প্রত্যাবর্তনে প্রমাণের চ্যালেঞ্জ বিজয়ের
Published: 25th, April 2025 GMT
২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় এনামুল হক বিজয়ের। এরপর গত এক যুগে মাত্র ৫টি টেস্ট খেলেছেন। ১০ ইনিংসে মোট রান মাত্র ১০০। নেই কোনো হাফ সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ইনিংস ২৩ রানের। একজন টপঅর্ডার ব্যাটারের জন্য পরিসংখ্যানটা বড্ড বেমানান।
অবশ্য অনেকের অভিযোগ, পর্যাপ্ত সুযোগ পাননি বিজয়। যে সুযোগগুলো পেয়েছেন তার অধিকাংশ দলের আপৎকালীন সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে। এবারও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের মাঝপথে তাঁকে ডাকা হয়েছে টপ অর্ডারের ব্যর্থতায়। ৩২ বছর বয়সী বিজয় কী পারবেন চ্যালেঞ্জ নিয়ে জাতীয় দলে জায়গাটা পাকা করতে?
বিজয় সর্বশেষ টেস্ট দলে ছিলেন ২০২২ সালের জুনে উইন্ডিজ সফরে। প্রায় ৮ বছর পর একটি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়ে ক্যারিয়ার সেরা ২৩ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন তিনি। ওই টেস্টে অবশ্য ওপেন করার সুযোগ পাননি, চারে খেলেছিলেন। এবার বিজয় নজর কেড়েছেন মূলত প্রিমিয়ার লিগে দারুণ ব্যাটিং করে। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে ১৪ ইনিংসে ৪টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিতে ৭৯.
এরমধ্যে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সব ফরম্যাটে সেঞ্চুরির হাফ সেঞ্চুরি করেছেন, গত ম্যাচে সেঞ্চুরি করে সংখ্যাটা ৫১ তে নিয়ে গেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, সাদা বলে পারফর্ম করে কী তিনি লাল বলের ক্রিকেটে সুযোগ পেয়ে গেলেন? অবশ্য ইদানীং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও দারুণ পারফর্ম করেছেন বিজয়।
সর্বশেষ জাতীয় লিগের ৭ ম্যাচের ১৩ ইনিংসে ১ সেঞ্চুরি ও ৬ ফিফটিতে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০০ রান করেছিলেন তিনি। এরপর বিপিএল টি২০তেও ভালো করেছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম টেস্টে বিজয় ডাক পাওয়ায় তাঁর দল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের একটু ক্ষতি হয়ে গেল। ২৬ এপ্রিল মোহামেডানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অধিনায়ককে পাবে না তারা।
ঘরোয়া ক্রিকেটে লম্বা সময় ধরে বিজয় ছন্দে আছেন বলে সুযোগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লীপু। সে সঙ্গে সিলেট টেস্ট ওপেনারদের ব্যর্থতাও বড় কারণ, ‘প্রথম টেস্টে (ওপেনাররা) ব্যর্থ হওয়ায় একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটে সব ফরম্যাটে বিজয় ছন্দে আছে। আমরা তো এমনিতেই ফর্মের সংকটে ভুগি। ফর্মে থাকা কাউকে সেভাবে পাই না।’
তবে তিন বছর আগেও ঘরোয়া ক্রিকেটে ফর্মে ছিলেন বলে আবার টেস্ট দলে ডাক পেয়েছিলেন। মাঠে নেমে তেমন কিছু করতে পারেননি। এবার বিজয়কে অন্য রকম মনে হচ্ছে প্রধান নির্বাচকের, ‘‘বিজয় এখন খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলছে। টেস্ট ওপেনারদের মাঝে যে টেম্পারামেন্ট দেখতে চাই, সেটি তার মাঝে দেখেছি। এই সিরিজ শেষে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষেও তাকে খেলাব।’’ প্রধান নির্বাচকের কথাতে স্পষ্ট যে বিজয়কে লম্বা সময়ের জন্য চিন্তা করছেন তারা।
তিন বছর পর আবার টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়া বিজয় অবশ্য খুব বেশি কিছু বললেন না, ‘জাতীয় দলে ভালো খেলতে চাই। এজন্য সবার দোয়া চাই।’ তাঁকে যেজন্য সিরিজের মাঝপথে দলে নেওয়া হয়েছে, সে কাজটা করতে চান তিনি, ‘দলের প্রয়োজন যেন মেটাতে পারি, দেশকে যেন জেতাতে পারি, এটাই এবার চাওয়া।’ বিজয়ও এবার অনেক পরিণত।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবশ য
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।