Samakal:
2025-11-03@09:31:55 GMT

খালপাড়ে দুই হাজার দখলদার

Published: 13th, May 2025 GMT

খালপাড়ে দুই হাজার দখলদার

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দনপুর বাঁওড়ের সঙ্গে সংযুক্ত ভবানীপুর থেকে সদরের বাকড়ি বাজার সংলগ্ন নবগঙ্গা নদীতে মিশেছে একটি খাল। এটি বিভিন্ন এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাঁওড়ে মাছ চাষের জন্য নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মফিজুল ইসলামসহ অন্যরা তিন বছর আগে বাঁধ নির্মাণ করেন। এতে পানির প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। 
বাকড়ি বাজার এলাকায় নবগঙ্গা নদীর পাশে ২০ বছর আগে শাহেদ জোয়ারদার নামে এক ব্যক্তি খালের জমি দখল করে দুটি বড় পুকুর কাটেন। তাঁর মৃত্যুর পর পুকুর দুটি ভোগদখল করছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও হরিশংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খোন্দকার ফারুকুজ্জামান ফরিদ। অবশ্য ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি পলাতক। 
জেলার বিভিন্ন অংশে এভাবে সরকারি খাল দখল হয়ে যাওয়ায় সেচ ও পানি নিষ্কাশনে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদনও। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ২১৪টি সেচ খাল ও ১৪২টি পানি নিষ্কাশন খাল রয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৯৬৮ কিলোমিটার। প্রতিটি খালের দু’পাশে ৫০ থেকে ১২০ ফুট সরকারি জমি রয়েছে। বাস্তবে অন্তত ৯০ শতাংশ খালের পাড় নানাভাবে দখল হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সরেজমিন হরিণাকুণ্ডুর কুলবাড়িয়া বাজার ও আশপাশের এলাকায় গিয়ে খাল দখলের নানান চিত্র পাওয়া গেছে। বাজার ও আশপাশের এলাকায় সেচ খালের দু’পাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক কাঁচা-পাকা ও আধা পাকা ঘর। দোকানিরা বলছেন, ঘরের দাবিদারদের শতকরা ৯০ ভাগই এখানে ব্যবসা করেন না।
উপজেলার শাখারীদহ বাজারে সরকারি জমি দখল করে পাকা দোকান গড়ে তুলেছেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাজারে জায়গা কম তাই দোকান নির্মাণ করেছি। পাউবোর মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করে রেখেছি, যদি কখনও ইজারা পাওয়া যায়।’ আরেক দোকানি আব্দুল হোসেন শেখ বলেন, ‘অন্যরা করেছে, তাই দেখাদেখি আমিও পাকা দোকান করছি।’
কুলবাড়িয়া বাজারের দোকানি সাজেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, খালপাড়ের দোকানগুলো বহু বছর আগে তৈরি করা। দখলদারদের অধিকাংশই দোকান ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। অনেকে নিজে ব্যবসা করেন না। এ বাজারের যারা খাল দখল করেছেন, তাদের অধিকাংশই রাজনীতি করেন না।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শাখারীদহ বাজার এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি নিষ্কাশন খালের দু’ধারে ও ভেতরে সারিবদ্ধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা-আধা পাকা অসংখ্য স্থাপনা। প্রায় ২৫ বছরের বেশি সময় এভাবে বাজারের আশপাশে চলছে দখলদারিত্ব। স্থানীয় লোকজন বলছেন, একজনের দেখাদেখি একে একে এমন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন এলাকার প্রভাবশালী ও খালপাড়ের মানুষ। 
২০২২ সালে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাত ব্রিজ, শৈলকুপার কাতলাগাড়ী বাজার এবং ২০২১ সালে কোটচাঁদপুর এলাকার কয়েকটি খালে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পাউবো। এর পরও এসব খালের ধারে প্রায় দুই হাজারের বেশি দখলদার রয়েছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাউবো জানিয়েছে, জেলার বিভিন্ন স্থানে খালের পাশে ৭ হাজার ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা আছে। এর মধ্যে ২ হাজার একর জমিই দখল হয়ে গেছে।
স্থানীয় ভবানীপুর গ্রামের কৃষক অমরেশ কুমার রায় বলেন, মাছ চাষের সুবিধার্থে বাঁওড়ের ধারে আওয়ামী লীগের নেতারা বাঁধ দেওয়ার ফলে ঠিকমতো বাঁওড় ও মাঠের পানি নিষ্কাশন হয় না। ফলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সদর উপজেলার পরানপুর গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল উদ্দিন বিশ্বাসের ভাষ্য, সরকারি খালের জমিতে কেউ পুকুর তৈরি করছেন, কেউ স্থাপনা তৈরি করছেন। এগুলো উচ্ছেদ করা জরুরি। স্থাপনা ও বাঁধের কারণে পানি নিষ্কাশন হয় না, সেচ সুবিধাও পাওয়া যায় না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দখলের মাত্রা কয়েক গুণ বেড়েছে বলে জানান ঝিনাইদহ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য আমিনুর রহমান টুকু। তিনি বলেন, দখলের বিরুদ্ধে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষসহ সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এর সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ অভিযানও অব্যাহত রাখতে হবে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, লোকবল সংকটসহ নানা কারণে উচ্ছেদ অভিযানে কিছুটা সমস্যা হয়। বেশ কিছু এলাকায় দখলদারের তালিকা করা হয়েছে। অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ ল ভর ট ন র ম ণ কর র এল ক য় উপজ ল র দখলদ র আওয় ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি

ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।

যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।

কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা  সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ
  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান