করিডোর নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি, ত্রাণ চ্যানেল বিবেচনাধীন: খলিলুর রহমান
Published: 21st, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ‘করিডোর’ নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করেনি এবং করবেও না। তবে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ত্রাণ সরবরাহের একটি ‘চ্যানেল’ তৈরির জাতিসংঘের প্রস্তাব বিবেচনা করছে ঢাকা।
বুধবার দুপুরে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিকে একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন খলিলুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশে একটি করিডোর দেওয়ার যে গুজব তৈরি হয়েছে, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিচ্ছি, করিডোর নিয়ে আমাদের সাথে কারো কোনও কথা হয়নি এবং কারো সাথে কোনও কথা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাউকে করিডোর দিচ্ছি না। আমরা যেটা করছি, যেহেতু আরাকানে কোনও সাহায্য-সহযোগিতা, এইড উপকরণ অন্য কোনও সাপ্লাই রুট দিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জাতিসংঘ আমাদের বলল, কিছুটা দূরে তো বর্ডার। আপনার এইটুকু আমাদের সাহায্য করবেন, যাতে আমরা ওপারে নিয়ে যেতে পারি। জাতিসংঘ তার বিভিন্ন সহযোগীদের মাধ্যমে রাখাইনের ভেতরে যেসব চ্যানেল আছে, সেটা ব্যবহার করে রাখাইনের জনগণের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেবেন।’
খলিলুর রহমান বলেন, ‘আরাকানের যে অবস্থা, তাতে করিডোরের কোনো প্রয়োজন নেই। করিডোর সৃষ্টি করে লোকজনের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কোনো প্রয়োজনীয়তা এখন নেই। যেটা প্রয়োজন আছে, সেটা হলো ত্রাণ সরবরাহ করা।’
‘এটা করতে পারলে সেখানকার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হবে এবং সেই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করতে পারবো। আরাকানের অবস্থা যতদিন অস্থিতিশীল থাকবে, ততদিন আমরা প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলতে পারবো না। আর প্রত্যাবাসনের কথা বলতে না পারলে প্রত্যাবাসন কৌশলের কথাও বলতে পারবো না,’ বলেন খলিলুর রহমান।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের যে কার্যক্রম মিয়ানমারে চলছে, সেটা রাখাইনে আর চলা সম্ভব না। কারণ যুদ্ধাবস্থার কারণে মানবিক ত্রাণ রাখাইনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গত মার্চ মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশে এসে বলেছিলেন, রাখাইনের ত্রাণ সাহায্য দিতে পারি কি-না। আমরা বিষয়টা বিবেচনা করছি। কিন্তু এতে বেশ কিছু আবশ্যকতা আছে।’
তিনি জানান, জাতিসংঘের তরফ থেকে আরাকান আর্মিকে জানানো হয়েছে, এই সাহায্য বা সহায়তা প্রাপ্তি বা বিতরণের ব্যাপারে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে শঙ্কা হচ্ছে, আরাকানের যে নতুন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তামূলক প্রশাসন তৈরি হয়েছে, সেখানে আমরা রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের চিহ্ন দেখছি না। আমরা আরাকান আর্মিকে সরাসরি বলেছি, আমরা কোনোরকম ইথনিক ক্লিনজিং (জাতিগত নির্মূল অভিযান) সহ্য করবো না। তাদের বলেছি, তারা যদি শুধু রাখাইনদের নিয়ে রাজ্য পরিচালনা করতে চায়, তাহলে তারা হবে একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র।’
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ মনে করে এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন। এই কাজ করার সবগুলো অপশন আমাদের টেবিলে থাকবে। আমাদের সকল কূটনৈতিক ও অন্যান্য প্রচেষ্টা দিয়ে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। আমরা এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চাই।’
রাখাইনে নিয়ে যাওয়ার পরে ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে, এই প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, ‘পুরো কন্ট্রোল থাকবে জাতিসংঘের, ওপারে নিয়ে যাওয়ার পরে সেখানকার নিরাপত্তা, সবকিছু তাদের দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্ব সীমান্ত পর্যন্ত, সেখানে মাদক পাচার হচ্ছে কিনা, অন্য কিছু হচ্ছে কিনা, সেটা আমরা দেখবো। দুই পক্ষ সম্মত হলে, কনফ্লিক্ট কমলেই শুধু আমরা যাবো।’
ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ দেওয়া হলে কোন রুটে সেটা হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘দুই পক্ষ, সকল পক্ষ যদি রাজি হয়, তাহলে আমরা সবার সঙ্গে বসে সেটা ঠিক করবো। এটা কেবলমাত্র সরকারের নয়, সকল অংশীজনের সাথে বসে আমরা সেটা ঠিক করবো। এখনো সেই পর্যায়ে আমরা যাইনি।’
করিডোর ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সাথে কোনো মতপার্থক্য নেই। সেনাপ্রধানের সাথে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা এক সমতলে অবস্থান করছি। এ নিয়ে কোনো ফাঁকফোকর নেই।’
তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার সুযোগ নেই, আর সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।’
গত ২৭শে এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সেই প্রসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘ফরেন অ্যাডভাইজারের সঙ্গে আমার রোজ কথা হয়। উনি করিডোর শব্দটা বলেই কিন্তু সেটা কারেক্ট করেছিলেন, উনি পাথওয়ে বলেছিলেন। সেটা ছিল স্লিপ অব ট্যাং, সেটা পরে কারেক্ট করেছিলেন, উনি কিন্তু পরে সেটা আর কখনোই বলেননি।’
যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা, ‘এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমেরিকা কেন, আমরা কারও চাপের মুখে নেই। কেউ চাপ দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সবার সঙ্গে কথা বলছি। তাহলে (চাপ) যেটা নেই, সেটা তো আমি অনুভব করতে পারছি না।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ড র উপদ ষ ট আর ক ন আম দ র কর ড র র খ ইন সরক র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
সৌদি আরবে এক দশকে মাদক পাচারের অপরাধে ৬০০ জনের মৃত্যুদণ্ড, অধিকাংশই বিদেশি
সৌদি আরব গত এক দশকে মাদকসংক্রান্ত অপরাধে যে পরিমাণ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে, তা রীতিমতো ‘আতঙ্কজনক’। এসব মানুষের অধিকাংশই বিদেশি নাগরিক। এমনটাই জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
অ্যামনেস্টির তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে মাদকসংশ্লিষ্ট অপরাধে প্রায় ৬০০ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশই ছিলেন পাকিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, নাইজেরিয়া ও মিসরের মতো দেশ থেকে আসা বিদেশি নাগরিক।
২০২১ ও ২০২২ সালে অস্থায়ীভাবে মাদকসংশ্লিষ্ট মৃত্যুদণ্ড বন্ধ রাখার পর ২০২৪ সালে এই সংখ্যা আবার রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে যায়। শুধু ২০২৪ সালেই ১২২ এবং চলতি বছর (জুন পর্যন্ত) আরও ১১৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি বলছে, এসব মৃত্যুদণ্ড ‘অন্যায্য বিচার’ এবং ‘মানবজীবনের প্রতি নিদারুণ অবহেলার’ মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। এসব মৃত্যুদণ্ডের ঘটনায় খুব কমই আন্তর্জাতিক নজরদারি রয়েছে। সংগঠনটি সতর্ক করে বলেছে, এভাবে চলতে থাকলে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা আরও বাড়বে।
অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষক ডানা আহমেদ বলেন, ‘আমরা এক ভয়ংকর প্রবণতা দেখছি। বিদেশিদের এমন অপরাধে অপ্রত্যাশিত হারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, যেসব অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধানই থাকা উচিত নয়।’
ডানা আরও বলেন, সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা করানো এমনিতেই কঠিন। কারণ, দেশটির অর্থ ও রাজনৈতিক প্রভাব অনেক বেশি। এখন মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে এই নজরদারিও আরও কমে গেছে।
অ্যামনেস্টি বলেছে, অনেক বিদেশি কাজের খোঁজে সৌদি আরবে গিয়ে মাদক পাচারের ফাঁদে পড়েন। তাদের ঠকানো হয় এবং অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়। তাদের যেটুকু আর্থিক লাভ দেওয়া হয়, সেটি মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকির তুলনায় একেবারেই নগণ্য।
একটি ঘটনায় দেখা গেছে, সাতজন ইথিওপীয় এবং একজন সোমালি নাগরিককে ১৫৩ কেজি গাঁজা পাচারের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই মাদকের বাজারমূল্য প্রায় ৩৮ লাখ ডলার হলেও আদালতে তারা বলেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে মাত্র ২৬৭ মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
অ্যামনেস্টি আরও বলেছে, যেসব বিদেশি দরিদ্র, কম শিক্ষিত এবং সামাজিকভাবে পিছিয়ে, তাঁরা সহজেই প্রতারণার শিকার হন এবং সৌদি আরবে আইনগত সহায়তা পাওয়াও তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অনেকেই আইনজীবী পাননি। নিজ দেশের কূটনৈতিক সহায়তা খুবই কম ছিল এবং প্রয়োজনীয় দোভাষী সুবিধাও পাননি।
অন্তত চারটি ঘটনার নথিতে দেখা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বলেছেন, তাঁদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়।
আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো অনেক বন্দী জানতেনই না, তাঁদের আপিলের কী অবস্থা বা কবে তাদের ফাঁসি হবে। কিছু ব্যক্তিকে তো মৃত্যুর এক দিন আগে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, পরদিন তাঁদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
অ্যামনেস্টির আঞ্চলিক উপপরিচালক ক্রিস্টিন বেকারলে বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড হলো সবচেয়ে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অবমাননাকর শাস্তি।’
মৃত্যুদণ্ড কার্যক্রম বন্ধ করতে এবং মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলতে সৌদি আরবের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।