অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ‘করিডোর’ নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করেনি এবং করবেও না। তবে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ত্রাণ সরবরাহের একটি ‘চ্যানেল’ তৈরির জাতিসংঘের প্রস্তাব বিবেচনা করছে ঢাকা।

বুধবার দুপুরে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিকে একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন খলিলুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশে একটি করিডোর দেওয়ার যে গুজব তৈরি হয়েছে, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিচ্ছি, করিডোর নিয়ে আমাদের সাথে কারো কোনও কথা হয়নি এবং কারো সাথে কোনও কথা হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাউকে করিডোর দিচ্ছি না। আমরা যেটা করছি, যেহেতু আরাকানে কোনও সাহায্য-সহযোগিতা, এইড উপকরণ অন্য কোনও সাপ্লাই রুট দিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জাতিসংঘ আমাদের বলল, কিছুটা দূরে তো বর্ডার। আপনার এইটুকু আমাদের সাহায্য করবেন, যাতে আমরা ওপারে নিয়ে যেতে পারি। জাতিসংঘ তার বিভিন্ন সহযোগীদের মাধ্যমে রাখাইনের ভেতরে যেসব চ্যানেল আছে, সেটা ব্যবহার করে রাখাইনের জনগণের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেবেন।’

খলিলুর রহমান বলেন, ‘আরাকানের যে অবস্থা, তাতে করিডোরের কোনো প্রয়োজন নেই। করিডোর সৃষ্টি করে লোকজনের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কোনো প্রয়োজনীয়তা এখন নেই। যেটা প্রয়োজন আছে, সেটা হলো ত্রাণ সরবরাহ করা।’

‘এটা করতে পারলে সেখানকার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হবে এবং সেই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করতে পারবো। আরাকানের অবস্থা যতদিন অস্থিতিশীল থাকবে, ততদিন আমরা প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলতে পারবো না। আর প্রত্যাবাসনের কথা বলতে না পারলে প্রত্যাবাসন কৌশলের কথাও বলতে পারবো না,’ বলেন খলিলুর রহমান।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের যে কার্যক্রম মিয়ানমারে চলছে, সেটা রাখাইনে আর চলা সম্ভব না। কারণ যুদ্ধাবস্থার কারণে মানবিক ত্রাণ রাখাইনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গত মার্চ মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশে এসে বলেছিলেন, রাখাইনের ত্রাণ সাহায্য দিতে পারি কি-না। আমরা বিষয়টা বিবেচনা করছি। কিন্তু এতে বেশ কিছু আবশ্যকতা আছে।’

তিনি জানান, জাতিসংঘের তরফ থেকে আরাকান আর্মিকে জানানো হয়েছে, এই সাহায্য বা সহায়তা প্রাপ্তি বা বিতরণের ব্যাপারে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে শঙ্কা হচ্ছে, আরাকানের যে নতুন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তামূলক প্রশাসন তৈরি হয়েছে, সেখানে আমরা রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের চিহ্ন দেখছি না। আমরা আরাকান আর্মিকে সরাসরি বলেছি, আমরা কোনোরকম ইথনিক ক্লিনজিং (জাতিগত নির্মূল অভিযান) সহ্য করবো না। তাদের বলেছি, তারা যদি শুধু রাখাইনদের নিয়ে রাজ্য পরিচালনা করতে চায়, তাহলে তারা হবে একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র।’

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ মনে করে এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন। এই কাজ করার সবগুলো অপশন আমাদের টেবিলে থাকবে। আমাদের সকল কূটনৈতিক ও অন্যান্য প্রচেষ্টা দিয়ে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। আমরা এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চাই।’

রাখাইনে নিয়ে যাওয়ার পরে ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে, এই প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, ‘পুরো কন্ট্রোল থাকবে জাতিসংঘের, ওপারে নিয়ে যাওয়ার পরে সেখানকার নিরাপত্তা, সবকিছু তাদের দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্ব সীমান্ত পর্যন্ত, সেখানে মাদক পাচার হচ্ছে কিনা, অন্য কিছু হচ্ছে কিনা, সেটা আমরা দেখবো। দুই পক্ষ সম্মত হলে, কনফ্লিক্ট কমলেই শুধু আমরা যাবো।’

ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ দেওয়া হলে কোন রুটে সেটা হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘দুই পক্ষ, সকল পক্ষ যদি রাজি হয়, তাহলে আমরা সবার সঙ্গে বসে সেটা ঠিক করবো। এটা কেবলমাত্র সরকারের নয়, সকল অংশীজনের সাথে বসে আমরা সেটা ঠিক করবো। এখনো সেই পর্যায়ে আমরা যাইনি।’

করিডোর ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সাথে কোনো মতপার্থক্য নেই। সেনাপ্রধানের সাথে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা এক সমতলে অবস্থান করছি। এ নিয়ে কোনো ফাঁকফোকর নেই।’

তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার সুযোগ নেই, আর সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।’

গত ২৭শে এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সেই প্রসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘ফরেন অ্যাডভাইজারের সঙ্গে আমার রোজ কথা হয়। উনি করিডোর শব্দটা বলেই কিন্তু সেটা কারেক্ট করেছিলেন, উনি পাথওয়ে বলেছিলেন। সেটা ছিল স্লিপ অব ট্যাং, সেটা পরে কারেক্ট করেছিলেন, উনি কিন্তু পরে সেটা আর কখনোই বলেননি।’

যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা, ‘এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমেরিকা কেন, আমরা কারও চাপের মুখে নেই। কেউ চাপ দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সবার সঙ্গে কথা বলছি। তাহলে (চাপ) যেটা নেই, সেটা তো আমি অনুভব করতে পারছি না।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ড র উপদ ষ ট আর ক ন আম দ র কর ড র র খ ইন সরক র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সন্দ্বীপে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় স্কুলছাত্রকে হত্যা

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে মাদক, দখলবাজি ও জনদুর্ভোগের প্রতিবাদ করায় দশম শ্রেণির ছাত্র রিফাতকে (১৭) হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে উপজেলার মগধরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জামসেদুর রহমানের ছেলে।  বাবা জামসেদুর সন্দ্বীপ উপজেলা শ্রমিকদলের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও মগধরা ইউনিয়ন বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক।

সাংবাদিকদের দেওয়া এক লিখিত বিবৃতিতে জামসেদর রহমান অভিযোগ করেন, ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় সারিকাইত ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী রাজুর নেতৃত্বে আমার ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র রিফাতের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। তারা ৪ ঘণ্টা ছেলেকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। রাজু বাহিনীর হামলায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে রিফাত মৃত্যুবরণ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সারিকাইত ইউনিয়ন থেকে বহিরাগতরা মগধরা ইউনিয়নে অবৈধ ব্যবসা করতো। আমার ছেলে মাদক, অবৈধ মাটি কাটা, দখলবাজি ও জনদুর্ভোগের প্রতিবাদ করতো। এসব নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি ১৮ মে ইউএনও’র কাছে একটি অভিযোগ দেওয়ার   পরদিন ১৯ মে রাজু বাহিনী আমার ছেলেকে হত্যা করে।,

স্থানীয়রা জানান, ১৯ মে সন্ধ্যা ৮টায় জামসেদুর রহমানের ছেলে রিফাতের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে রিফাতের ওপর হামলা হয়। প্রথমে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তার মৃত্যু হয়।

সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, আমরা খবর পেয়ে আহত রিফাতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ