ভ্যাটিকানে বিশ্বের প্রথম লাতিন আমেরিকান পোপ, পোপ ফ্রান্সিসের অন্তিম যাত্রা শনিবার। সকাল ১০টায় সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার সামনের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে হবে এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। চার্চের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেবেন ক্যাথলিক চার্চের কার্ডিনাল কলেজের ডিন জিওভান্নি বাত্তিস্তা রে। 

শেষকৃত্যের শেষে তিনি ‘চূড়ান্ত সমর্পণ প্রার্থনা’ পাঠ করবেন, যার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পোপকে ঈশ্বরের হাতে সমর্পণ করা হবে। এর পর পোপের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রোমের সান্তা মারিয়া মেজিওর ব্যাসিলিকায়, যেখানে তাঁকে সমাহিত করা হবে।

ক্যাথলিক রীতি অনুযায়ী, কোনো পোপের মৃত্যু হলে সাধারণত চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। তবে পোপ ফ্রান্সিস তাঁর জীবদ্দশায় একাধিকবার বলে গেছেন, তিনি চান তাঁর শেষকৃত্য যেন আড়ম্বরপূর্ণ না হয়। তাই তিনি হবেন গত এক শতাব্দীর মধ্যে প্রথম সর্বোচ্চ ক্যাথলিক ধর্মগুরু, যিনি ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার নিচে শায়িত না হয়ে রোমের সান্তা মারিয়া মেজিওর ব্যাসিলিকায় সমাধিস্থ হবেন। 

সমাধিস্থ হওয়ার ক্ষেত্রেও জাঁকজমক এড়িয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। একটি সাধারণ কাঠের কফিনে সমাহিত হতে চেয়েছেন তিনি। যেখানে অতীতের পোপরা সাইপ্রাস, সিসা এবং ওক কাঠের তিন স্তরের কফিনে সমাধিস্থ হতেন।

পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে অংশ নিতে রোমে পৌঁছেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা ও রাজপরিবারের সদস্যরা। ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারের এই অনুষ্ঠানে ১৩০টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ৫০ জন রাষ্ট্রপ্রধান ও ১০ জন রাজা-রানীর উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। এদের মধ্যে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, স্পেন ও বেলজিয়ামের রাজা-রানী, ব্রিটেনের প্রিন্স উইলিয়ামসহ আরও অনেকে।

ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় শুক্রবার রাখা হয়েছিল পোপ ফ্রান্সিসের মৃতদেহ। শোকসন্তপ্ত হাজারো মানুষ সারাদিন ধীরে ধীরে পোপের কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়েছেন। ৮৮ বছর বয়সী পোপ ফ্রান্সিস চলতি বছরের প্রথম দিকে দু’বার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। মৃত্যুর প্রায় এক মাস আগে তিনি হাসপাতাল থেকে ভ্যাটিকানের বাসায় ফেরেন। ইস্টার সানডে উপলক্ষে রোববার সেন্ট পিটার্স স্কয়ারেও হাজির হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরদিন সকালে ভ্যাটিকান তাঁর মৃত্যুর খবর জানায়।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ