Samakal:
2025-05-14@00:35:00 GMT

খালপাড়ে দুই হাজার দখলদার

Published: 13th, May 2025 GMT

খালপাড়ে দুই হাজার দখলদার

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দনপুর বাঁওড়ের সঙ্গে সংযুক্ত ভবানীপুর থেকে সদরের বাকড়ি বাজার সংলগ্ন নবগঙ্গা নদীতে মিশেছে একটি খাল। এটি বিভিন্ন এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাঁওড়ে মাছ চাষের জন্য নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মফিজুল ইসলামসহ অন্যরা তিন বছর আগে বাঁধ নির্মাণ করেন। এতে পানির প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। 
বাকড়ি বাজার এলাকায় নবগঙ্গা নদীর পাশে ২০ বছর আগে শাহেদ জোয়ারদার নামে এক ব্যক্তি খালের জমি দখল করে দুটি বড় পুকুর কাটেন। তাঁর মৃত্যুর পর পুকুর দুটি ভোগদখল করছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও হরিশংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খোন্দকার ফারুকুজ্জামান ফরিদ। অবশ্য ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি পলাতক। 
জেলার বিভিন্ন অংশে এভাবে সরকারি খাল দখল হয়ে যাওয়ায় সেচ ও পানি নিষ্কাশনে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদনও। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ২১৪টি সেচ খাল ও ১৪২টি পানি নিষ্কাশন খাল রয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৯৬৮ কিলোমিটার। প্রতিটি খালের দু’পাশে ৫০ থেকে ১২০ ফুট সরকারি জমি রয়েছে। বাস্তবে অন্তত ৯০ শতাংশ খালের পাড় নানাভাবে দখল হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সরেজমিন হরিণাকুণ্ডুর কুলবাড়িয়া বাজার ও আশপাশের এলাকায় গিয়ে খাল দখলের নানান চিত্র পাওয়া গেছে। বাজার ও আশপাশের এলাকায় সেচ খালের দু’পাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক কাঁচা-পাকা ও আধা পাকা ঘর। দোকানিরা বলছেন, ঘরের দাবিদারদের শতকরা ৯০ ভাগই এখানে ব্যবসা করেন না।
উপজেলার শাখারীদহ বাজারে সরকারি জমি দখল করে পাকা দোকান গড়ে তুলেছেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাজারে জায়গা কম তাই দোকান নির্মাণ করেছি। পাউবোর মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করে রেখেছি, যদি কখনও ইজারা পাওয়া যায়।’ আরেক দোকানি আব্দুল হোসেন শেখ বলেন, ‘অন্যরা করেছে, তাই দেখাদেখি আমিও পাকা দোকান করছি।’
কুলবাড়িয়া বাজারের দোকানি সাজেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, খালপাড়ের দোকানগুলো বহু বছর আগে তৈরি করা। দখলদারদের অধিকাংশই দোকান ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। অনেকে নিজে ব্যবসা করেন না। এ বাজারের যারা খাল দখল করেছেন, তাদের অধিকাংশই রাজনীতি করেন না।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শাখারীদহ বাজার এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি নিষ্কাশন খালের দু’ধারে ও ভেতরে সারিবদ্ধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে পাকা-আধা পাকা অসংখ্য স্থাপনা। প্রায় ২৫ বছরের বেশি সময় এভাবে বাজারের আশপাশে চলছে দখলদারিত্ব। স্থানীয় লোকজন বলছেন, একজনের দেখাদেখি একে একে এমন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন এলাকার প্রভাবশালী ও খালপাড়ের মানুষ। 
২০২২ সালে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাত ব্রিজ, শৈলকুপার কাতলাগাড়ী বাজার এবং ২০২১ সালে কোটচাঁদপুর এলাকার কয়েকটি খালে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পাউবো। এর পরও এসব খালের ধারে প্রায় দুই হাজারের বেশি দখলদার রয়েছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাউবো জানিয়েছে, জেলার বিভিন্ন স্থানে খালের পাশে ৭ হাজার ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা আছে। এর মধ্যে ২ হাজার একর জমিই দখল হয়ে গেছে।
স্থানীয় ভবানীপুর গ্রামের কৃষক অমরেশ কুমার রায় বলেন, মাছ চাষের সুবিধার্থে বাঁওড়ের ধারে আওয়ামী লীগের নেতারা বাঁধ দেওয়ার ফলে ঠিকমতো বাঁওড় ও মাঠের পানি নিষ্কাশন হয় না। ফলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সদর উপজেলার পরানপুর গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল উদ্দিন বিশ্বাসের ভাষ্য, সরকারি খালের জমিতে কেউ পুকুর তৈরি করছেন, কেউ স্থাপনা তৈরি করছেন। এগুলো উচ্ছেদ করা জরুরি। স্থাপনা ও বাঁধের কারণে পানি নিষ্কাশন হয় না, সেচ সুবিধাও পাওয়া যায় না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দখলের মাত্রা কয়েক গুণ বেড়েছে বলে জানান ঝিনাইদহ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য আমিনুর রহমান টুকু। তিনি বলেন, দখলের বিরুদ্ধে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষসহ সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এর সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ অভিযানও অব্যাহত রাখতে হবে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, লোকবল সংকটসহ নানা কারণে উচ্ছেদ অভিযানে কিছুটা সমস্যা হয়। বেশ কিছু এলাকায় দখলদারের তালিকা করা হয়েছে। অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ ল ভর ট ন র ম ণ কর র এল ক য় উপজ ল র দখলদ র আওয় ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো এক সাংবাদিক নিহত

ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে। খান ইউনিসে অবস্থিত নাসের মেডিক্যাল কমপ্লেক্সের বার্ন ইউনিটে দখলদার বাহিনীর বোমা হামলায় হাসান এসলাইহ নামে আরো এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। খবর আল জাজিরার।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস সাংবাদিক হাসান এসলাইহের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং বলেছে যে, তারা ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক ‘ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যবস্তু, হত্যা এবং গুপ্তহত্যার’ তীব্র নিন্দা জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসলাইহকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ‘হত্যা’ করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ফলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় সাংবাদিকদের মধ্যে নিহতের মোট সংখ্যা ২১৫ জনে দাঁড়িয়েছে।

আরো পড়ুন:

যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টায় মার্কিন–ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিচ্ছে হামাস

গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫২ হাজার ৮০০ ছাড়াল

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস আরো বলেছে, “আমরা ইসরায়েলি দখলদারিত্ব, মার্কিন প্রশাসন এবং গণহত্যার অপরাধে সহায়তাকারী দেশগুলো, যেমন যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্সকে এই জঘন্য, নৃশংস অপরাধের জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী করছি।”

এদিকে নাসের হাসপাতালে হামলা চালানোর কথা নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা নাসের হাসপাতালের এলাকায় ‘একটি লক্ষ্যবস্তু আক্রমণ চালিয়েছে’। ইসরায়েলের দাবি, সেখানে হামাস ‘একটি কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ কমপ্লেক্স পরিচালনা করছিল’।

তবে দাবির সমর্থনে তারা কোনো প্রমাণ দেয়নি। গত মাসে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের কাছে সাংবাদিকদের আশ্রয় নেওয়া একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় এসলাইহ আহত হন। সে সময় কমপক্ষে দুজন ওই হামলায় নিহত হয়।

অব্যাহত হামলার পাশাপাশি  প্রায় ৭১ দিন ধরে গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ জারি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অবরোধের কারণে গাজায় কোনো খাবার, ওষুধ বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার ৮৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৮ জন আহত হয়েছেন। তবে সরকারি মিডিয়া অফিস নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি বলে জানিয়েছে। কারণ নিখোঁজ হওয়া হাজার হাজার মানুষকে এখন নিহতের তালিকায় রাখা হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো এক সাংবাদিক নিহত