ভুট্টার বস্তায় স্বর্ণালংকার, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রকৃত মালিককে ফেরত দিলেন ব্যবসায়ী
Published: 9th, May 2025 GMT
বাড়ি থেকে এক বস্তা ভুট্টার দানা এনে শাহ আলম নামের এক ভুট্টা ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন কৃষক আলী আহম্মদ মোল্লা। কিছুক্ষণ পর ব্যবসায়ী বস্তা খুলে ভুট্টার দানার সঙ্গে একটি সোনার হার, কানের দুল ও হাতের আংটি দেখতে পান। ব্যবসায়ী ভুট্টা বিক্রেতাকে চিনতে না পারায় স্বর্ণালংকারের মালিক খুঁজতে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন।
খবর পেয়ে উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে ব্যবসায়ীর কাছে আসেন ওই কৃষক। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে ওই কৃষকের হাতে তাঁর স্বর্ণালংকার তুলে দেন ওই ব্যবসায়ী। আজ শুক্রবার দুপুরে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের কফি হাউস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
কৃষক আলী আহম্মদ মোল্লার বাড়ি উপজেলার উদ্দমদী গ্রামে। আর ভুট্টা ব্যবসায়ী শাহ আলমের বাড়ি উপজেলার কফি হাউস এলাকায়। কৃষক আলী আহম্মদ মোল্লা বলেন, তাঁর স্ত্রী খুব অসুস্থ। ক্যানসারে আক্রান্ত। অসাবধানতাবশত তিনি তাঁর দেড় ভরি ওজনের সোনার হার, ছয় আনা ওজনের একটি দুল ও দুই আনা ওজনের একটি আংটি ভুট্টার দানাভর্তি বস্তায় রাখেন। বস্তাটি বসতঘরে রাখা ছিল। বিষয়টি তিনি জানতেন না। জরুরি প্রয়োজনে আজ দুপুরে ওই বস্তাভর্তি ভুট্টার দানা কফি হাউস এলাকার ব্যবসায়ী শাহ আলমের কাছে বিক্রি করেন। বাড়ি গিয়ে ফেসবুক খুলে জানতে পারেন, ওই বস্তায় স্বর্ণালংকারগুলো রাখা ছিল। ভুট্টা ব্যবসায়ী প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে চান। এর মধ্যে তাঁর স্ত্রী তাঁকে ভুট্টার বস্তায় স্বর্ণালংকার রাখার কথা জানান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওই ব্যবসায়ীর কাছে যান। উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়ার পর ওই ব্যবসায়ী তাঁর কাছে এসব স্বর্ণালংকার ফিরিয়ে দেন। ওই ব্যবসায়ীর সততার জন্য তিনি তাঁকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
ভুট্টা ব্যবসায়ী মো.
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই কৃষককে স্বর্ণালংকার ফিরিয়ে দেওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমদাদ হোসেন খানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য কয়েকজন ব্যক্তি। এমদাদ হোসেন খান বলেন, ওই ভুট্টা ব্যবসায়ী কৃষককে তাঁর স্বর্ণালংকার ফিরিয়ে দিয়ে যে বদান্যতার পরিচয় দিয়েছেন, তা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ জন্য তিনি প্রশংসিত হওয়ার দাবি রাখেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য় স বর ণ ল ক র স বর ণ ল ক র র ব যবস য় র শ হ আলম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া আইনের শাসন, গণতন্ত্র কিছুই থাকে না
মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া আইনের শাসন, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার– কোনোকিছুই থাকে না। বর্তমান সরকার সাংবাদিকতার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। ফ্যাসিস্ট সরকার গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে আইয়ামে জাহেলিয়াত কায়েম করেছিল। সংবাদ সম্মেলনগুলোকে তারা প্রশংসা-স্তুতির বিষয়ে পরিণত করে দেশের মানুষকে অপমান করত।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) ২০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে খুনের মামলা দেওয়া প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, মিথ্যা মামলার বাদীদের বিরুদ্ধে প্রক্রিয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ব্যবস্থা তখনই নেওয়া যায়, যখন মামলাটি আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আমরা দায়িত্বে থাকলে ব্যবস্থা নেব, তা না হলে যারা ক্ষমতায় আসবে, আশা করি তারা নেবে। তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার না করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।’
আসিফ নজরুল বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে দলদাসে পরিণত করা হয়েছে। অথচ ৯০ দশকে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনে এই সংগঠনগুলোর দারুণ ভূমিকা ছিল। তাদের নিরপেক্ষভাবে চলতে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, আমরা একটি স্বাধীন ও দলনিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পরিবেশ চাই এবং এই পরিবেশ আগামীতেও অক্ষুণ্ন থাকবে– এমন নিশ্চয়তা চাই। তিনি বলেন, বর্তমানে সংবাদপত্র নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ছাপা সংবাদপত্র এমনিতেই রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হয়েছে। ছাপা পত্রিকার সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন বাজার ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। নোয়াব সভাপতি জানান, করোনা মহামারির সময় সব শিল্প প্রণোদনা পেলেও সংবাদপত্র শিল্প কিছুই পায়নি।
নোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন সাংবাদিকতা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। কোনো সরকারকে আমরা বোঝাতে পারিনি, সমালোচকরাই আপনাদের সত্যিকারের বন্ধু। তারা কেবলই প্রশংসা পছন্দ করেন। তিনি বলেন, মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার জন্য এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে আমরা চেষ্টা করছি। গত ১৫ বছর তার আরও অবনমন ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ২৬৬ জন সাংবাদিক খুনের মামলার আসামি হয়েছেন। এটা সারাবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। মব কালচারের কারণে এসব সাংবাদিক অফিসে যেতেও ভয় পান। এই পরিবেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা হতে পারে না।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যা মামলা দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এ থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি। পুলিশি তদন্ত সবসময় সঠিক গতিতে এগোয় না। অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা করছে মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিত করতে। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে নোয়াবের প্রতি আহ্বান জানান।
বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি আবদুল হাকিম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নোয়াবের সহসভাপতি এ এস এম শহীদুল্লাহ খান বাদল। অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ওয়ার্দা আশরাফ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, মানবজমিনের সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ ও সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী।
বিশিষ্টজনের মধ্যে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ অংশ নেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন রহমান, সায়হাম গ্রুপের এমডি সৈয়দ শাফকাত আহমেদ, পূবালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার, বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, অর্থনীতিবিদ মাসরুর রিয়াজ, বাংলাদেশ চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রীতি চক্রবর্তী, ওরিয়ান গ্রুপের এমডি সালমান করিম, বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ।