‘আমাকে কাটবেন না। হয়তো রাতারাতি আমাকে কেটে ফেলবেন, কিন্তু জেনে রাখুন, আজকের আমি কিন্তু অনেক সাধনার ফল।’ এমনই হৃদয়ছোঁয়া বার্তা ঝুলছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কিলোরোডের পাশের একটি পুরোনো জামগাছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবেদনটি যেন প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় একটি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করছে।

গত রোববার বিকেলে দেখা যায়, কিলোরোডের ওই গাছসংলগ্ন লেকের দুই পাশে একটি সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ সেতুর নকশার স্থানে ৯টি পরিণত গাছ পড়েছে। এগুলোর গায়ে লাল কালি দিয়ে আঁকা হয়েছে ক্রসচিহ্ন। এর মধ্যে একটি জামগাছে টাঙানো হয়েছে দুটি প্ল্যাকার্ড। তবে কে বা কারা এসব প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়েছে, তা জানা যায়নি।

গাছে ঝুলিয়ে রাখা দ্বিতীয় প্ল্যাকার্ডটিতে লেখা হয়, ‘আমার পরিবারে আমি খুব মূল্যবান সদস্য। আমাকে রেখেই রাস্তা করুন। সে রাস্তায় আমি ফুল, ফল ও ছায়া বিলাব। আমাকে মারলে আমার পরিবারবর্গ কিন্তু বিক্ষুব্ধ হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প-২–এর অধীনে স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে চারটি স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কিলোরোডের পাশে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রশস্ত একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। সেই সেতুর পথেই পড়েছে ৯টি গাছ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূসম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ শাখার তথ্যমতে, প্রায় তিন দশকের পুরোনো এসব গাছ সেতু নির্মাণের নকশায় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই এগুলোকে কেটে ফেলার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভূসম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ শাখার প্রধান অধ্যাপক আবুল হাসনাত বলেন, ‘আমরা গাছগুলো না কাটার সুপারিশ করেই চিঠি দিয়েছি। তবে যদি কোনো গাছ অকেজো হয় এবং প্রকল্পের বৃহত্তর স্বার্থে কাটা প্রয়োজন হয়, তাহলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত পরিবেশবাদী সংগঠন ‘গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটি’ গাছ না কেটে বিকল্প রাস্তা তৈরির দাবি জানিয়ে আসছে। সংগঠনটির সভাপতি জাহ্নবী দত্ত বলেন, ‘জামগাছটি অন্তত ২৪ বছরের পুরোনো। এটি কেটে ফেলা মানে শুধু একটি গাছ নয়, একটি বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করা। আমরা উপাচার্যের কাছে বিকল্প পথ বা নকশার আবেদন জানিয়েছি এবং তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নারায়ণ সাহা বলেন, ‘গাছগুলো যদি সুস্থ এবং পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে সেগুলো রক্ষা করে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করাই অধিকতর দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত হবে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ও অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প–২-এর পরিচালক জয়নাল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের নকশা একনেকে পাস হয়েছে অনেক আগে। কিলোরোডের পাশের সেতুটিও সেই পরিকল্পনার অংশ। সেটি পরিবর্তন করতে অনেক জটিলতা আছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা–ই বাস্তবায়ন করা হবে।

উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে গেলেন শেখ হাসিনা

‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে ৫ আগস্ট সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার আহ্বান জানিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেদিন ছিল সোমবার, ‘শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপের’ এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন। বিপুল জনস্রোতের লক্ষ্য ছিল গণভবন।

সেদিন সকালেও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। সেদিন ঢাকার সব প্রধান সড়কেই নেমে আসেন লাখ লাখ মানুষ। উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকা, শাহবাগসহ বিভিন্ন দিক থেকে আসছিলেন ছাত্র–জনতা। বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে। সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও কিছু স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছাত্র–জনতার মিছিলের বাধা সরিয়ে নেন। দুপুরের আগেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে সরকার নড়বড়ে হয়ে গেছে।

ছাত্র–জনতার সবার গন্তব্য ছিল গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জাতীয় সংসদ ভবন। একপর্যায়ে তাঁরা গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংসদ ভবনের মধ্যে ঢুকে পড়েন।

জনস্রোত গণভবনে পৌঁছানোর আগেই ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বেলা আড়াইটায় একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা, যিনি কয়েক দিন আগেই (১ আগস্ট) বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা কখনো পালায় না।’

গণভবনের মাঠে হাত উঁচু করে উল্লাস করেন অনেকে। কেউ কেউ গণভবন ও সংসদে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বেরিয়ে যান। সংসদ ভবনে প্রবেশ করেও উল্লাস ও আনন্দ মিছিল করেন ছাত্র–জনতা। অনেকের হাতে ছিল লাল–সবুজের জাতীয় পতাকা। বিকেল থেকে ছাত্র–জনতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেন। অনেকেই কার্যালয়ের ছাদে উঠে যান।

ছাত্র–জনতার অনেকে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন গণভবন-প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংসদের দেয়াল এবং বিভিন্ন স্থাপনায় লিখে, ছবি এঁকে। দেয়ালে বিভিন্ন প্রতিবাদী লিখনে উঠে আসে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার শাসনামলের নানা অনিয়ম ও দুঃশাসনের কথা।

জনস্রোত গণভবনে পৌঁছানোর আগেই ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বেলা আড়াইটায় একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা, যিনি কয়েক দিন আগেই (১ আগস্ট) বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা কখনো পালায় না।’

সেনাপ্রধান বলেন, সব হত্যাকাণ্ড ও অন্যায়ের বিচার করা হবে। এ জন্য সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সমস্ত দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনাদের জানমাল...এবং আপনাদের আমি কথা দিচ্ছি যে আপনারা আশাহত হবেন না।’ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনে মানুষের আনন্দ–উল্লাস। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকেলে সংসদ ভবন এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ