বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক শিল্পে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে যমুনা ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড অটোমোবাইলস লিমিটেড। ২০১৪ সালে ঢাকার অদূরে গাজীপুরের সফিপুরে তৈরি করা হয় বিশাল কারখানা কমপ্লেক্স। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষ মানবসম্পদ ও উদ্ভাবনী ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে উন্নত মানের রেফ্রিজারেটর। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মীর নিরলস পরিশ্রমে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে দেশের ৪৯০টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এই ফ্রিজ পৌঁছে দিচ্ছে যমুনা গ্রুপ। দেশের রেফ্রিজারেটরশিল্পে উল্লেখযোগ্য মাইলফলক তৈরি করে কাজ করছে যমুনা গ্রুপের যমুনা ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড অটোমোবাইলস লিমিটেডের ফ্যাক্টরি। ২৪ মে ঘুরে আসি আমরা কারখানা থেকে। সঙ্গে ছিলেন মার্কেটিং ডিরেক্টর সেলিম উল্যা সেলিম, ফ্যাক্টরি জি এম শাহাদাৎ হোসেন।

বিশাল কারখানায় চলছে বিশাল যজ্ঞ

যমুনা ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড অটোমোবাইলস লিমিটেডের, গাজীপুরে সফিপুরে অবস্থিত কারখানা কমপ্লেক্সটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও আধুনিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কয়েক শ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই বিশাল কারখানায় প্রতিদিন হাজার হাজার পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, এসি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও অটোমোবাইল পণ্য। পুরো কারখানা ঘুরে দেখা যায়, কারখানায় রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, রোবোটিক প্রযুক্তি এবং ইউরোপীয় ঘরানার উৎপাদনপ্রক্রিয়া। কাজের মান নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সুসংগঠিত কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইউনিট ও প্রযুক্তিগত গবেষণাগার। এখানে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের যৌথ তত্ত্বাবধানে ২৪ ঘণ্টা কাজ চলে। বেশ শক্তিশালী একটি পরিবহনব্যবস্থা দেখা যায়। উন্নত ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের ৪৯০টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় যমুনার পণ্য সহজেই পৌঁছে দেওয়া হয় নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থার মাধ্যমে। নিরাপত্তার জন্য পুরো কারখানা কমপ্লেক্সে রয়েছে অত্যাধুনিক সিসিটিভি, নিরাপত্তাকর্মী এবং নিয়ন্ত্রিত প্রবেশপথ। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিল্পনগরী গড়ে উঠেছে এখানে।

আধুনিক প্রযুক্তি ও রোবোটিকসের সমন্বয়ে উৎপাদনপ্রক্রিয়া

সফিপুরের কারখানায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বিভিন্ন নির্মাণ শেডে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও রোবোটিকসের ব্যবহারে সজ্জিত উৎপাদন লাইন। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে ২৪ ঘণ্টা চলমান এই কারখানায় রোবটের মাধ্যমে মান নিয়ন্ত্রণ, অটোমেটেড অ্যাসেম্বলি লাইন এবং ইউরোপীয় ঘরানার প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হয়েছে। যমুনা ইলেকট্রনিকসের মার্কেটিং ডিরেক্টর সেলিম উল্যা সেলিম বলেন, ‘প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ রেফ্রিজারেটরের গুণগত মান বজায় রাখতে এবং উৎপাদন খরচ কমাতে সহায়তা করছে। যমুনা ইলেকট্রনিকসের ফ্যাক্টরি ব্যবস্থাপনায় ইউরোপীয় মানের প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলা হয়, যা পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করে। এ ছাড়া কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আমরা সংখ্যাতত্ত্বে বিশ্বাসী নই, বরং গুণে ও মানে সেরা হতে চাই। যমুনা প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন ইনোভেশন, প্রোডাক্ট ফিচার ও ডিজাইনের রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। বাংলাদেশে যে গ্লাসডোর ফ্রিজগুলো দেখা যায়, এর প্রথম উদ্যোক্তা যমুনা ইলেকট্রনিকস। খুব সম্প্রতি আমরা বাজারে নতুন ডিজাইনের ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসংবলিত বেশ কিছু স্মার্ট রেফ্রিজারেটর বাজারজাত করেছি এবং ভোক্তাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। যমুনা রেফ্রিজারেটরে স্মার্ট কন্ট্রোলিং সিস্টেম এবং এআই প্রযুক্তি সন্নিবেশ করা হচ্ছে। আরও বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী প্রযুক্তি, উন্নত ইনভার্টার ও কুলিং সিস্টেম, পরিবেশবান্ধব উপকরণ ও গ্যাস ব্যবহার করে নতুন নতুন ইনোভেশন আনছে যমুনা রেফ্রিজারেটর।’

স্থানীয় মানুষের চাহিদা ও বাজার বিশ্লেষণ

যমুনা ইলেকট্রনিকস স্থানীয় বাজারের চাহিদা ও ক্রেতাদের রুচি বিশ্লেষণ করে পণ্য ডিজাইন ও ফিচার নির্ধারণ করে। বাংলাদেশের আবহাওয়া, বিদ্যুৎ সরবরাহের অবস্থা এবং গ্রামীণ এলাকার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে রেফ্রিজারেটরের ডিজাইন ও ফিচার নির্ধারণ করা হয়। এতে করে পণ্যগুলো স্থানীয় বাজারে দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা পায়। যমুনার রেফ্রিজারেটরে রয়েছে বিল্ট-ইন স্ট্যাবিলাইজার, যা বিদ্যুৎ ওঠানামা থেকে রক্ষা করে যন্ত্রপাতিকে দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে। এ ছাড়া অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ডোর গ্যাসকেট খাবারকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং রেফ্রিজারেটরের ভেতরে দুর্গন্ধ হওয়া প্রতিরোধ করে। টেম্পার্ড গ্লাস শেলফ ব্যবহার করায় ওজন সহনশীলতা বাড়ে এবং ফ্রিজের ভেতরের স্থান হয় আরও সংগঠিত। যমুনা ইলেকট্রনিকসের মার্কেটিং ডিরেক্টর সেলিম উল্যা সেলিম বলেন, রেগুলার রেফ্রিজারেটর মডেল ছাড়াও রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ইন্টেলিজেন্ট ইনভার্টার টেকনোলজির স্মার্ট ডাবল ডোর, টি ডোর ও ক্রস ডোর রেফ্রিজারেটর। এসব মডেল গ্রাহকের কাছে ব্যাপক সাড়া তৈরি করেছে। যমুনার রয়েছে বাংলাদেশের বেস্ট কুলিং পারফরম্যান্স ও সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী রেফ্রিজারেটর। ফ্যাক্টরিতে এমন সব ফ্রিজ তৈরি করতে দেখা যায়, যেখানে মোবাইল অ্যাপস নোটিফিকেশন (ডোর ওপেন নোটিফিকেশন), বিল্ড-ইন ব্লুটুথ মিউজিক সিস্টেম, স্মার্ট ওয়াই–ফাই কন্ট্রোল, ডিজিটাল টাচ ডিসপ্লে, মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে টেম্পারেচার কন্ট্রোল, ইন্টেলিজেন্ট ইনভার্টার টেকনোলজিসহ আরও অনেক ফিচার রয়েছে।

গবেষণা ও উন্নয়নে প্রযুক্তিগত ল্যাব

ফ্যাক্টরিতে একটি উন্নত মানের গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) ল্যাব রয়েছে, যেখানে নতুন প্রযুক্তি, ডিজাইন ও ফিচার নিয়ে গবেষণা করা হয়। এই ল্যাবের মাধ্যমে পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন, নতুন মডেল উদ্ভাবন এবং উৎপাদনপ্রক্রিয়ার দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়। চীনা প্রকৌশলী সিন হুয়ান, এজিএম (রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, প্রসেস, কোয়ালিটি) বলেন, যমুনা রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। এতে প্রতিদিনকার বিদ্যুৎ বিল কমে আসে উল্লেখযোগ্য হারে, যা শহর ও গ্রামীণ—উভয় অঞ্চলের গ্রাহকদের জন্যই সুবিধাজনক। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সীমিত, সেখানে এটি অত্যন্ত কার্যকর সমাধান। বিভিন্ন ফ্রিজে রয়েছে উন্নত এয়ারফ্লো সিস্টেম ও ফাস্টার কুলিং টেকনোলজি, যার ফলে রেফ্রিজারেটরের প্রতিটি কোণে সমানভাবে ঠান্ডা পৌঁছে যায়। এর ফলে খাবার দ্রুত ঠান্ডা হয় এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সতেজ ও নিরাপদ থাকে। বাজার থেকে আনা কাঁচা শাকসবজি বা রান্না করা খাবার দীর্ঘক্ষণ সংরক্ষণ করা যায় সহজেই। গ্রামীণ পরিবেশের জন্য এসব ফ্রিজ বেশ কার্যকর।

পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ গ্যাস

প্রতিটি যমুনা রেফ্রিজারেটরে ব্যবহার করা হয় পরিবেশবান্ধব আর–৬০০এ রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস। চীনা প্রকৌশলী জিয়া জাইসান (ডিজিএম, ফ্রিজ প্রোডাকশন)  বলেন, এই গ্যাস ওজোনস্তরের ক্ষতি করে না এবং বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ীও বটে। ফলে পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীলতা বজায় রেখেই গ্রাহকেরা ঘরে আনতে পারেন উন্নত মানের ফ্রিজ। যমুনার ফ্রিজগুলোতে রয়েছে সুপ্রশস্ত অভ্যন্তর, যেখানে ব্যবহারকারীরা প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের খাবার, পানীয়, ফলমূল ও অন্যান্য দ্রব্য সংরক্ষণ করতে পারেন। পরিবার ও ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী ছোট, মাঝারি ও বড়—বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায় এই রেফ্রিজারেটরগুলো।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র ড জ ইন পর ব শ তত ত ব প রক র উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

এত দিন কোথায় ছিলেন আমিনুল, কী করতেন

বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলন। প্রশ্ন-উত্তর পর্বের একপর্যায়ে আমিনুল ইসলাম বললেন, ‘আমার এখন যে স্কিল সেট আছে, এটা একটা প্যাকেজ। আমি ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশে যেমন কাজ করেছি, তেমনি তাজিকিস্তান বা উজবেকিস্তানেও।’ প্রথম দুটি দেশকে তো আর না জানার কোনো কারণ নেই; কিন্তু আমিনুলের বিষয়ে যাঁরা খোঁজখবর রাখেন না, তাঁদের একটু খটকাই লাগতে পারে পরের দুটি নাম শুনে।

ক্রিকেট ও তাজিকিস্তান-উজবেকিস্তান পাশাপাশি খুব পরিচিত শব্দ নয়। আসলে এক দশকের বেশি সময় ধরে এই কাজটাই করছেন আমিনুল। আইসিসির ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে বিভিন্ন দেশে ঘুরে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পরিকল্পনা সাজিয়ে এমন সব দেশে ক্রিকেটকে তিনি নিয়ে গেছেন, যাদের সঙ্গে ব্যাট-বলের সংযোগ খুব একটা নেই।

ওই দেশগুলোর কয়েকটির নাম বললে আমিনুলের কাজটা বুঝতে আরেকটু সুবিধা হওয়ার কথা—চীন, হংকং, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুর। এসিসি ও আইসিসির সঙ্গে মিলে এসব দেশে হাই পারফরম্যান্স ও অন্য প্রোগ্রামের পরিকল্পনা ও তা কীভাবে কাজে এসেছে, কোচদের কাছ থেকে তা জানার কাজ করতেন আমিনুল।

করতেন বলতে এখনো আমিনুল তা–ই করেন। এ মাসে আইসিসির সঙ্গে তাঁর আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বিসিবিতে আসার আগেই আরও এক বছরের একটা চুক্তি করে এসেছেন আমিনুল। আগামী অক্টোবরে বিসিবি নির্বাচন পর্যন্ত তাঁর সভাপতির মেয়াদ, এরপর আবার ফিরে যেতে পারেন আইসিসিতে। অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।

২০০৯ সালে বিকেএসপিতে চীন অনূর্ধ্ব–১৯ দলের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং বোঝাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম

সম্পর্কিত নিবন্ধ