সাক্ষী হিসেবে সাংবাদিককে তলবের এখতিয়ার পুলিশের নেই: ক্র্যাব
Published: 20th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাবেক সহ-সভাপতি ও ইউএনবির বিশেষ প্রতিনিধি মুহম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে সাক্ষী হিসেবে পুলিশের তলবের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ক্র্যাব।
মঙ্গলবার (২০ মে) ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল ও সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ্ এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানান।
ক্র্যাব নেতারা বলেন, প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে গঠিত তদন্ত কমিটি কোনো রিপোর্টারকে এভাবে তলব করতে পারে না। তারা আদালত নন। এটি অগ্রহণযোগ্য। কর্তৃপক্ষ এভাবে তলব না করে গোপনে সাংবাদিকের কাছে তথ্য-প্রমাণ চাইতে পারেন।
আরো পড়ুন:
নাশকতা মামলায় সাংবাদিক ও আ.
সাভারে চিত্র সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ
মিরপুরে জনৈক ফাহিমকে মিথ্যা অভিযোগে পুলিশের ধরে নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগটি তদন্তাধীন আছে। ওই অভিযোগটির তদন্তের স্বার্থে মুহম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ২০ মে, ২০২৫ সকাল ১০টায় নিজ আইডি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র ও সাক্ষ্য প্রমাণসহ হাজির থাকার অনুরোধ জানায় পুলিশ।
প্রসঙ্গত, তদন্তকারী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে এর আগে নোটিশ ছাড়াই দুইবার ফোনে যোগাযোগ করে দপ্তরে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। তখন জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি ঘটনাটি ফাহিমের মুখ থেকে শুনেছেন। ঘটনার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এখানে সাক্ষ্য দেওয়ার কিছু নেই। তা সত্ত্বেও ২০ মে সকাল দশটায় কর্মকর্তার দপ্তরে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়। জাহাঙ্গীর আলম বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে শাজাহানপুর থানা থেকে একটা ফোন পান। পুলিশ কর্মকর্তা তাকে থানায় সন্ধ্যায় গিয়ে চিঠিটি গ্রহণ করতে বলেন। যদিও হাজির হওয়ার সময় দিয়েছে সকাল দশটা।
নেতারা বলেন, সাংবাদিক মুহম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তার দপ্তরে উপস্থিত হওয়ার নোটিশ স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হুমকি। ডিএমপির এ ধরনের নোটিশ অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মুক্ত স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার পরিপন্থী। অবিলম্বে এ নোটিশ প্রত্যাহারের দাবি জানান ক্র্যাব নেতারা।
ঢাকা/এমআর/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
নওগাঁয় কলেজে অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ!
নওগাঁর বদলগাছী মহিলা কলেজে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অধ্যক্ষ থাকতেও সেখানে আরেকজন নিজেকে ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’ দাবি করে কলেজ পরিচালনায় এগিয়ে এসেছেন। এতে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়েছে কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ, ক্ষোভ আর বিস্ময়।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ জুন এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কলেজ কক্ষে বসে থাকা অধ্যক্ষ মাহবুব আলমের পাশে একটি চেয়ার নিয়ে বসেন জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইমামুল হোসেন। তিনি নিজেকে এডহক কমিটির পক্ষ থেকে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করে মাহবুব আলমকে চেয়ার ছেড়ে দিতে বলেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপস্থিত শিক্ষকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, যা পরে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ইমামুল হোসেন কলেজ ত্যাগ করেন।
বর্তমান অধ্যক্ষ মাহবুব আলম জানান, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত বৈধ এডহক কমিটির সুপারিশে আমাকে পুনরায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আদালতের স্থগিতাদেশ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সুতরাং পূর্ববর্তী কমিটির কেউ ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন না।’
অন্যদিকে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইমামুল হোসেন দাবি করেন, হাইকোর্টের রায়ের ফলে বর্তমান এডহক কমিটি স্থগিত হয়েছে। ফলে পূর্বের সভাপতি লুৎফর রহমান বৈধভাবে তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। ‘আমি আইন অনুযায়ী চলছি, আদালতের রায়ের প্রতীক্ষায় আছি’, বলেন ইমামুল।
২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা মিছিল-মিটিং করলে উপজেলা প্রশাসন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এরপর গঠিত এডহক কমিটি সহকারী অধ্যাপক মমতাজ জাহানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়। পরে মাহবুব আলম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আপত্তি জানালে বিশ্ববিদ্যালয় সেই কমিটিকে পরিবর্তন করে নতুন কমিটি গঠন করে এবং মাহবুব আলমকে পদে পুনর্বহাল করে।
তবে হঠাৎই মমতাজ জাহানের মৃত্যুর পর, পূর্বের কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান আদালতের রায়ের সুযোগ নিয়ে ইমামুল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ দেন বলে দাবি করেন। যদিও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ মে তারিখে ফজলে হুদা বাবুলকে নতুন কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তিন মাসের মেয়াদও বাড়িয়েছে।
কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, একটি চেয়ারকে কেন্দ্র করে কয়েক মাস ধরে যে নাটক চলছে, তা আমাদের শিক্ষাজীবনে ভয়ানক প্রভাব ফেলছে। শিক্ষার পরিবেশ নেই, প্রতিদিন নতুন নতুন সমস্যা।
বর্তমান কমিটির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল বলেন, আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত কাউকে জোর করে দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ নেই। নিয়ম মেনে যিনি নিয়োগ পাবেন, তিনিই বৈধভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কলেজে চলমান এই ‘দ্বৈত অধ্যক্ষ’ সংকট নিরসনে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যা স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনিক অচলাবস্থার শঙ্কা তৈরি করেছে।
সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল আরও বলেন, চেয়ার দখলের লড়াইয়ের ফলে বদলগাছী মহিলা কলেজে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ও আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনা না আসলে কলেজজুড়ে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়তে পারে, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ।