করেননি এত দিন।
রিঙ্কু আগে বিয়ে করেছিলেন, তবে অনেক দিন আগেই তাঁর ডিভোর্স হয়ে গেছে। তাঁর এক ছেলে রয়েছে সৃঞ্জয় নামে। ছেলে তাঁর মায়ের বিয়েতে সায় দিয়েছেন। তবে বিয়েতে আসতে পারেননি। এখন কাজ করছেন কলকাতার সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের তথ্যপ্রযুক্তি এলাকায়। সৃঞ্জয় বলেছেন, দিলীপ ঘোষকে তিনি বাবা বলেই ডাকবেন।
একেবারে হিন্দু শাস্ত্রমতে বিয়ে করলেন দিলীপ ঘোষ ও রিঙ্কু মজুমদার। ব্যতিক্রম ছিল শুধু একটি। সাধারণত হিন্দু মেয়েদের বিয়ে হয় তাঁদের বাপের বাড়িতে। এ ক্ষেত্রে রিঙ্কুর বিয়ে হয়েছে পাত্র দিলীপ ঘোষের সল্টলেকের বাড়িতে। আগেই রিঙ্কু নিউটাউনের একটি পার্লারে গিয়ে সাজসজ্জা সেরে নববধূর বেশে চলে আসেন দিলীপ ঘোষের বাড়িতে। পরেন হলুদ-সবুজ মিনাখচিত লাল বেনারসি, গলায় সোনার চেইন, কপালে টিকলি, কানে লম্বা দুল, নাকে নথ, মাথায় শোলার মুকুট ও কপালে ছোট টিপ। আর দিলীপ ঘোষ পরেন সাদা ধুতি পাঞ্জাবি, গলায় গেরুয়া উত্তরীয় আর মাথায় শোলার টোপর। আর দুজনের গলায় ছিল লাল গোলাপসহ রজনীগন্ধার বিয়ের মালা। হিন্দু শাস্ত্রমতে দিলীপ–রিঙ্কুর বিয়ে সম্পন্ন হয়।
বিয়ে হয়েছে একেবারে অনাড়ম্বরভাবে। দিলীপ ঘোষের নিকটতম কিছু আত্মীয় আর দলের দু–চারজন নেতার উপস্থিতিতে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। জানা গেছে, দলের কর্মীদের চাপে দিলীপ ঘোষ বিবাহোত্তর এক অনুষ্ঠান করবেন। এই বিয়েতে শুভেচ্ছা জানাতে দিলীপ ঘোষের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সাবেক সভাপতি রাহুল সিনহা, শমিক ভট্টাচার্য, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সুনীল বনশল, মঙ্গল পান্ডে, অমিতাভ চক্রবর্তী, শতীশ ঢোল প্রমুখ নেতারা।
বিয়ের পর দিলীপ ঘোষ ও রিঙ্কু মজুমদার.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কলক ত র
এছাড়াও পড়ুন:
জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত
লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা।
জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন।
আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো।
আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।
ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক।
আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’
উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।
ঢাকা/লিটন/টিপু