Samakal:
2025-11-03@06:38:29 GMT

দিনে মুরগির খোপে, রাতে ঘরে

Published: 1st, June 2025 GMT

দিনে মুরগির খোপে, রাতে ঘরে

বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন বৃদ্ধা লাল বরু বিবি। ছোট ছেলে মার খোঁজ নেন না। আর বড় ছেলে ও ছেলের স্ত্রী ঘরে তালা লাগিয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে চলে গেলে লাল বরু অসহায় হয়ে পড়েন। উঁচু ঘরে ওঠানামা করতে না পারায় নিরুপায় হয়ে মুরগির খোপে থাকেন, কখনও সেখানে ঘুমিয়েও থাকেন। ঘটনাটি পটুয়াখালীর লাউকাঠীর। এ নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।

গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বৃদ্ধা লাল বরুর অসহায়ত্বের করুণ চিত্র। তিনি শুয়ে আছেন মুরগির খোপে। আর অপেক্ষা করছেন কখন বিকেল হবে, কখন ছেলে আর তার স্ত্রী আসবেন, কখন তিনি ঘরে ঢুকবেন।

পটুয়াখালী শহরের পাশ দিয়ে বহমান লাউকাঠী নদী। এ নদীর উত্তরপ্রান্তে লাউকাঠী ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের লাউকাঠী নদীর কোলঘেঁষে লাল বরুর ছেলের ভাড়া বাসা। লাল বরুর বয়স পঁচাত্তর ছুঁই ছুঁই। বছর চারেক আগে স্বামী চাঁন মিয়া খান মারা যান। এরপর অসহায় হয়ে পড়েন লাল বরু। সন্তানদের কাঁধে ভর করে চলতে হয় তাঁর। বয়সের ভারে অচলপ্রায় তিনি। বন্ধ হয়ে গেছে তাঁর আয়-রোজগারও। এ কারণে এই বয়সেও ভিক্ষা করতে হয় তাঁর। তা না হলে পারিবারিক তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্বামী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। মেয়ে শাহানুর বেগম মারা গেছেন। দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে মো.

নাসির খান স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন। বৃদ্ধা মার কোনো খোঁজ-খবর নেন না তিনি। বড় ছেলে মোস্তফা খানের সঙ্গে তিনি থাকেন। মোস্তফা ও তাঁর স্ত্রী রিনা বেগম দুজনেই সকালে শহরে চলে যান। স্বামী রিকশা চালান আর স্ত্রী গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। তার মার যখন শক্তি সামর্থ্য ছিল তখন তিনিও গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। কিন্তু বয়সের ভারে এখন তাঁর শারীরিক অবস্থা নাজুক। তাই কাজকর্মও করতে পারেন না। মাঝেমধ্যে ভিক্ষাবৃত্তি করে ছেলের সংসারে জোগান দিতেন। কিন্তু এখন কিছুই করতে পারছেন না তিনি।

লাল বরু বলেন, ‘হাইট্টা চইল্যা আইয়্যা খোপের মধ্যে কাইতাইয়্যা-চিতাইয়্যা থাহি। মা’য় যখন কামাই করে আনতে পারেন তখন ভালো। হেরপর মায় খোপের মধ্যে বইয়্যা থাহে। হায়, দুঃখের হাজারি নাই, কারডে কমু দুঃখের কথা। দুইডা পোলা আছে, মাইয়্যাও আছিল একটা, তা আল্লাহ তা আলায় লইয়্যা গ্যাছে’।

লাল বরু খোপে থাকেন কেন জানতে চাইলে তার ছেলে মো. গোলাম মোস্তফা খান বলেন, ‘আমার মা খোপে থাকবে ক্যান? কষ্ট আমি করবো, আমার মা কষ্ট করবে কেন? মার যা যা লাগে তা সম্পূর্ণ আমি দেই। মাকে কখনও খোপে রাখি না। শুক্রবার কখনও যে মা’য় খোপে এসে ঢুকেছে তা আমি দেখিনি। মাকে খাওয়াবো নাতো কাকে খাওয়াবো? আম খাইতে চাইছে মা’য়, সঙ্গে সঙ্গে ৬ কেজি আম পাঠিয়ে দিছি’।

ছেলের বউ মোসা. রিনা বেগম বলেন, ‘আমাগো পেটে ক্ষুধা, তাই ভোরের সূর্য ওঠার আগেই ঘর খেইক্যা বাইর হইয়্যা কামে যাই আর আই বিকেলে। ঘর উঁচু হওয়ায় শাশুড়ি আম্মা একা ওঠানামা করতে পারেন না। তাই সে ওই খোপের মধ্যে বইয়্যা থাহেন। আমি আইলে পরে তখন ঘরে ঢুহেন। শুক্রবার আইয়্যা ওই খোপের মধ্যে বসা দেইয়্যা কিছু লোকজন মনে করছে আমরা তাকে খোপের মধ্যে রাহি’।

বড় ছেলের ঘরের নাতি শিপন খান বলেন, ‘আমার দাদিকে কেউ খোপের মধ্যে রাহে না। থাকে ঘরের মধ্যেই। কিন্তু বাইরে থেইক্যা ঘুইরা আইয়্যা ওই খোপের মধ্যে বইস্যা থাকে। আবার কখনও ঘুমাইয়্যাও থাকে। মা’য় কাজকর্ম সাইর‍্যা বিকেলে আইলে পরে দাদি ঘরে ওঠে। এরপর মা রান্নাবান্না করে, তারপর আমরা খাওয়া-দাওয়া করি’।

প্রতিবেশী নাসিমা বেগম বলেন, ‘বয়স্ক মানুষ- তাঁর তো ভুল-ত্রুটি থাকবেই। খোপে থাকে কিনা তা আমরা জানি না। তবে, তাঁর (লাল বরু) সঙ্গে তাঁর ছেলে ও ছেলে বউ ভালো আচরণ করেন না। সব সময় তাঁর সঙ্গে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেই থাকেন।

এ ব্যাপারে লাউকাঠী ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াস বাচ্চু বলেন, ‘শুক্রবার রাতে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওই বাড়িতে আমি ছুটে যাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে খবরটি প্রকাশ হয়েছে তা সঠিক নয়। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে বাড়িতে কেউ থাকেন না। ঘরটি উঁচু হওয়ায় বৃদ্ধা লাল বরু একা ওঠানামা করতে পারেন না। তাই দিনের বেলা সে বাইরে খোপের মধ্যে কিছুটা সময় শুয়ে-বসে কাটান এবং বিকেলের দিকে ছেলে বউ চলে আসলে পরে সে (লাল বরু) ঘরে ওঠেন। এই হচ্ছে মূল ঘটনা। তারপরও এভাবে না করার জন্যও বৃদ্ধার ছেলে ও ছেলের স্ত্রীকে বলা হয়েছে। পরে আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে কিছু আর্থিক সহায়তা করি’।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ বন স গ র ম ল ল বর

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত