ইউক্রেনে ৯ মাসের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী রুশ হামলার পর এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই হামলায় ‘মোটেও খুশি নন’ জানিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘থামতে’ বলেছেন তিনি।
রাশিয়া বুধবার রাতভর অন্তত ২১৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে। হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ। এসব হামলায় কমপক্ষে ৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবারের হামলায় আরও অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬০ জনের বেশি। অনেকে ধসে পড়া ভবনের চাপা পড়ে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রাণঘাতী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র সময় গত বুধবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমি কিয়েভে রাশিয়ার হামলায় মোটেও খুশি নই। এটি অপ্রয়োজনীয় ও খুব খারাপ সময়ে হয়েছে। ভ্লাদিমির (পুতিন), আপনি থামুন। প্রতি সপ্তাহে পাঁচ হাজার করে সৈন্য মারা যাচ্ছে। আসুন, শান্তিচুক্তি সম্পন্ন করি!’
ইউক্রেনের জরুরি সেবা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, কিয়েভের অন্তত ১৩টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আঘাত হানে। আবাসিক ভবন ও বেসামরিক অবকাঠামো রয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর ইউক্রেনে এটাই সবচেয়ে প্রাণঘাতী রুশ হামলা। গত বছরের জুলাইয়ে ইউক্রেনের একটি হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকায় রুশ বিমান হামলায় ৩৩ জন নিহত হন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘এ হামলার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।’ যুদ্ধবিরতির জন্য কিয়েভকে ছাড় দেওয়ার যে কথা ট্রাম্প বলছেন তার বিরোধিতা করে জেলেনস্কি বলেন, ‘একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতির হলে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে প্রস্তুত আছে ইউক্রেন। আর এটাই তো অনেক বড় একটি ছাড়।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।