‘জাতীয় দাবিদাওয়া নিষ্পত্তি সংস্থা’ যে কারণে দরকার
Published: 21st, April 2025 GMT
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসানের একটি লেখা ‘কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের নামে এ কোন রাজনীতি’ পড়তে গিয়ে থমকে গেলাম। আমাদের শিক্ষাঙ্গনে যে নৈরাজ্য চলছে এবং যেসব নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, তার সঙ্গে লেখাপড়ার মানের উন্নতির কোনো সম্পর্ক নেই। সব আন্দোলন আনুষঙ্গিক বিষয়ে। এসব নিয়ে ক্লাস বয়কট হচ্ছে, রাস্তাঘাট বন্ধ হচ্ছে, হানাহানি–মারামারি হচ্ছে—সবই যেন নিয়মমাফিক ঘটছে।
কিন্তু এগুলোর জন্য চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কারা? রাস্তা বন্ধ—পথচারী, গাড়িঘোড়া অন্য পথে যাবে; ভিসি চাকরি হারাবেন—আরেকটা চাকরি খুঁজে নেবেন; শিক্ষাঙ্গন কয়েক মাস বন্ধ থাকবে—সরকারি টাকাকড়ির আমদানি ঠিকমতো চলবে, সবাই বেতন পাবেন।
আসল ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা এবং অবশ্যই আমাদের জাতি। ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষাদীক্ষা ও আগামী দিনের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবেন, মা–বাবাকে কষ্টের উপার্জন দিয়ে সন্তানকে হয়তো আরও এক সেমিস্টার বেশি পড়াতে হবে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই জাতি, যে প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে অঢেল টাকা ঢালছে আশা নিয়ে—তরুণেরা সুশিক্ষিত হয়ে দেশের হাল ধরবে।
আমাদের দেশে স্কুল হতে চায় কলেজ, কলেজ হতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় আর বিশ্ববিদ্যালয় হতে চায় স্বায়ত্তশাসন। কেউ নিজেকে নিয়ে খুশি নয়। এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতি চায় না, আরেকটা ক্লাসে তালা মারছে রাজনীতি করতে। যে যে কাজে আছেন, সবাই প্রমোশন চাচ্ছেন। দাবিদাওয়ার আগে কেউ ভাবেন না দাবিগুলো কতটুকু ন্যায্য বা তাঁদের দাবি মেটাতে গিয়ে অন্যদের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে কি না কিংবা তাঁরা যে দাবি করেছেন, তার যোগ্যতা অর্জন করেছেন কি না।
এই তো কদিন আগে ঢাকার একটা কলেজ ইউনিভার্সিটি হওয়ার জন্য তুমুল আন্দোলন করল, বনানী-মহাখালীর রাস্তা অবরুদ্ধ দিনের পর দিন। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি কলেজের মানের রেটিংয়ে তারা পড়ে রয়েছে অনেক পেছনে। নটর ডেম কলেজ, আদমজী কলেজ যদি কলেজ নাম নিয়ে থাকতে পারে, তাদের আপত্তি কেন? তাদের বলা যেত, তোমরা র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে উঠে এসো, তারপর বিশ্ববিদ্যালয় হবে। কিন্তু কার কথা কে শুনবে?
আমাদের ঘরে দাবি, বাইরে দাবি, শুধু দাবি আর দাবি। বাসায় গিন্নির দাবি—কেনাকাটার টাকা বাড়াতে হবে, অফিস সহকর্মীর দাবি—সিনিয়রকে ডিঙিয়ে প্রমোশন দিতে হবে। ব্যক্তিগত দাবিগুলো নাহয় আলাপ–আলোচনা করে মিটমাট করা যাবে। কিন্তু গ্রুপ দাবি? সেগুলো তো ‘মব’ হয়ে তেড়ে আসে, সবকিছু বন্ধ করে দিচ্ছে। এগুলোকে কীভাবে সুশৃঙ্খল করা যাবে? সব দাবি যে অযৌক্তিক, তা নয়, অনেক দাবিদাওয়া আছে খুব ন্যায়সংগত। কিন্তু অসংগত, অর্ধসংগত দাবিদাওয়ার ভিড়ে ন্যায়সংগত দাবিগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যায় পুরো দেশ অচল হওয়ার আগে দাবিদাওযা নিয়ে সরকারকে নতুন কিছু ভাবতে হবে।
তাই আমি দাবি করছি, ‘জাতীয় দাবিদাওয়া নিষ্পত্তি সংস্থা’ গঠন করতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-আধা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যাঁদের দাবিদাওয়া আছে, তাঁরা রাস্তায় নামার আগে বা কক্ষে তালা দেওয়ার আগে তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে এই সংস্থায় আসবেন এবং দাবি নিবন্ধন করবেন।
আরও পড়ুনদাবি মানেই কি সড়ক–রেল অবরোধ?০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এই সংস্থা দাবিগুলোকে যাচাই–বাছাই করে যেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা যাবে অন্যায্য বা অগ্রহণযোগ্য, সেগুলোর উত্থাপকদের কাউন্সেলিং বা যুক্তি দিয়ে বোঝাবেন। যেমন বেতন বাড়াতে হবে ২০০ শতাংশ—এ দাবি মানলে রাষ্ট্র দেউলিয়া হয়ে যাবে। যেগুলো ন্যায্য দাবি সেগুলো নিয়ে নিষ্পত্তি সংস্থা উত্থাপকদের পক্ষ হয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে তদবির করবেন। আইন বিভাগ আইনগত দিক খতিয়ে দেখবে। আবার যেগুলোর মূল্যায়ন সময়সাপেক্ষ, সেগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করবে। প্রতিটা দাবির জন্য তিন থেকে ছয় মাস সময় নির্ধারণ করা হবে।
এভাবে সংস্থা দাবিকারীদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে দাবিগুলোর একটা সুবিবেচিত সুরাহার আশা জাগাতে পারে। যেকোনো ক্ষোভ ও অস্থিরতার প্রাথমিক সময়টা যদি আগেভাগে কিছুটা সামাল দেওয়া যায়, পরবর্তী প্রতিক্রিয়া আরও যুক্তিসংগত হবে। দাবিদাওয়া সংস্থার বাইরে গিয়ে কোনো দাবি মেটানোর বা দাবি নিয়ে আন্দোলন করার সুযোগ থাকবে না। সংস্থার নিষ্পত্তি পছন্দ না হলে দাবিকারীরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। স্বাধীন বিচারব্যাবস্থায় সবারই সমান অধিকার।
জাতীয় দাবিদাওয়া নিষ্পত্তি সংস্থা গতানুগতিক অন্য সব সংস্থার মতো হবে না। এর সঙ্গে জড়িত থাকবেন দেশের বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষেরা, যেমন বিচারকাজে আমাদের দেশে এককালে জুড়ি প্রথা ছিল। প্রয়োজনে রাজনীতিবিদদের জড়িত করা যেতে পারে, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বিশৃঙ্খল দাবিদাওয়ার সংক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করতে। এ সংস্থা সরকারের অন্যান্য বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে সব ধরনের দাবিদাওয়া নিয়ে কাজ করবে।জাতীয় দাবিদাওয়া নিষ্পত্তি সংস্থা গতানুগতিক অন্য সব সংস্থার মতো হবে না। এর সঙ্গে জড়িত থাকবেন দেশের বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষেরা, যেমন বিচারকাজে আমাদের দেশে এককালে জুড়ি প্রথা ছিল। প্রয়োজনে রাজনীতিবিদদের জড়িত করা যেতে পারে, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বিশৃঙ্খল দাবিদাওয়ার সংক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করতে। এ সংস্থা সরকারের অন্যান্য বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে সব ধরনের দাবিদাওয়া নিয়ে কাজ করবে।
এ সংস্থার প্রধান হবেন একজন ন্যায়পাল। তাঁর অধীন থাকবে—১.
একজন ন্যায়পাল নিয়োগ করে একটা অফিসে এক্ষুনি শুরু করে দেওয়া যায় এই সংস্থা। ন্যায়পালের অফিসসহ চার বিভাগে দুজন করে আটজন লোক দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। প্রচার করে বলে দেওয়া হোক, যেকোনো দাবি ছোট বা বড়, ন্যায্য বা অন্যায্য প্রথমে এ সংস্থায় জমা দিতে হবে, নতুবা কোনো দাবি কোনোভাবেই বিবেচনা করা হবে না। এ সংস্থা শুধু সংঘবদ্ধ দাবিদাওয়া নিয়ে কাজ করবে। ব্যক্তিগত দাবির জন্য জনগণকে মন্ত্রণালয় বা থানায় যেতে হবে।
‘দাবিদাওয়া নিষ্পত্তি সংস্থা’ সরকারের অন্যান্য সংস্থার মতো হবে না। এরা বসে বসে ফাইল আদান–প্রদানকারী লোক নিয়ে গঠিত হবে না। এরা হবে সংকট ব্যবস্থাপনা টিম, যারা জনগণকে সম্পৃক্ত করে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে যেকোনো সংকট তুঙ্গে ওঠার আগে তার সমাধানের চেষ্টা করবে।
সাধারণত দুই ধরনের দাবি নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়:
১. কর্মযোগ্য দাবি: এসব দাবি নিয়ে সরকার কিছু একটা করতে পারে। যেমন সরকারের চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা ৩৫ বছর করা, শহরের ভেতর ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে অনুমতি দেওয়া—এ রকমের। কিছু দাবি অনেক সময় সরকার অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নেয় সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে। আবার এটাও মনে রাখতে হবে, কোনো অনভিপ্রেত দাবি সরকারের মেনে নেওয়ার অর্থ, নতুন দাবির ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। বয়সের দাবি ৩২ বছর মেনে নিলে ৩৮ বছরের দাবি আসতে কতক্ষণ?
২. অকর্মযোগ্য দাবি: সরকার কিছুই করতে পারছে না, এমন দাবি এগুলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন ছাত্রের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু নিয়ে তাঁর সহকর্মীরা ব্যথিত ও ক্রুদ্ধ হন এবং অনেক ক্ষেত্রে তুমুল আন্দোলন করেন। ফলে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় দিনের পর দিন। সহপাঠীকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। শোকসন্তপ্ত ছাত্রদের বোঝাতে এবং বুঝতে সাহায্য করতে হবে কাউন্সেলিং করে। বিদেশে মানুষকে শান্ত রাখার জন্য কাউসেলিংকে একটা উপযুক্ত হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করা হয়। আমাদের দেশে কেন করা যাবে না? যেকোনো শোক-ক্রোধ ও হাঙ্গামা প্রথমে শুরু হয় খুব অল্পসংখ্যক লোক থেকে। তাঁদের শান্ত করতে পারলে বড় সংকট এড়ানো যেতে পারে।
দাবি যে কখন কোত্থেকে আসবে, সেটা অনুমান করে লাভ নেই। দাবি আসতে পারে ছাত্রদের থেকে, আবার ঢাকা কলেজের দাবির সঙ্গে সিটি কলেজ বা আদর্শ কলেজের দাবির সংঘর্ষ থাকতে পারে। দাবি আসতে পারে পোশাককর্মীদের থেকে, রিকশাচালকদের কাছ থেকে বা বাসমালিক সমিতি থেকে। তবে আমাদের দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ যাঁরা কৃষক, তাঁরা কোনো দাবি জানাবে না অথবা গ্রামের মানুষ তাঁদেরও তেমন কোনো দাবি নেই।
দাবি আসতে পারে আমাদের রাজনীতিবিদদের থেকে, তাঁরা অধৈর্য হলে আরও বিপদ বাড়তে পারে। তাঁরাও মিছিল, হরতাল করে দাবি জানাতে পারেন। তবে রাজনৈতিক দাবিগুলো রাজনৈতিকভাবে মীমাংসা করতে হবে।
মানুষের আকাঙ্ক্ষা থেকেই দাবিদাওয়ার সৃষ্টি হয়। এ দেশে আমরা যদি আমাদের দাবিগুলো একটা সুশৃঙ্খল পদ্ধতির মাধ্যমে মীমাংসা করতে পারি, আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে।
আমরা যদি সুশৃঙ্খলভাবে আমাদের বড় বড় জাতীয় আকাঙ্ক্ষাগুলোকে ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করতে পারি, তাহলে জনগোষ্ঠীর ছোট ছোট আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণেও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগণকেও বোঝাতে এবং বুঝতে হবে—কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক, কোনটা স্বাধীনতা কোনটা অপস্বাধীনতা এবং কোনটা অধিকার আর কোনটা অনধিকার।
সালেহ উদ্দিন আহমদ শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
ই–মেইল: [email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র দ শ ক জ করব সরক র র গত দ ব র জন য র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
গত জুনে সংঘাতের সময় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে উপর্যুপরি আঘাত হানছিল। তা প্রতিরোধ করতে গিয়ে দেশটির ভান্ডারে থাকা টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্সে (থাড) টান পড়েছিল। সংঘর্ষ চলাকালে সৌদি আরবের হাতে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অন্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তাদের ছিল। তাই সংকটকালে ইসরায়েলকে কিছু আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিতে সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রিয়াদ তাতে রাজি হয়নি।
অনুরোধের বিষয়টি জানেন, এমন দুজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুজনের একজন বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালে আমরা সবাইকে (মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে মার্কিন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল) তাদের সবাইকে (ইসরায়েলকে কিছু ধার দেওয়া) অনুরোধ করেছিলাম। যখন কাজ হলো না, তখন আমরা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। শুধু কোনো একটি দেশকে অনুরোধ করা হয়েছিল, তা কিন্তু নয়।’
কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলে আসছিলেন, ইরান শুধু ইসরায়েল নয়, সৌদি আরবের জন্যও হুমকি।
তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় এই দেশের হাতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আগেই নিজেদের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছিল। কিছুদিন আগেও এসব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছিল ইয়েমেনের হুতিরা।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যখন সংঘর্ষ চলছিল, ঠিক তখনই নিজেদের কেনা থাড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার প্রথম ব্যাটারিটি গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সৌদি আরব। ব্যাটারিটি নিজেদের সার্বভৌম তহবিল দিয়েই কিনেছিল রিয়াদ। ঘটনা হলো, ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধবিরতির মাত্র ৯ দিন পর ৩ জুলাই সৌদি সেনাবাহিনী এই ব্যাটারি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে।
ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের একপর্যায়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মজুত ফুরিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ ছিল। কারণ, তখন ইসরায়েলের বিভিন্ন নিশানায় ব্যাপক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছিল ইরান।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় মিডল ইস্ট আই-ই প্রথম জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ইসরায়েলের নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অ্যারো দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। পরে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও দ্য গার্ডিয়ান নিজেদের প্রতিবেদনে মিডল ইস্ট আইয়ের তথ্য নিশ্চিত করেছিল।
চলতি মাসে এক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে মাত্র ২৫ শতাংশ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অবশিষ্ট ছিল, যা পেন্টাগনের পরিকল্পনামাফিক বিশ্বব্যাপী দেশটির সামরিক অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় মজুতের তুলনায় অনেক কম।
এক মার্কিন কর্মকর্তা ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে কী পরিমাণ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল, সেই গোপন সংখ্যা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন।
ইরানের হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল-৩ (এসএম-৩) ছুড়েছিল। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল দেশটির রণতরি আরলি বার্ক ক্লাসের গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার থেকে।
ইসরায়েলের তিন স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তো ছিলই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শক্তি। তা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির আগপর্যন্ত ইসরায়েলি শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছিল ইরান।
যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যেভাবে বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, সেটার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছে। তবে সংঘাত দীর্ঘ সময় ধরে চলায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দুর্বল দিকটি বুঝে গিয়েছিল ইরান। তাই তারা ইসরায়েলে বেশি পরিমাণে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পেরেছিল।
মিচেল ইনস্টিটিউট ফর অ্যারোস্পেস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ডগলাস বারকি বলেন, দুর্বলতাটা হলো, যুদ্ধের একটা পর্যায়ে আপনার প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। আমাদের হাতে যে পরিমাণ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আছে, সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে তৈরি করার সক্ষমতা সীমিত।
গত শুক্রবার দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ঘাটতির এই পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তা সৌদি আরবের কেনা থাড প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইসরায়েলে পাঠানোর বিষয়েও রিয়াদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সৌজন্য অনুরোধ ও চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরই সৌদি আরবের সঙ্গে এ বিষয়ে গভীর আলোচনা শুরু হয়েছিল।
উভয় মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে আরও বলেছেন, ইসরায়েলকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও অনুরোধ করেছিল। তবে দেশটির কাছ থেকে ইসরায়েল আদৌ কোনো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পেয়েছিল কি না, এই দুই কর্মকর্তার কেউ তা নিশ্চিত করতে রাজি হননি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আমিরাতই প্রথম দেশ, যারা প্রথম থাড কিনেছিল এবং ব্যবহার করেছিল। দেশটি থাড কিনেছিল ২০১৬ সালে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান যেভাবে ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে হামলা চালাতে পেরেছে, তা উপসাগরীয় অঞ্চলের তুলনামূলক কম সুরক্ষিত দেশগুলোকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।