অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে দেশের কৃষিজমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়, কমছে ফসলের পরিমাণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষকরা কৃষিবিদদের পরামর্শ না নিয়ে প্রায় ৩-৪ গুণ বেশি সার প্রয়োগ করছেন। রোগবালাই ঠেকাতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগের ফলে উপকারী পোকামাকড়ও মারা যাচ্ছে, যা জমির স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

রোববার রাজধানীর ফার্মগেটে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) বার্ষিক কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটির পরীক্ষার ফলাফল তুলে ধরে বিজ্ঞানীরা এসব তথ্য জানান।

কর্মশালায় খুলনা বিভাগীয় উপস্থাপনায় বলা হয়, চলতি অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৮৭টি মাটির নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, কৃষকরা প্রয়োজনের চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি সার ব্যবহার করছেন। আধা কেজি জিংক প্রয়োগ যথেষ্ট হলেও ব্যবহার করা হচ্ছে ৮ কেজি। এমনকি গুড়াচুনকে সালফার হিসেবে বিক্রি করে প্রতারণাও করা হচ্ছে, ফলে গাছের পাতা পুড়ে যাচ্ছে।

সিলেট বিভাগের উপস্থাপনায় বলা হয়, অঞ্চলটির ৯৫ শতাংশ জমি এখন অম্লীয় (অ্যাসিডিক) মাটিতে পরিণত হয়েছে। এখানে ফসফরাসের ব্যবহার বাড়ছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জিংক সারের ২৬০টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৩ শতাংশে ভেজাল পাওয়া গেছে।

বরিশালে ৮৩.

৬৩ শতাংশ সার ভালো হলেও বাকি ১৬.৩৭ শতাংশ সার ভেজাল। চট্টগ্রাম বিভাগে ইউরিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার জমিতে ফসফরাসের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। রংপুর অঞ্চলের ২ লাখ ৭৮০ হাজার হেক্টর জমির মাটিও অম্লতা সমস্যায় ভুগছে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, অনেক জায়গায় ডিলাররা ভেজাল সার সরবরাহ করছে। এতে জমির স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে, উৎপাদন কমে যাচ্ছে। 

সচিব বলেন, মানুষের শরীরের মতোই মাটিরও স্বাস্থ্য থাকতে হবে। তা না হলে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটবে। কৃষির বাজেটের ৭০ শতাংশই সারে ভর্তুকি। সেখানে সার প্রয়োগ কমাতে পারলে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ বাঁচবে।

তিনি আরও বলেন, চাষিরা অনেক সময় লিজ নেওয়া জমিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন মূলধন ফেরত পেতে গিয়ে। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে। এই প্রবণতা রোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

কৃষিঋণ বিতরণ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বছরে ৪ হাজার কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ হলেও এর মাত্র ১০ শতাংশ প্রকৃত কৃষকের হাতে পৌঁছায়। তাদের কাছে ভালো মানের বীজও পৌঁছায় না। অথচ ভালো বীজ পেলে উৎপাদন ১০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন এসআরডিআই-এর মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) ড. নাজমুন নাহার করিম।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র হ র কর

এছাড়াও পড়ুন:

থানায় হয়রানিমুক্ত সেবা দেওয়ার আহ্বান আইজিপির

থানায় জনগণকে হয়রানিমুক্ত সেবা দিতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।

আইজিপি বলেন, “থানায় এসে কেউ যেন অপমানিত না হয়, থানার দরজা যেন মানুষের জন্য খোলা থাকে। থানার পরিবেশ যেন হয় সাহচর্যের, আতঙ্কের নয়। থানাই হোক ন্যায়বিচারের প্রথম ঠিকানা।”

আইজিপি বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজের এর সম্মেলন কক্ষে ‌‘থানায় হয়রানিমুক্ত ও আইনগত সার্ভিস ডেলিভারি প্রদানের মাধ্যমে জনআস্থা পুনরুদ্ধারে পুলিশের করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান।

আরো পড়ুন:

লোহাগড়ায় ট্রাক চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত

সুনামগঞ্জে পিকআপের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু

পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ এর ভারপ্রাপ্ত রেক্টর এস এম রোকন উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সিনিয়র ডাইরেক্টিং স্টাফ (ট্রেনিং) ড. এ এফ এম মাসুম রব্বানী, পিবিআইয়ের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোস্তফা কামাল, ডিআইজি (প্রশাসন) কাজী মো. ফজলুল করিমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাহারুল আলম বলেন, “আমাদের পেছনের পথ ছিল অনেক ভুল সিদ্ধান্তের ফলাফল। আমরা মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছি।”

“আমাদের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আসুন, আমরা প্রতিজ্ঞা করি, আমরা যেন হয়রানিমুক্ত সেবা দেই। থানায় অভিযোগ করতে এসে কেউ যেন অপমানিত না হয়, থানার দরজা যেন মানুষের জন্য খোলা থাকে। আমাদের আচরণ যেন মানবিক হয় এবং আমরা যেন জনমুখী সেবা দিতে পারি।”

পুলিশ প্রধান বলেন, “জুলাই বিপ্লব কেবল একটি ঘটনা প্রবাহ নয়। এটি ছিল ন্যায়, মানবতা ও দায়িত্ববোধের এক জাগরণ। এ জাগরণ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, সেবাই আমাদের প্রকৃত পরিচয়, জনগণই ক্ষমতার উৎস।”

কর্মশালায় বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার ৫৯ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। 

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ