ঠিকাদারকে বালু-পাথর সাপ্লাই দেওয়া নিয়ে দুপক্ষে সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ১৮
Published: 21st, April 2025 GMT
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ও ব্লক নির্মাণের ঠিকাদারকে বালু-পাথর সাপ্লাই দেওয়া নিয়ে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৩ পুলিশ সদস্যসহ বিএনপির প্রায় ১৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
গতকাল রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ সংঘর্ষ হয়। এ দিকে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সুজন নামের এক যুবককে দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে বিএনপির একটি পক্ষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারার উপকূলের পারকি সমুদ্র সৈকত এলাকায় ১৯৬ কোটি টাকায় ২ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও ব্লক নির্মাণের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারকে ব্লক তৈরিতে পাথর, বালিসহ অন্যান্য সামগ্রী সাপ্লাই দেওয়া নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাত ৮টার দিকে উপজেলার সিইউএফএল বাজারে উপজেলা বিএনপির সদস্য আব্দুল গফুরের ওপর হামলা চালানো হয়। এবং তার গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরবর্তীতে তার অনুসারীরা এ হামলার ঘটনার প্রতিবাদে শোডাউন দেন। এবং হামলা ও বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় আনোয়ারা থানায় অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী। থানা থেকে ফেরার পথে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বিএনপির অপর পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ২টি প্রাইভেট কার ভাঙচুর ও ২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৩ পুলিশ সদস্যসহ ১৮ জন আহত হন।
থানা সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষের সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ।
আহতরা হলেন- পুলিশ সদস্য মো.
উপজেলা বিএনপির সদস্য আবদুল গফুর বলেন, ‘আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক নির্মাণে সামগ্রী সাপ্লাইয়ের কাজ পাই। তবে বিএনপির ফোরকান এবং সাদেক আমার কাজে বাঁধা দেন। তারা আমার কাছে চাঁদাও দাবি করেন। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করি। এ ঘটনার জেরে নুরুল কবিরের নেতৃত্বে সিইউএফএল ফাঁড়ির সামনে আমার ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় হামলাকারীরা টাকাও ছিনিয়ে নেন। তৎক্ষণাৎ স্থানীয়রা জড়ো হয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়ে ফেরার পথে আমি ও আমাদের লোকজনের ওপর আবারও হামলা চালানো হয়। তখন আমার সঙ্গে থাকা ইলিয়াস, সুজন ও মোতালেবকে ধরে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। পরবর্তীতে মোতালেবকে আহত অবস্থায় ছেড়ে দিলেও ইলিয়াস এবং আমার জামাতা সুজনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।’
জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি এলাকার বাইরে, শুনেছি গত রাতে আব্দুল গফুর কিছু বহিরাগত এবং আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে মোটরসাইকেল, কারসহ বিভিন্ন গাড়িতে আনোয়ারায় শোডাউন দিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। এ সময় স্থানীয়রা ও বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করেন।’
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, ‘বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ২৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ স ঘর ষ আহত প ল শ সদস য ম হ ম মদ এ ঘটন য় ব এনপ র স ঘর ষ আবদ ল র ঘটন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।