ইরানে বিস্ফোরণ: আগুন নিভল দুই দিন পর, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭০
Published: 29th, April 2025 GMT
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী বন্দর আব্বাসে ভয়াবহ বিস্ফোরণের দুই দিন পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৭০ জন নিহত ও ১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। তবে বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে।
গতকাল সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসকানদার মোমেনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আহত ১২০ জন।
ইরানের দক্ষিণে শাহীদ রাজায়ি বন্দরে গত শনিবার ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হরমুজ প্রণালির নিকটবর্তী বন্দরটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রণালির মধ্য দিয়েই বৈশ্বিক তেল সরবরাহের এক-পঞ্চমাংশ পরিবাহিত হয়।
আগুন পুরোপুরি নিভে যাওয়ার আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ করছেন। সে সময় জানানো হয়, আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে।
তাৎক্ষণিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বন্দরের কাস্টমস দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সম্ভবত বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ রাখা একটি গুদামের আগুন থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
গত রোববার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বন্দর আব্বাসের হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান। বিস্ফোরণের পর স্থানীয় সব স্কুল-অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয় ও বাড়ির বাইরে না যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বের হলে মুখে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনি বলেন, এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তলব করা হয়েছে। বিস্ফোরণটি নিরাপত্তাবিধি লঙ্ঘন ও গাফিলতির কারণে ঘটেছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এ ঘটনায় নিবিড় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুনইরানের বন্দরে বিস্ফোরণে নিহত ৪, আহত ৫১৬২৬ এপ্রিল ২০২৫বিশেষজ্ঞ মহলে নানা জল্পনা চললেও, ইরান সরকার ক্ষেপণাস্ত্র জ্বালানিসংক্রান্ত চালান থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে—এমন খবর অস্বীকার করেছে।
গত রোববার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বন্দর আব্বাসের হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যান। বিস্ফোরণের পর স্থানীয় সব স্কুল-অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয় ও বাড়ির বাইরে না যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বের হলে মুখে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া গতকাল জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়। হরমোজগান প্রদেশে গত রোববার থেকে তিন দিনের শোক পালিত হচ্ছে।
আরও পড়ুনইরানের বন্দরে বড় বিস্ফোরণ, আহত কয়েক শ২৬ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।