বিএনপি নেতার গাড়িবহরে হামলায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 24th, May 2025 GMT
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাটের নড়াইলে তার গাড়িবহরে হামলা, ভাঙচুরের পাঁচ দিন পর মামলা হয়েছে।
শুক্রবার (২৩ মে) রাতে কালিয়া উপজেলা বিএনপির সহ-যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মিঠু বাদী হয়ে নড়াগাতি থানায় মামলা করেন।
এ মামলায় কালিয়া উপজেলা বিএনপি সহ-সভাপতি আসজাদুর রহমান মিঠু বিশ্বাস, নড়াগাতি থানা বিএনপি সহ-সভাপতি নওশের বিশ্বাস, নড়াগাতি থানা বিএনপি সভাপতি মতিয়ার রহমান খান, কালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওহিদুজ্জামান মিলু শেখসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
অভয়নগরে কৃষক দল নেতাকে হত্যার পর ২০ বাড়িতে আগুন
দৌলতপুরে পরীক্ষা দিতে এসে হামলার শিকার ২ শিক্ষার্থী
মামলার বাদী ও এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট। গত ১৮ মে দুপুরে তিনি ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। বিকালে তাকে স্বাগত জানাতে কালিয়া উপজেলা বিএনপি, নড়াগাতি থানা বিএনপি ও কালিয়া পৌর বিএনপি এবং সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা চাপাইল ব্রিজ ঘাট এলাকায় অবস্থান করে। আব্দুল লতিফ সম্রাটকে স্বাগত জানিয়ে কয়েকটি প্রাইভেট ও শতাধিক মোটরসাইকেল বহর নিয়ে নেতাকর্মীরা নড়াগাতি থানার যোগানিয়া বাস স্ট্রান্ডে পৌঁছালে প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতা কালিয়া উপজেলা বিএনপি সহ-সভাপতি আসজাদুর রহমান মিঠু বিশ্বাসের নেতৃত্বে তার নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। এ সময় আব্দুল লতিফ সম্রাটের গাড়িবহরসহ ৪০টি মোটরসাকেইল ভাঙচুর করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে কালিয়া উপজেলা বিএনপি সহ-সভাপতি আসজাদুর রহমান মিঠু বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমি বর্তমানে ঢাকাতে অবস্থান করছি। কে বা কারা এই হামলা করেছে আমার জানা নেই। আমার লোকজনের এখানে সংশ্লিষ্টতা নেই। কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে মামলা করে থাকে সেটা মিথ্যা মামলা।’’
নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান জানান, বিএনপি নেতার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ঢাকা/শরিফুল/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র গ ড় বহর ব এনপ র স র রহম ন ত কর ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।