জয়পুরহাটের তিন উপজেলার তিনটি হাটে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সুবিধার্থে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সাড়ে চার বছরেও শেষ হয়নি। তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়েও প্রকল্প অসম্পন্ন রেখে লাপাত্তা হয়েছেন ঠিকাদার। এতে হাটে জায়গা সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। উন্মুক্ত স্থান ও গাছতলায় পণ্য কেনাবেচা করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। 
এলজিইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আক্কেলপুরের রায়কালী, কালাইয়ের হারুঞ্জা ও ক্ষেতলাল উপজেলার লালাগড় হাটে নতুন ভবন নির্মাণে গ্রামীণ হাট-বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দরপত্র আহ্বান করে। ২ কোটি ৬৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকায় রায়কালী, সমপরিমাণ অর্থে লালাগড় এবং ১ কোটি ৭৪ লাখ ২১ হাজার ১৮২ টাকার চুক্তি মূল্যে তিনটি হাটে ভবন নির্মাণে মণ্ডল ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর তৎকালীন জয়পুরহাট-২ আসনের সাংসদ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ভবনগুলোর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৯ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। 
পরবর্তী সময়ে ঠিকাদারের অনুরোধে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ৩ দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেয়। কাজ শেষ না করে গত বছরের মার্চ মাসে লাপাত্তা হন ঠিকাদার। ভবনগুলোর কাজ শেষ করার জন্য এলজিইডি থেকে বারবার ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়া হলেও সাড়া দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। তিনটি হাটে গড়ে ৩৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। 
গত শনি ও রোববার হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি হাটে প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গাজুড়ে নির্মাণাধীন ভবনে আরসিসি পিলার দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও একতলায় ছাদ এবং দ্বিতীয় তলায় পিলার আছে। রডগুলোতে মরিচা ধরেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে প্রকল্প সাইটে পাওয়া যায়নি। 
রায়কালী হাটের চাল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, শুরু থেকে ঠিক মতো কাজ করেননি ঠিকাদার। একদিন কাজ করলে এক মাস বন্ধ ছিল কাজ। জায়গার অভাবে অনেকে হাটের বাইরে বটতলাতে দোকান বসাচ্ছেন। আগের চেয়ে হাটে লোকজনের সমাগম কম। বেচাকেনাও কমে গেছে। নিয়মিত লোকসান গুনতে হচ্ছে। 
লালাগড় হাটের মুদি দোকানি আহসান হাবিব বলেন, হাটে দোকান বসাতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।  বৃষ্টি হলেই দোকানদাররা দৌড়াদৌড়ি করে। রোদে গা পুড়ে যায়। জায়গা নেই তো কী হয়েছে, ইজারাদার ঠিকই খাজনা আদায় করছেন। মার্কেট নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই। 
রায়কালী হাটের ইজারাদার রাশেদুজ্জামান জানান, হাটের বেশির ভাগ জায়গায় ভবন নির্মাণের কাজ কচ্ছপগতিতে চলেছে। এখন সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। বর্ষা মৌসুমে কাদাপানিতে একাকার হয়ে কেনাকাটা করতে হবে জনসাধারণকে। 
হারুঞ্জা হাটের ইজারাদার বজলুর রহমান বলেন, এমনিতেই হাটের জায়গা নেই। কয়েক বছর ধরে ধীরগতিতে চলছে নতুন ভবনের কাজ। এতে ক্রেতা-বিক্রেতারা ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। খাজনা আদায়ে গেলে ব্যবসায়ীদের গালি শুনতে হচ্ছে। 
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মণ্ডল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলমের ভাষ্য, দফায় দফায় নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে মূলত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পের তাঁর অনেক লোকসান হয়েছে। এলজিইডি যে কোনো সিদ্ধান্তে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। 
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম জানান, বারবার নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও কাজের অগ্রগতি নেই। ঠিকাদারের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। এখন আবার টেন্ডার করে নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতায় প্রকল্পের কাজ শেষ করার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র ক জ ভবন ন র ম ণ ব যবস য় ন ভবন

এছাড়াও পড়ুন:

এআইয়ের কারণে চাকরি বাঁচাতে যে পরামর্শ দিলেন এআই গডফাদার জিওফ্রে হিন্টন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভবিষ্যতে মানুষের অনেক চাকরিকে হুমকির মুখে ফেলবে বলে সতর্ক করছেন এ প্রযুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ জিওফ্রে হিন্টন। তাঁর মতে, ভবিষ্যতে বাঁচতে হলে মানুষের এমন কাজ শেখা উচিত, যেগুলো সহজে অটোমেশন করা যায় না। হাতে-কলমে কাজ করা পেশা আপাতত নিরাপদ হলেও, হিন্টনের মতে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক অনেক চাকরিই দ্রুত রূপ বদলে ফেলবে। আইনি সহকারী, নথি পর্যালোচক বা তথ্যসংক্ষেপের মতো কাজগুলো এআই ইতিমধ্যেই করতে পারছে। ফলে এসব পেশায় মানুষের প্রয়োজন কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের উদ্যোক্তা স্টিভেন বার্টলেটের সঞ্চালনায় প্রচারিত দ্য ডায়েরি অফ আ সিইও পডকাস্টে হিন্টন বলেন, ‘এআই চিন্তা করতে পারলেও শারীরিক কাজে এখনো মানুষের ধারে-কাছে আসতে পারেনি। সে হিসেবে একজন ভালো প্লাম্বার হওয়া ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ ও বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত।’ প্লাম্বিংয়ের মতো কাজে নানা রকম বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। কখনো সিঙ্কের নিচে ঢুকতে হয়, কখনো হঠাৎ পানি চুঁইয়ে পড়া ঠেকাতে হয়, আবার কোনো কোনো সমস্যার কোনো নির্দিষ্ট ম্যানুয়ালই থাকে না। হিন্টনের মতে, এই ধরনের জটিল, শারীরিক এবং পরিস্থিতিনির্ভর কাজ করা এখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতার বাইরে।

৭৭ বছর বয়সী হিন্টন জানিয়েছেন, নিজের তৈরি প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর মাঝেও দ্বিধা রয়েছে। তিনি জানান, নিজের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের ভবিষ্যৎ নিয়েই তিনি সবচেয়ে বেশি চিন্তিত। তাঁর ভাষ্য, যদি এক সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পুরোপুরি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তাহলে তা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর নিয়ন্ত্রণও নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে শুরুতে কিছু মানুষের দরকার পড়লেও পরে তাঁরা এমন প্রযুক্তি বানিয়ে নিতে পারবে, যেখানে মানুষের প্রয়োজনই থাকবে না। এ বিষয়ে হিন্টন বলেন, ‘এআই যদি মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে, তাহলে তা মানুষের বিকল্প তৈরি করে ফেলবে। তখন মানুষকে বাদ দেওয়ার নানা উপায় বেরিয়ে আসবে, যেগুলোর বেশির ভাগই হতে পারে ভয়াবহ।’

হিন্টন মনে করেন, শুধু চাকরি হারানোই নয়, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আয় ও সুযোগের মধ্যে যে বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে, সেটাই সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা। এআই ব্যবহারে মূলত লাভবান হচ্ছেন সেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি, যাঁরা প্রযুক্তির মালিক। আর মাঝারি ও সহকারী পর্যায়ের কর্মীরা ক্রমেই চাকরি হারিয়ে ঝুঁকিতে পড়ছেন। যদিও কিছু নতুন পেশা সৃষ্টি হচ্ছে, তবু হিন্টনের মতে, প্রযুক্তির রূপান্তরের গতি এতটা দ্রুত যে অনেকেই এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না। এতে করে কর্মসংস্থানে অনিশ্চয়তা ও বৈষম্য আরও বাড়বে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ