‘আমাকে কাটবেন না, আমি কিন্তু অনেক সাধনার ফল’
Published: 6th, May 2025 GMT
‘আমাকে কাটবেন না। হয়তো রাতারাতি আমাকে কেটে ফেলবেন, কিন্তু জেনে রাখুন, আজকের আমি কিন্তু অনেক সাধনার ফল।’ এমনই হৃদয়ছোঁয়া বার্তা ঝুলছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কিলোরোডের পাশের একটি পুরোনো জামগাছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবেদনটি যেন প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় একটি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করছে।
গত রোববার বিকেলে দেখা যায়, কিলোরোডের ওই গাছসংলগ্ন লেকের দুই পাশে একটি সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ সেতুর নকশার স্থানে ৯টি পরিণত গাছ পড়েছে। এগুলোর গায়ে লাল কালি দিয়ে আঁকা হয়েছে ক্রসচিহ্ন। এর মধ্যে একটি জামগাছে টাঙানো হয়েছে দুটি প্ল্যাকার্ড। তবে কে বা কারা এসব প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়েছে, তা জানা যায়নি।
গাছে ঝুলিয়ে রাখা দ্বিতীয় প্ল্যাকার্ডটিতে লেখা হয়, ‘আমার পরিবারে আমি খুব মূল্যবান সদস্য। আমাকে রেখেই রাস্তা করুন। সে রাস্তায় আমি ফুল, ফল ও ছায়া বিলাব। আমাকে মারলে আমার পরিবারবর্গ কিন্তু বিক্ষুব্ধ হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প-২–এর অধীনে স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে চারটি স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কিলোরোডের পাশে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রশস্ত একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। সেই সেতুর পথেই পড়েছে ৯টি গাছ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূসম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ শাখার তথ্যমতে, প্রায় তিন দশকের পুরোনো এসব গাছ সেতু নির্মাণের নকশায় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই এগুলোকে কেটে ফেলার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভূসম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ শাখার প্রধান অধ্যাপক আবুল হাসনাত বলেন, ‘আমরা গাছগুলো না কাটার সুপারিশ করেই চিঠি দিয়েছি। তবে যদি কোনো গাছ অকেজো হয় এবং প্রকল্পের বৃহত্তর স্বার্থে কাটা প্রয়োজন হয়, তাহলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটি’ গাছ না কেটে বিকল্প রাস্তা তৈরির দাবি জানিয়ে আসছে। সংগঠনটির সভাপতি জাহ্নবী দত্ত বলেন, ‘জামগাছটি অন্তত ২৪ বছরের পুরোনো। এটি কেটে ফেলা মানে শুধু একটি গাছ নয়, একটি বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করা। আমরা উপাচার্যের কাছে বিকল্প পথ বা নকশার আবেদন জানিয়েছি এবং তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নারায়ণ সাহা বলেন, ‘গাছগুলো যদি সুস্থ এবং পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে সেগুলো রক্ষা করে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করাই অধিকতর দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত হবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ও অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প–২-এর পরিচালক জয়নাল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের নকশা একনেকে পাস হয়েছে অনেক আগে। কিলোরোডের পাশের সেতুটিও সেই পরিকল্পনার অংশ। সেটি পরিবর্তন করতে অনেক জটিলতা আছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা–ই বাস্তবায়ন করা হবে।
উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ
বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস-কালীবাড়ি মোড় সড়কে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের পসরা। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন শর্মা, মিটবক্স—সবই মিলছে রাস্তার পাশের এসব দোকানে। ক্রেতারা মূলত কিশোর ও তরুণ-তরুণী।
দোকানগুলোতে নেই কোনো আলাদা শেফ। বিক্রেতারাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করছেন, পরিবেশনও করছেন। কারও হাতে গ্লাভস নেই, শরীরে নেই অ্যাপ্রোন। বিকেল গড়াতেই এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে ভিড় জমছে। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের পাশেই আছে ‘পিজ অ্যান্ড বার্গ’, ‘পদ্মা ফুডস’ ও ‘হিলিয়াম রেস্টুরেন্ট’-এর মতো নামীদামি খাবারের দোকান। একসময় সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার ঢল নামত। এখন সে ভিড় চলে গেছে রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর দিকে।
পদ্মা ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত এ এলাকায় একটি খাবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। এসব নবায়নে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভবন ভাড়া, দামি শেফ ও কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে খরচ বিপুল। অথচ রাস্তার পাশে ভ্যানে বসা দোকানে বিনিয়োগ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোনো সনদ নেই, দোকানভাড়া নেই, কর্মচারীও নেই। শুধু দামে সস্তা বলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন ওদিকে। সড়ক দখল করে দোকান বসায় যানজটও বাড়ছে। অভিযোগ করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মিলছে না।
বগুড়া হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলেশ্বরীতলা অভিজাত এলাকা। এখানে দোকান দিতে বিপুল বিনিয়োগ লাগে। নামীদামি দোকানে একটি পিৎজার দাম ৫০০ টাকা হলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেখান থেকেই কিনছেন। এতে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো লোকসানে পড়ছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘আমরা স্ট্রিট ফুড ব্যবসার বিরোধী নই। তবে সেটা অভিজাত এলাকা থেকে সরিয়ে পৌর পার্ক, অ্যাডওয়ার্ড পার্কসংলগ্ন সড়ক কিংবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাশের এলাকায় নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’
সড়কজুড়ে দোকান, ভোগান্তিতে শহরবাসীসম্প্রতি দেখা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সড়কের এক পাশে ২০-২৫টি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসেছে। অন্য পাশে ফলের দোকান। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণের সামনে যানজট লেগেই থাকে।
এ ছাড়া পৌরসভা লেন, জেলা খানা মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, মহিলা ক্লাব মোড়, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, সাতমাথা-সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের নানা সড়কেই বসছে ফুচকা, চটপটি, জুস, ফাস্ট ফুড ও ফলের দোকান।
সাতমাথায় প্রতিদিন বসছে অর্ধশতাধিক দোকান। জিলা স্কুলের সামনে চটপটি ও কাবাবের দোকানগুলোর চেয়ার বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা—সবখানেই দুই পাশে দোকান।
রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় বেশির ভাগ সময় যানজটে থাকে শহরে। সম্প্রতি তোলা