ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দনপুর বাঁওড়ের সঙ্গে সংযুক্ত ভবানীপুর থেকে সদরের বাকড়ি বাজার সংলগ্ন নবগঙ্গা নদীতে মিশেছে একটি খাল। এটি বিভিন্ন এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাঁওড়ে মাছ চাষের জন্য নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মফিজুল ইসলামসহ অন্যরা তিন বছর আগে বাঁধ নির্মাণ করেন। এতে পানির প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
বাকড়ি বাজার এলাকায় নবগঙ্গা নদীর পাশে ২০ বছর আগে শাহেদ জোয়ারদার নামে এক ব্যক্তি খালের জমি দখল করে দুটি বড় পুকুর কাটেন। তাঁর মৃত্যুর পর পুকুর দুটি ভোগদখল করছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও হরিশংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খোন্দকার ফারুকুজ্জামান ফরিদ। অবশ্য ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি পলাতক।
জেলার বিভিন্ন অংশে এভাবে সরকারি খাল দখল হয়ে যাওয়ায় সেচ ও পানি নিষ্কাশনে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদনও। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ২১৪টি সেচ খাল ও ১৪২টি পানি নিষ্কাশন খাল রয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৯৬৮ কিলোমিটার। প্রতিটি খালের দু’পাশে ৫০ থেকে ১২০ ফুট সরকারি জমি রয়েছে। বাস্তবে অন্তত ৯০ শতাংশ খালের পাড় নানাভাবে দখল হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সরেজমিন হরিণাকুণ্ডুর কুলবাড়িয়া বাজার ও আশপাশের এলাকায় গিয়ে খাল দখলের নানান চিত্র পাওয়া গেছে। বাজার ও আশপাশের এলাকায় সেচ খালের দু’পাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক কাঁচা-পাকা ও আধা পাকা ঘর। দোকানিরা বলছেন, ঘরের দাবিদারদের শতকরা ৯০ ভাগই এখানে ব্যবসা করেন না।
উপজেলার শাখারীদহ বাজারে সরকারি জমি দখল করে পাকা দোকান গড়ে তুলেছেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাজারে জায়গা কম তাই দোকান নির্মাণ করেছি। পাউবোর মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করে রেখেছি, যদি কখনও ইজারা পাওয়া যায়।’ আরেক দোকানি আব্দুল হোসেন শেখ বলেন, ‘অন্যরা করেছে, তাই দেখাদেখি আমিও পাকা দোকান করছি।’
কুলবাড়িয়া বাজারের দোকানি সাজেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, খালপাড়ের দোকানগুলো বহু বছর আগে তৈরি করা। দখলদারদের অধিকাংশই দোকান ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। অনেকে নিজে ব্যবসা করেন না। এ বাজারের যারা খাল দখল করেছেন, তাদের অধিকাংশই রাজনীতি করেন না।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শাখারীদহ বাজার এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি নিষ্কাশন খালের দু’ধারে ও ভেতরে সারিবদ্ধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা-আধা পাকা অসংখ্য স্থাপনা। প্রায় ২৫ বছরের বেশি সময় এভাবে বাজারের আশপাশে চলছে দখলদারিত্ব। স্থানীয় লোকজন বলছেন, একজনের দেখাদেখি একে একে এমন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন এলাকার প্রভাবশালী ও খালপাড়ের মানুষ।
২০২২ সালে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাত ব্রিজ, শৈলকুপার কাতলাগাড়ী বাজার এবং ২০২১ সালে কোটচাঁদপুর এলাকার কয়েকটি খালে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পাউবো। এর পরও এসব খালের ধারে প্রায় দুই হাজারের বেশি দখলদার রয়েছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাউবো জানিয়েছে, জেলার বিভিন্ন স্থানে খালের পাশে ৭ হাজার ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা আছে। এর মধ্যে ২ হাজার একর জমিই দখল হয়ে গেছে।
স্থানীয় ভবানীপুর গ্রামের কৃষক অমরেশ কুমার রায় বলেন, মাছ চাষের সুবিধার্থে বাঁওড়ের ধারে আওয়ামী লীগের নেতারা বাঁধ দেওয়ার ফলে ঠিকমতো বাঁওড় ও মাঠের পানি নিষ্কাশন হয় না। ফলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সদর উপজেলার পরানপুর গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল উদ্দিন বিশ্বাসের ভাষ্য, সরকারি খালের জমিতে কেউ পুকুর তৈরি করছেন, কেউ স্থাপনা তৈরি করছেন। এগুলো উচ্ছেদ করা জরুরি। স্থাপনা ও বাঁধের কারণে পানি নিষ্কাশন হয় না, সেচ সুবিধাও পাওয়া যায় না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দখলের মাত্রা কয়েক গুণ বেড়েছে বলে জানান ঝিনাইদহ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য আমিনুর রহমান টুকু। তিনি বলেন, দখলের বিরুদ্ধে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষসহ সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এর সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ অভিযানও অব্যাহত রাখতে হবে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, লোকবল সংকটসহ নানা কারণে উচ্ছেদ অভিযানে কিছুটা সমস্যা হয়। বেশ কিছু এলাকায় দখলদারের তালিকা করা হয়েছে। অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: খ ল ভর ট ন র ম ণ কর র এল ক য় উপজ ল র দখলদ র আওয় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের বর্বরতার অবসান চান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের বর্বরতার অবসান চান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লিভিট।
তিনি বলেছেন, “এই যুদ্ধে গাজা ও ইসরায়েল থেকে যেসব ছবি আসছে সেগুলো হৃদয়বিদারক। প্রেসিডেন্ট এসব আর দেখতে চান না। তিনি জীবন রক্ষা করতে চান।” সূত্র: আলজাজিরা
হোয়াইট হাউসের এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করাকে তারা প্রাধান্য দিচ্ছেন।
এদিকে আগামী সোমবার হোয়াইট হাউসে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন। সাধারণ ইসরায়েলিদের অভিযোগ, এ দখলদারের কারণে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডেরমার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। নেতানিয়াহুর আস্থাভাজন এ দখলদার মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইরান যুদ্ধ ও গাজার যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করবেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। আড়াই বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে শুধু সরকারি হিসেবেই ৫৬ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।