বয়স্কদের স্ট্রোক হওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে। যেমন তাঁদের রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বেশি থাকে। তাঁদের ওজনও থাকে না নিয়ন্ত্রণে। অনেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, ধূমপান করেন এবং শারীরিক পরিশ্রম করেন না। অনেকের খাবারের মান ভালো থাকে না। এসব সমস্যা এখন কম বয়সীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেকের মাদকাসক্তিও থাকে অতিমাত্রায়। এসব স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে সুখবর হলো, আপনি চাইলেই কমাতে পারেন স্ট্রোকের ঝুঁকি। এ জন্য নিজেকে একটু পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী এখানে তেমন সাতটি পরিবর্তনের কথা বলা হলো।

১.

ধূমপান ছেড়ে দিন

যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি; অন্তত যাঁরা ধূমপান করেন না, তাঁদের চেয়ে দ্বিগুণ। ধূমপান করলে রক্তনালির দেয়াল বা ভেতরের দিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। বেড়ে যায় রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন। দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ যায় কমে। তা ছাড়া ধূমপান করলে রক্ত ঘন হয়ে যায়। ফলে সহজেই রক্ত জমাট বাঁধে। আর সেই জমাট রক্ত যখন মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়, তখন হয় স্ট্রোক।

২. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

রক্তচাপ বেশি থাকলে রক্তনালির দেয়াল দুর্বল হয়ে যায়। এতে রক্তনালি ফেটে যেতে পারে কিংবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমনকি রক্ত জমাটও বাঁধতে পারে। আর রক্ত জমাট বাঁধলে তো স্ট্রোক হবেই। তাই ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত। রক্তচাপ বাড়ার প্রবণতা দেখা দিলে সময় থাকতেই জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে বড় বিপদ থেকে বাঁচা যায়।

আরও পড়ুনস্ট্রোক মানে কেবল প‍্যারালাইসিস নয়, আরও যেসব সমস‍্যা দেখা দিতে পারে২৫ ডিসেম্বর ২০২৩৩. নিয়ন্ত্রণে রাখুন কোলেস্টেরল

উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরল একসঙ্গে থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায় প্রায় সাড়ে তিন গুণ। কোলেস্টেরল কমাতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন চর্বিযুক্ত মাংস, মাখন, পনির বা দুধের সর কম খাবেন। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম বা খেলাধুলা করেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

৪. রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখুন

রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। কারণ, বেশি শর্করা রক্তনালিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে এবং স্ট্রোক হতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন, বেশি বেশি আঁশযুক্ত খাবার ও প্রচুর পানি খান। সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ কমালে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

৫. নিয়ন্ত্রণে রাখুন ওজন

অতিরিক্ত ওজন মানেই স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। প্রায় প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের স্ট্রোক হয় শুধু স্থূল হওয়ার কারণে। যাঁদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, তাঁদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায় ২২ শতাংশ। আর যাঁরা মাত্রাতিরিক্ত স্থূল, তাঁদের স্ট্রোক করার ঝুঁকি ৬৪ শতাংশ বেশি। ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং টাইপ–২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। আর এসবই বাড়ায় স্ট্রোকের ঝুঁকি।

আরও পড়ুনহার্ট অ্যাটাকের ৬টি লক্ষণ এবং হার্ট অ‍্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করবেন২৪ মার্চ ২০২৫৬. পর্যাপ্ত ঘুমান

প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। কম ঘুম হলে রক্তচাপ বাড়তে পারে। এটা স্ট্রোকের একটা বড় কারণ। তবে বেশি ঘুমও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই চেষ্টা করুন খেলাধুলা বা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরটা সক্রিয় রাখতে। এতে ঘুম ভালো হবে।

৭. শরীর সক্রিয় রাখুন

বিশেষজ্ঞেরা বলেন, একটানা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা ভীষণ ক্ষতিকর। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম বা ৭৫ মিনিট উচ্চমাত্রার ব্যায়াম করা উত্তম। সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন বা প্রতিদিন একটু একটু করে ব্যায়াম করতে পারেন। পাশাপাশি সপ্তাহে দুই দিনের বেশি স্ট্রেন্থ ট্রেনিং বা পেশি শক্তিশালী করার ব্যায়াম করা উচিত।

শেষ কথা

ওপরের ৭টি নিয়ম মেনে চললে আপনার স্ট্রোকের ঝুঁকি অবশ্যই কমবে। তবে এমন কিছু বিষয় আছে, যা আমরা চাইলেও বদলাতে পারব না। যেমন বয়স, লিঙ্গ, জাতি ও পরিবারে স্ট্রোকের ধারা; জিন এবং কিছু রোগ, যা জন্মের পরই হয়। যেমন পুরুষের তুলনায় নারীর স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। নারীরা চাইলেও এই ঝুঁকি কমাতে পারবেন না। কারণ, কিছু বিশেষ কারণে নারীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। যেমন অন্তঃসত্ত্বা হলে বা গর্ভনিরোধক পিল খেলে। এ ছাড়া জন্মগতভাবে অনেক মানুষের রক্তনালি দুর্বল থাকে। কিছু ঝুঁকি আবার সামাজিক কারণে হয়। যেমন গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁদের আয় ও পড়ালেখার সুযোগ কম, তাঁদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।

তবে এসব সমস্যা কমবেশি সবার মধ্যেই কিছু না কিছু থাকে। তাই যা বদলানো যাবে না, সেসব নিয়ে চিন্তা না করাই ভালো; বরং যেসব পরিবর্তন আনলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো যাবে, সেসবেই মনোযোগ দিন।

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

আরও পড়ুনঘাড় ফোটালে কি স্ট্রোক হতে পারে২১ অক্টোবর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

প্রিন্সেস ডায়ানাকে নিয়ে আলোচিত পাঁচ বই

প্রিন্সেস ডায়ানাকে নিয়ে বহু জীবনী, উপন্যাস ও স্মৃতিগ্রন্থ লেখা হয়েছে। তাঁর চরিত্রটি তো শুধু ব্যক্তিগত নয়; বরং সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এমনকি অস্তিত্বগত প্রশ্নেরও জন্ম দিয়েছে। তাঁর জীবন এবং চারপাশে তৈরি হওয়া গল্পগুলো যেন একেকটি ‘মিথ’। তার দুখী দুখী চোখ, মানবিক ও সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে উঠেছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের কল্পনার অংশ। ডায়ানার জীবন ও চরিত্র এতটাই জটিল আর বহুমাত্রিক যে বিভিন্ন লেখক একেক দৃষ্টিতে সেসব তাঁদের লেখায় হাজির করেছেন। কেউ তাঁকে ট্র্যাজিক চরিত্র, কেউ আত্মবিপর্যস্ত নারী, কেউবা মিডিয়া আইকন ও ভুক্তভোগী, কেউ আবার অন্তরঙ্গ সেবকের দৃষ্টিতে কিংবা পালিয়ে যাওয়া নারীর প্রতীকরূপে ডায়ানাকে তুলে এনেছেন তাদের লেখায়।

অ্যান্ড্রু মরটনের ডায়ানা: হার ট্রু স্টোরি—ইন হার ওন ওয়ার্ডস

ডায়ানাকে নিয়ে লেখা সবচেয়ে আলোচিত বই। প্রথম সংস্করণে জাঁকজমকপূর্ণ রাজকীয় জীবনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রাজকন্যা ডায়ানার নিঃসঙ্গতা এবং ব্রিটিশ রাজপরিবারের অন্দরমহলের নানা গোপনীয়তা, তাঁর সাংসারিক জীবনের নিগূঢ় বাস্তবতা উঠে আসে। রাজপরিবারের এসব দুর্ভেদ্য তথ্য উঠে আসায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

অ্যান্ড্রু মরটন

সম্পর্কিত নিবন্ধ