ভারতে নিষিদ্ধ পাকিস্তানি অভিনেতার সিনেমা, ক্ষুব্ধ প্রকাশ রাজ
Published: 5th, May 2025 GMT
ভারতীয় লেখক-পরিচালক আরতি এস বাগদি নির্মাণ করেছেন ‘আবির গুলাল’ সিনেমা। এর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলিউড অভিনেত্রী বাণী কাপুর ও পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খান। আগামী ৯ মে ভারতে এটি মুক্তির কথা ছিল।
কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা ঘিরে সারা ভারতে আক্রোশ ছড়িয়ে পড়েছে। নেটিজেনদের একাংশ ক্ষোভ উগরেছেন পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খানের ওপর। তার অভিনীত ‘আবির গুলাল’ ভারতে প্রদর্শন বন্ধের দাবিও জানান। এরপর সিনেমাটি ভারতে নিষিদ্ধ করে ভারত সরকার। এ নিয়ে ক্ষোভ ঝারলেন দক্ষিণী সিনেমার দাপুটে অভিনেতা প্রকাশ রাজ।
‘আবির গুলাল’ সিনেমার বিতর্ক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রকাশ রাজ বলেন, “আমি কোনো সিনেমা নিষিদ্ধের পক্ষে নই। সেটা প্রোপাগান্ডা হোক বা না হোক। যদি না তা শিশু নির্যাতন বা পর্নোগ্রাফি প্রচার করে। একটি চলচ্চিত্র কেন নিষিদ্ধ করা হবে? এ বিষয়ে জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
আরো পড়ুন:
বাবা-মা হতে যাচ্ছেন নাগা-শোভিতা?
হাসপাতালে অজিত কুমার
এরপর ‘পদ্মাবত’, ‘পাঠান’ সিনেমায় দীপিকা পাড়ুকোনের চরিত্র নিয়ে জনসাধারণের ক্ষোভের কথা বর্ণনা করেন প্রকাশ রাজ। এ অভিনেতা বলেন, “লোকজন বাইরে বলছিল, ‘আমি তার (দীপিকা) নাক কেটে ফেলব।’ এটি কেবল একটি পোশাক বা রঙের জন্য তারা বলেছিল।”
এসব ঘটনা ঘটিয়ে ভয় তৈরিই তাদের লক্ষ্য। এ দাবি করে প্রকাশ রাজ বলেন, “তারা ভয় তৈরি করতে চায়। চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সেন্সরশীপ দখল করে নিয়েছে। এটি এখন শুধু রাষ্ট্রীয় চাপ নয়, এটি সিস্টেমেটিক হচ্ছে।”
ব্যাখ্যা করে এ অভিনেতা বলেন, “এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। এতে করে তরুণ প্রজন্মকে তাদের প্রকল্প বাস্তবে রূপ নেওয়ার আগেই স্ব-সেন্সর করতে বাধ্য করবে।”
‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ সিনেমার উদাহরণ টেনে প্রকাশ রাজ বলেন, “দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই মুক্তি পায়। তাহলে অন্যরা? তারা হয়তো এতটা ভাগ্যবান নয়।”
মোহনলাল অভিনীত ‘এল টু: এমপুরান’ সিনেমা নিয়ে বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে প্রকাশ রাজ বলেন, “যখন কাউকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়, তখন তারা অসহনীয় হয়ে ওঠে।”
ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী প্রকাশ রাজ। শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশের দর্শকদেরও মন জয় করেছেন এই গুণী অভিনেতা। অভিনয় ক্যারিয়ারে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে খল চরিত্রে অভিনয় করে ঢের খ্যাতি কুড়িয়েছেন এই ভার্সেটাইল অভিনেতা।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র কর ছ ন চর ত র
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে গতকাল সোমবার বাসায় ফিরছিলেন নাজমা বেগম। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় থাকেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ ফোন করে জানান, তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন নাজমা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখান নাজমাকে। সে ভিডিওতে দেখতে পান, তাঁর ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
ছেলের খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ৮ দিন ধরে ভর্তি আবদুল্লাহ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার আবদুল্লাহর জ্ঞান ফেরে। এরপর নিজের ও বাবা-মায়ের নাম আর বাসার ঠিকানা জানায় সে।
চিকিৎসকেরা সেই সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে খোঁজ চাওয়া হয় বাবা-মায়ের। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখেন নাজমা বেগম। এরপর ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালে এসেই নার্সদের সহায়তায় যান নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহকে দেখেন।
আজ বিকেলে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় আবদুল্লাহর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। সকালেই চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন তিনি। জানালেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ ও আরেক ছেলের বয়স দুই। আবদুল্লাহ সুস্থ আছে জেনে স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ, এটিই প্রথমবার নয়, এর আগেও কয়েকবার ঘর থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় সে।
নাজমা বেগম বলেন, প্রায়ই আবদুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এদিক–সেদিক চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও ঢাকার আশপাশে এদিক-সেদিক চলে গিয়েছিল সে। ৬ সেপ্টেম্বর সে ভাত খাওয়া থেকে উঠে হঠাৎ চলে যায়। সে ফিরে আসবে এই আশায় থানায় যাননি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় এদিক–সেদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ঢাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে গেছেন বলে জানান নাজমা।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে জানান, বাসা থেকে বেরিয়ে সে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চট্টগ্রামে ট্রেন থামলে সে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন সুস্থ হয়ে উঠছে সে।
চিকিৎসকেরা জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয় তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তার মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে। হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
শুরু থেকে আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে চলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবে সেটি জোড়া দেওয়া হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আমরা আজ-কালের মধ্যে ডিসচার্জ করে দেব। শিশুকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’