তাগাদা দিয়েও ১৯ মাসের ভাড়া পান না ভবন মালিক
Published: 31st, May 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত ভবনের ভাড়া ১৯ মাস ধরে পরিশোধ করছে না কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ভবনটির মালিক পক্ষ তিন দফায় চিঠি দিয়েও সাড়া পায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভাড়া চুক্তির মূল ফাইল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হারিয়ে গেছে। যে কারণে ভাড়া পরিশোধ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ ঘটনার দায় কর্মকর্তাদের কেউ স্বীকার করছেন না।
কুষ্টিয়া শহরের পেয়ারাতলার দ্বিতলবিশিষ্ট ভবনটি দীর্ঘদিন ধরেই এই ক্লাবের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর তিন বছরের জন্য মালিক পক্ষের সঙ্গে ক্লাবের ভাড়া চুক্তি নবায়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তখন মাসিক ভাড়া ধরা হয় ৩৬ হাজার টাকা। চুক্তি অনুযায়ী মাসের ভাড়া মাসেই পরিশোধের কথা। কিন্তু তা মানা হয়নি। চুক্তি নবায়নের পর সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর একসঙ্গে ৯ মাসের ভাড়া পরিশোধ করা হয়। গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ৫ মে পর্যন্ত মালিক পক্ষ তিন দফায় চিঠি পাঠিয়ে ভাড়া পরিশোধের তাগাদা দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস থেকে ভাড়া চুক্তির মূল ফাইলটি হারিয়ে গেছে। এ কারণে তাগাদা পেয়ে চিঠি পাওয়ার পর মালিক পক্ষের কাছ থেকে চুক্তিপত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করে তারা। দুটি সংযুক্ত করে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাড়া পরিশোধের অনুমোদন চেয়ে অর্থ ও হিসাব শাখায় ফাইল পাঠানো হয়। মূল ফাইল না থাকার অজুহাতে সেটি প্রায় চার মাস ওই শাখায় পড়ে থাকে। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে কোনো কর্মকর্তাই ফাইলের খোঁজ নেননি। ৫ মে তৃতীয় দফায় মালিক পক্ষ চিঠি দিলে সেই ফাইল খুঁজে বের করা হয়।
এস্টেট অফিসের প্রধান আলাউদ্দিন ১৭ মে এ বিষয়ে বলেন, ‘মালিক পক্ষ থেকে কাগজপত্রের ফটোকপি নিয়ে নতুন ফাইল তৈরি করে হিসাব শাখায় পাঠিয়েছিলাম। মূল ফাইল না থাকায় একটু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। মাঝখানে ওই ফাইলটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে খুঁজে পাওয়া গেছে। নতুন যে মাসগুলো অতিবাহিত হয়েছে, সেগুলো যুক্ত করে দু-এক দিনের মধ্যে ফের হিসাব শাখায় পাঠাবো।’ তাঁর এই বক্তব্যের দুই সপ্তাহ পেরোলেও গতকাল শনিবার পর্যন্ত ফাইলটি একই অবস্থায় হিসাব শাখায় পড়ে আছে বলে জানা গেছে।
মূল ফাইল হারানোর দায়িত্ব নিতে চাননি আলাউদ্দিন। তাঁর ভাষ্য, ৫ আগস্টের পর দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। আগেই ফাইলটি হারিয়েছে। দায়িত্ব শেষে আগের প্রধান কিছু বুঝিয়েও দেননি।
এস্টেট বিভাগের সাবেক প্রধান শামসুল ইসলাম ওই দায় অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ফাইল তো থাকার কথা, হারাবে কেন? আগে আমরা ঠিকমতো ভাড়া পরিশোধ করেছি, কোনো সমস্যা হয়নি। তারাই তো আমার থেকে বুঝে নেয়নি।’
অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক আনার পাশা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২০২২ সাল থেকে ক্লাব ভাড়ার বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়। তাই বিকল্প খাত থেকে ওই টাকা ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এস্টেট অফিসও নিয়মিত বিল জমা দেয় না। তারা একসঙ্গে কয়েক মাসের বিল জমা দেওয়ায় জটিলতা বাড়ে। এস্টেটের উচিত, মাসের বিল মাসে পরিশোধ করা।
এ বিষয়ে ভবনের মালিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থী সাজিদ স্মরণে ইবিতে ব্যতিক্রমী আয়োজন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রয়াত শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ স্মরণে স্মৃতিচারণ ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণে ক্যাম্পেইন করা হয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাল চত্বরে দিনব্যাপী এ কর্মসূচির আয়োজন করে ‘জাস্টিস ফর শহীদ সাজিদ আব্দুল্লাহ’ এর ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী।
এতে সাজিদের সহপাঠী, বন্ধুসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে তার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো স্মরণ করেন এবং ক্যাম্পাস নিরাপত্তা জোরদারে লিখিত আকারে বিভিন্ন প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন।
আরো পড়ুন:
জকসুর রোডম্যাপ ও সম্পূরক বৃত্তি দাবি শিক্ষার্থীদের
৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী
কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থী তানভীর মণ্ডল স্মৃতিচারণ করে লেখেন, “ইনকিলাব সন্ধ্যা এবং এ বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা মঞ্চে একসঙ্গে কাওয়ালি করেছিলাম। পুকুর পাড়ে, বিভিন্ন চায়ের দোকানে একসঙ্গে গানের আড্ডা দিয়েছি অনেক।”
আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, “২০২১ সালে সর্বপ্রথম একসঙ্গে এ ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। আজ সাজিদ ছাড়া একা একা ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করতে কষ্ট হচ্ছে।”
এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ক্যাম্পাস নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন।
এর মধ্যে রয়েছে- ক্যাম্পাসকে বহিরাগতমুক্ত রাখতে হবে ও ২৪ ঘণ্টা শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে চলাচল করতে পারেন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; প্রশাসনকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে; সব হল প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের হলে অবস্থান বাধ্যতামূলক করতে হবে; ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাস্টবিন স্থাপন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হ্যালোজেন বা হাই-পাওয়ার লাইট এবং সিসিটিভি বসাতে হবে।
তাদের অন্য প্রস্তাবনাগুলো হলো- দ্রুত সময়ের মধ্যে ইকসুর (ইবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কার্যকর অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে এবং যেখানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগের প্রতিকার নিশ্চিত করা হবে; প্রতিটি হলের প্রতিটি ব্লকে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং শক্তিশালী ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা এই প্রস্তাবনাগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানানোর পাশাপাশি প্রয়াত বন্ধু সাজিদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানান।
১৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৬টায় শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবিতে উত্তাল ক্যাম্পাস।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী