গাছ কেটে অপরিকল্পিত উন্নয়নের প্রতিবাদে জাবিতে মানববন্ধন
Published: 20th, April 2025 GMT
গাছ কেটে ভবন নির্মাণ ও পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে দুই দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন।
রবিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মুরাদ চত্বরে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
তাদের দাবিগুলো হলো— মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া অপরিকল্পিত বৃক্ষ নিধন ও যত্রতত্র ভবন নির্মাণ বন্ধ করতে হবে এবং অবিলম্বে লেক খনন করে ক্যাম্পাসের প্রাণবৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে।
আরো পড়ুন:
জাবিতে গবেষণাবিষয়ক কর্মশালা
জাবিতে ৫ দিনব্যাপী ইসলামী বইমেলা শুরু
মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বলেন, “আমরা স্পষ্ট বলেছি, মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া জাহাঙ্গীরনগরে কোনো ভবন নির্মাণ হবে না। বিগত আওয়ামী প্রশাসন আন্দোলনকারীদের কথা তোয়াক্কা না করে চালিয়ে গেছে ‘শপিং লিস্ট উন্নয়ন’। সবুজ জাহাঙ্গীরনগর এখন অধিকাংশেই কংক্রিটের জঙ্গল। ১৪৮৫ কোটি টাকার লুটপাটে ক্যাম্পাসের প্রাণ-প্রকৃতি যেমন মরেছে, তেমন তৈরি হয়েছে নিম্নমানের ভবন। এগুলো শিক্ষার্থীদের কোনো কাজে তো লাগেইনি, বরং নষ্ট করেছে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা। লেকচার থিয়েটার হল নির্মাণের পরেও কীসের এত ভবনের প্রয়োজন?”
তিনি বলেন, “আওয়ামী উন্নয়ন দর্শন অনুসরণ করেই নতুন প্রশাসন আজ আবারো অপরিকল্পিতভাবে গাছ কাটতে উদ্যত। দায়িত্ব গ্রহণের এত মাস পরেও মাস্টারপ্ল্যানের টেন্ডার আহ্বান করতে প্রশাসন ব্যর্থ কেন? কার কথায়, কার নির্দেশে আর কার স্বার্থ হাসিল করতে আবারো গাছ কাটার উদ্যোগ? এই প্রশ্ন আমরা করতে চাই।”
জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলনের সংগঠক ফারিয়া জামান নিকি বলেন, “সিএসির বিল্ডিং এর সামনে ভবন হলে প্রায় অর্ধশত গাছ কাটা পরবে। কিন্তু স্থান বিবেচনায় এ জায়গাটি ক্যাম্পাসের প্রাণীগুলোর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশের রাস্তাটা দিয়েই বিভিন্ন প্রাণী যেমন শেয়াল, গুইসাপ বটতলার দিকে যায় এবং সেখান থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে।"
তিনি বলেন, “ক্যাম্পাসে ঝোঁপ নিধন আর অপ্রয়োজনীয় ভবনের কারণে ইতোমধ্যে শেয়ালরা লোকালয়ে আসা শুরু করেছে। এ অবস্থায় এখানে যদি ভবন হয়, নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ক্যাম্পাসের এ অংশের সঙ্গে ওই অংশের প্রাণীদের যে যোগাযোগের রাস্তা,খাদ্য সংগ্রহ সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ হ ঙ গ রনগর
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।