তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার জন্য আজ শুক্রবার রাশিয়ায় গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে  তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধ বন্ধের তৎপরতা এরই মধ্যে বেশ অগ্রগতি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর থেকে ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। ইতিমধ্যে পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ তিনটি বৈঠক করেছেন স্টিভ উইটকফ। তাঁর চলতি সফরের আগে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হন। ওই হামলার সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘ভ্লাদিমির, থামুন!’

যদিও যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় বড় অগ্রগতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, ‘আগামী কয়েক দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। এখন বিভিন্ন বৈঠক চলছে। আমরা একটি চুক্তি করতে যাচ্ছি। আমি মনে করি, আমরা খুবই কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছি।’

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভও। বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তবে এখনো সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো আরও পরিমার্জন করা প্রয়োজন। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।’

উইটকফের রাশিয়া সফর প্রসঙ্গে লাভরভ বলেন, আলোচনা সঠিক পথে এগোচ্ছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা চলমান থাকবে। আর ট্রাম্পকে নিয়ে তাঁর ভাষ্য—‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র নেতা, যিনি এই পরিস্থিতির মূল কারণটি সমাধানের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।’

‘শান্তির জন্য ছাড় দেওয়া লাগতে পারে’

একটি শান্তিচুক্তির জন্য রাশিয়া ছাড়াও ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল। তবে এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে ইউক্রেনকে কিছু ছাড় দেওয়া লাগতে পারে বলে মনে করেন কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎচকো। আজ বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি শান্তির জন্য নিজেদের ভূখণ্ড রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলেছেন তিনি।

ভিতালি ক্লিৎচকো বলেন, একটি পরিস্থিতি হলো (নিজেদের) ভূখণ্ড (রাশিয়ার কাছে) ছেড়ে দেওয়া। এটি ন্যায্য নয়। তবে শান্তির জন্য, সাময়িক শান্তির জন্য এটি একটি সমাধান হতে পারে। তিনি বলেন, শান্তি অর্জনের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ‘বেদনাদায়ক সমাধান’ মেনে নিতে হতে পারে। যদিও ইউক্রেনের জনগণ কখনো রাশিয়ার দখলদারি মেনে নেবে না।

এদিকে কিয়েভে রাশিয়ার হামলার পর বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর সংক্ষিপ্ত করে ইউক্রেনে ফিরে এসেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। একটি পূর্ণ ও শর্তহীন চুক্তি করতে কিয়েভের পশ্চিমা মিত্র পুতিনের ওপর যথেষ্ট চাপ দিচ্ছেন কি না—সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। যুদ্ধ বন্ধে রাজি না হলে মস্কোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার যে হুঁশিয়ারি ট্রাম্প দিয়েছিলেন, সেদিকে ইঙ্গিত করে জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর শক্তিশালী চাপ বা দেশটির বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে—এমন কিছু দেখছি না আমি।’

মস্কোয় রুশ সামরিক কর্মকর্তা নিহত

মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের সফরের দিনই আজ মস্কোয় গাড়িবোমা বিস্ফোরণে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। রাজধানীর বালাশিখা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম মাশ অ্যান্ড শট। ওই কর্মকর্তার নাম ইয়ারোস্লাভ মোসকালিক। তিনি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের ‘মেইন অপারেশনস ডাইরেক্টটরেটের’ উপপ্রধান ছিলেন।

রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। ওই কর্মকর্তার পরিচয় বা কী ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে তা জানায়নি রুশ সশস্ত্র বাহিনীও। তবে রাশিয়ার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বরাতে দেশটির সংবাদমাধ্যম বাজা জানিয়েছে, একটি গাড়িতে বোমা স্থাপন করা ছিল। ওই সেনা কর্মকর্তা যখন গাড়িটির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন দূর থেকে ওই বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

এর আগে বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেন লক্ষ্য করে অন্তত ৭০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১৪৫টি ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া। এই হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল কিয়েভ। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই হামলায় কিয়েভের এসভিয়াতোশিনস্কি এলাকায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন।

তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা শুধু ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা–সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোয় হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ছিল ‘রকেটের জ্বালানি ও বারুদ’ তৈরির কারখানাও। আর বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, ‘আমরা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তু বা সামরিক বাহিনীর ব্যবহার করা বেসামরিক স্থাপনাগুলোয় হামলা চালিয়েছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ন ত র জন য য দ ধ বন ধ ইউক র ন র কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ