ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী বন্দর আব্বাসে ভয়াবহ বিস্ফোরণের দুই দিন পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৭০ জন নিহত ও ১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। তবে বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে।

গতকাল সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসকানদার মোমেনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আহত ১২০ জন।
ইরানের দক্ষিণে শাহীদ রাজায়ি বন্দরে গত শনিবার ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হরমুজ প্রণালির নিকটবর্তী বন্দরটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রণালির মধ্য দিয়েই বৈশ্বিক তেল সরবরাহের এক-পঞ্চমাংশ পরিবাহিত হয়।

আগুন পুরোপুরি নিভে যাওয়ার আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ করছেন। সে সময় জানানো হয়, আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে।

তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বন্দরের কাস্টমস দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সম্ভবত বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ রাখা একটি গুদামের আগুন থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে।

গত রোববার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বন্দর আব্বাসের হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান। বিস্ফোরণের পর স্থানীয় সব স্কুল-অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয় ও বাড়ির বাইরে না যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বের হলে মুখে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনি বলেন, এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তলব করা হয়েছে। বিস্ফোরণটি নিরাপত্তাবিধি লঙ্ঘন ও গাফিলতির কারণে ঘটেছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এ ঘটনায় নিবিড় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুনইরানের বন্দরে বিস্ফোরণে নিহত ৪, আহত ৫১৬২৬ এপ্রিল ২০২৫

বিশেষজ্ঞ মহলে নানা জল্পনা চললেও, ইরান সরকার ক্ষেপণাস্ত্র জ্বালানিসংক্রান্ত চালান থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে—এমন খবর অস্বীকার করেছে।

গত রোববার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বন্দর আব্বাসের হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান। বিস্ফোরণের পর স্থানীয় সব স্কুল-অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয় ও বাড়ির বাইরে না যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বের হলে মুখে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া গতকাল জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়। হরমোজগান প্রদেশে গত রোববার থেকে তিন দিনের শোক পালিত হচ্ছে।

আরও পড়ুনইরানের বন্দরে বড় বিস্ফোরণ, আহত কয়েক শ২৬ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ

বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস-কালীবাড়ি মোড় সড়কে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের পসরা। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন শর্মা, মিটবক্স—সবই মিলছে রাস্তার পাশের এসব দোকানে। ক্রেতারা মূলত কিশোর ও তরুণ-তরুণী।

দোকানগুলোতে নেই কোনো আলাদা শেফ। বিক্রেতারাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করছেন, পরিবেশনও করছেন। কারও হাতে গ্লাভস নেই, শরীরে নেই অ্যাপ্রোন। বিকেল গড়াতেই এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে ভিড় জমছে। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের পাশেই আছে ‘পিজ অ্যান্ড বার্গ’, ‘পদ্মা ফুডস’ ও ‘হিলিয়াম রেস্টুরেন্ট’-এর মতো নামীদামি খাবারের দোকান। একসময় সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার ঢল নামত। এখন সে ভিড় চলে গেছে রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর দিকে।

পদ্মা ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত এ এলাকায় একটি খাবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। এসব নবায়নে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভবন ভাড়া, দামি শেফ ও কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে খরচ বিপুল। অথচ রাস্তার পাশে ভ্যানে বসা দোকানে বিনিয়োগ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোনো সনদ নেই, দোকানভাড়া নেই, কর্মচারীও নেই। শুধু দামে সস্তা বলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন ওদিকে। সড়ক দখল করে দোকান বসায় যানজটও বাড়ছে। অভিযোগ করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মিলছে না।

বগুড়া হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলেশ্বরীতলা অভিজাত এলাকা। এখানে দোকান দিতে বিপুল বিনিয়োগ লাগে। নামীদামি দোকানে একটি পিৎজার দাম ৫০০ টাকা হলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেখান থেকেই কিনছেন। এতে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো লোকসানে পড়ছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘আমরা স্ট্রিট ফুড ব্যবসার বিরোধী নই। তবে সেটা অভিজাত এলাকা থেকে সরিয়ে পৌর পার্ক, অ্যাডওয়ার্ড পার্কসংলগ্ন সড়ক কিংবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাশের এলাকায় নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’

সড়কজুড়ে দোকান, ভোগান্তিতে শহরবাসী

সম্প্রতি দেখা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সড়কের এক পাশে ২০-২৫টি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসেছে। অন্য পাশে ফলের দোকান। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণের সামনে যানজট লেগেই থাকে।

এ ছাড়া পৌরসভা লেন, জেলা খানা মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, মহিলা ক্লাব মোড়, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, সাতমাথা-সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের নানা সড়কেই বসছে ফুচকা, চটপটি, জুস, ফাস্ট ফুড ও ফলের দোকান।

সাতমাথায় প্রতিদিন বসছে অর্ধশতাধিক দোকান। জিলা স্কুলের সামনে চটপটি ও কাবাবের দোকানগুলোর চেয়ার বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা—সবখানেই দুই পাশে দোকান।

রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় বেশির ভাগ সময় যানজটে থাকে শহরে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ