রিয়াল ছেড়ে জুনে ব্রাজিলের দায়িত্ব নেবেন আনচেলত্তি
Published: 28th, April 2025 GMT
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গত মার্চে আর্জেন্টিনার কাছে ৪–১ গোলে হারে ব্রাজিল। এরপর ব্রাজিল কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হন দরিভাল জুনিয়র। তখন থেকেই শুরু হয় গুঞ্জন—রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ব্রাজিল দলে দরিভালের জায়গা নেবেন কার্লো আনচেলত্তি। স্বয়ং সিবিএফ সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজ আনচেলত্তিকে নিয়ে আসার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলেও ব্যাপারটা তখন পর্যন্ত গুঞ্জনই ছিল। কিন্তু এ গুঞ্জন শক্ত ভিত পেয়ে যায় গত ১৬ এপ্রিল চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে ফিরতি লেগে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রতিনিধি পাঠানোয়। আর্সেনালের বিপক্ষে হেরে রিয়াল মাদ্রিদও শেষ আট থেকে বাদ পড়ায় অনেকেই তখন দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে নেন।
আরও পড়ুনবার্সেলোনা ও পিএসজি ছাড়া যে কীর্তি গড়ার সুযোগ নেই এবার আর কারও৭ ঘণ্টা আগেগত শনিবার রাতে কোপা দেল রে ফাইনালে সিবিএফ আবারও আনচেলত্তির কাছে প্রতিনিধি পাঠানোয় ব্যাপারটা আর গুঞ্জন থাকেনি। সংবাদমাধ্যমও উঠেপড়ে লাগে ভেতরের খবর বের করতে। এত দিন পর ভেতরের খবরটাই জানিয়ে দিল ‘দ্য অ্যাথলেটিক’। সংবাদমাধ্যমটি আজ নিজেদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রিয়াল ছেড়ে ব্রাজিল জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেবেন আনচেলত্তি। প্রাথমিকভাবে এক বছরের চুক্তিতে ব্রাজিল জাতীয় দলে তাঁর মেয়াদ হবে ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত।
রিয়ালে আনচেলত্তির বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ পর্যন্ত, যা বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। রিয়ালের অনুশীলন গ্রাউন্ডের সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে ‘দ্য অ্যাথলেটিক’কে জানিয়েছেন, ড্রেসিং রুমে খেলোয়াড়দের ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে দিয়েছেন ৬৫ বছর বয়সী আনচেলত্তি।
ইতালিয়ান এই কোচের ক্ষেত্রে যেটা প্রত্যাশা করা হচ্ছে, লা লিগার মৌসুম শেষ করে জুনে ব্রাজিলের দায়িত্ব নেবেন। এর অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ১৪ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া ক্লাব বিশ্বকাপে রিয়াল ডাগ আউটে আনচেলত্তিকে দেখা যাবে না। এখন রিয়ালের বোর্ড ঠিক করবে ক্লাব বিশ্বকাপে রিয়ালের কোচ হিসেবে কাকে বেছে নেওয়া হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য কাউকে নিলে সে দৌড়ে রিয়ালের ফুটবল পরিচালক সান্তিয়াগো সোলারি এগিয়ে। স্থায়ীভাবে নতুন কাউকে নেওয়ার আলোচনায় বায়ার লেভারকুসেন কোচ জাবি আলোনসোর নামই বেশি শোনা যাচ্ছে।
আরও পড়ুনআর্নে স্লট: কিংবদন্তির জায়গা নিলেন এবং নিজেই কিংবদন্তি হয়ে গেলেন১০ ঘণ্টা আগেআনচেলত্তির ছেলে দাভিদ আনচেলত্তি এখন রিয়ালের সহকারী কোচ। তিনি প্রধান কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে চান। তবে এই প্রস্তাব না পেলে কিংবা ব্যাটে-বলে না মিললে দাভিদ আনচেলত্তি তাঁর বাবার অধীনে ব্রাজিল জাতীয় দলের সহকারী কোচের দায়িত্ব নেবেন।
১৯ এপ্রিল ‘দ্য অ্যাথলেটিক’ জানিয়েছিল, রিয়াল ছাড়তে পারেন আনচেলত্তি এবং ব্রাজিল জাতীয় দল হবে তাঁর সম্ভাব্য গন্তব্য। তাঁর জন্য অনেক দিন ধরেই অপেক্ষা করছে সিবিএফ এবং বলা হচ্ছে, আনচেলত্তি সিবিএফ ‘সভাপতির স্বপ্ন।’ আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে আরও বৈঠক হবে এবং সবকিছু পরিকল্পনানুযায়ী হলে আনচেলত্তি সিবিএফের চুক্তিপত্রে সই করবেন।
চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল ফিরতি লেগে সিবিএফের প্রতিনিধি হিসেবে দিয়েগো ফার্নান্দেজ আনচেলত্তির সঙ্গে দেখা করার জন্য বার্নাব্যুতে উপস্থিত ছিলেন। যদিও সিবিএফের পক্ষ থেকে তখন ব্যাপারটি অস্বীকার করা হয়েছিল। ব্রাজিলের খ্যাতিমান এ ব্যবসায়ী কোপা দেল রে ফাইনালে লা কার্তুহা স্টেডিয়ামেও উপস্থিত ছিলেন। সিবিএফের পক্ষ থেকে তিনিই আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আনচেলত্তির পাশাপাশি আল হিলাল কোচ জর্জ জেসুসও ছিলেন ব্রাজিলের কোচ হওয়ার আলোচনায়। সিবিএফ আগামী জুনে আন্তর্জাতিক বিরতির আগেই নতুন কোচ নিয়োগ দিতে চায়।
আরও পড়ুনমাচিস যেন তারাশঙ্করের সেই সুশোভন, যাঁর শুধু অধঃপতনই হচ্ছে১১ ঘণ্টা আগেরিয়াল এখন নতুন কোচ খোঁজা শুরু করবে। তবে আলোনসোর জন্য লেভারকুসেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ মৌসুমে আগেই একবার আলোচনা হয়েছে রিয়ালের। মৌসুম শেষে আলোনসোর রিয়াল কোচ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে ‘দ্য অ্যাথলেটিক।’
আনচেলত্তির হাত ধরে এ মৌসুমে ভালো করতে পারেনি রিয়াল। লা লিগায় শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার সঙ্গে তারা পিছিয়ে ৪ পয়েন্ট ব্যবধানে। চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেওয়ার পাশাপাশি স্প্যানিশ সুপার কাপ ও কোপা দেল ফাইনালে হেরেছে বার্সার কাছে। গত জানুয়ারিতে আনচেলত্তি জানিয়েছিলেন, তিনি রিয়াল ‘ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিজে নেবেন না।’ ২০২৯ সালে রিয়াল সভাপতি হিসেবে মেয়াদ শেষ হবে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের। আনচেলত্তি জানিয়েছিলেন, পেরেজের সঙ্গে তখন তিনি নিজেও রিয়াল ছাড়বেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে নিয়মিতই রিয়ালে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন এই কোচ। সিদ্ধান্তটা রিয়ালের—সেটাও এর আগে জানিয়েছেন আনচেলত্তি।
রিয়ালে প্রথম মেয়াদে ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ছিলেন আনচেলত্তি। এরপর ২০২১ সালের জুনে জিনেদিন জিদানের শূন্যতা পূরণে রিয়ালের দায়িত্ব নেন দ্বিতীয় মেয়াদে। এ দুই মেয়াদে দুটি লা লিগা ও তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন আনচেলত্তি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র জ ল জ ত য় দল চ য ম প য়নস ল গ ব শ বক প স ব এফ র র জন য ফ ইন ল গ ঞ জন
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।