আবু জামিল মো. সেলিম। ইংরেজির প্রভাষক। তাঁর বেতন স্কেল ২২ হাজার টাকা। ঈদে বোনাস পান ৫ হাজার ৫০০ টাকা। রাজধানীর শ্যামপুরের এ কে হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করেন তিনি।
তাঁর মতো লাখো এমপিওভুক্ত শিক্ষক প্রতি ঈদে মূল বেতনের এক-চতুর্থাংশ অর্থ উৎসব ভাতা পান। শিক্ষকরা লজ্জায় স্বল্প বোনাস পাওয়ার কথা কাউকে বলতে পারেন না। তারা জানান, একে তো নামমাত্র বোনাস, তাও পেতে অনেক সময় ঈদ পার হয়ে যায়।

রাজধানীর মিরপুর সিদ্ধান্ত হাই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী (দপ্তরি) সুলতান আহমেদ। তাঁর বেতন স্কেল ৮ হাজার ৫০০ টাকা। তিনি ঈদে বোনাস পান ৪ হাজার ২০০ টাকা। এই কর্মচারী বলেন, ‘দুর্মূল্যের বাজারে পরিবার নিয়ে এই টাকায় কীভাবে উৎসব করা সম্ভব?’

সারাদেশের পৌনে পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য রয়েছে সুখবর। তাদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ঈদুল আজহার আগে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। গতকাল সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য মিলেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক-১) সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী সমকালকে বলেন, উৎসব ভাতা বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কতটুকু বাড়বে, সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব না।

কবে নাগাদ উৎসব ভাতা বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি চলতি মাসের (এপ্রিল) মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করার। চলতি মাসে না হলে আগামী মাসের প্রথমার্ধে প্রজ্ঞাপন হতে পারে।’
জানা যায়, আগে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা উৎসব ভাতা পেতেন না। ২০০৩ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ড.

এম ওসমান ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বছরের অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হয়। তখন সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষকদের দেওয়া হবে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ। দুই ঈদে (অথবা পূজায়) ২৫ শতাংশ করে ভাগ করে তা দেওয়া হবে। সেই থেকে প্রতি ঈদে শিক্ষকরা ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পান। কর্মচারীদের জন্য ওই সভায় শতভাগ বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দুই ঈদে ৫০ শতাংশ করে তা ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষকরা জানান, ’৯৬ সাল পর্যন্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মূল বেতনের ৮০ ভাগ সরকার থেকে দেওয়া হতো। আওয়ামী লীগ সরকার তা ৯০ শতাংশে উন্নীত করে। ২০০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকার ৯৫ শতাংশ করে। পরের বাজেটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তা শতভাগে নিয়ে যায়। দেখা গেছে, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন স্কেল ধাপে ধাপে শতভাগে উন্নীত হলেও উৎসব ভাতা বাড়েনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ বছরের ৫ মার্চ উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শিক্ষকদের উৎসব, বিনোদন, বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা বাড়ানোর একটি প্রস্তাবে সই করেন। এরপর এ নিয়ে কাজ শুরু করে মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা থেকে জানায়, গত ঈদুল ফিতরে সারাদেশের প্রায় ৩০ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা মিলে প্রায় ২৪০ কোটি টাকার উৎসব ভাতা দেওয়া হয়। এর মধ্যে শুধু স্কুল ও কলেজ ২০ হাজার ৫৬৭টি। এর সঙ্গে মার্চ/২০২৫ মাসের বেতন হিসেবে দেওয়া হয় ৮৮৩ কোটি ৫১ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা। 
জানা গেছে, ঈদ বোনাস বর্তমানের চেয়ে অন্তত ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ আর কর্মচারীরা ৭৫ শতাংশ বোনাস পেতে পারেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভুঁইয়া সমকালকে বলেন, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক চাইলে সরকারকে অবশ্যই শতভাগ উৎসব ভাতা দিতে হবে। শিক্ষকদের বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। এ কারণে আমাদের মূল দাবি, শিক্ষা জাতীয়করণ।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র উৎসব ভ ত ব সরক র শ ক ষকর র উৎসব মন ত র শতভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।

কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।

এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।

অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।

একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।

যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনে দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু আজ, এবারও নেই মেলার আয়োজন
  • শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
  • ‘মবের’ পিটুনিতে নিহত রূপলাল দাসের মেয়ের বিয়ে আজ
  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ডাইনির সাজে শাবনূর!
  • প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব 
  • ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
  • টগি ফান ওয়ার্ল্ডে উদযাপিত হলো হ্যালোইন উৎসব
  • উদ্ভাবন–আনন্দে বিজ্ঞান উৎসব
  • নবীনদের নতুন চিন্তার ঝলক