রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে মস্কো ও পশ্চিমা বিশ্বকে কী বার্তা দিল ইউক্রেন
Published: 2nd, June 2025 GMT
রাশিয়াজুড়ে দেশটির বিমানবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইউক্রেন যে হামলা চালিয়েছে, সেটাকে তাঁদের দুঃসাহসী ও অসাধারণ কৌশল বলা হলে অতিরঞ্জন হবে না।
ইউক্রেন বলছে, এ হামলায় ৭০০ কোটি ডলার মূল্যের (প্রায় ৫২০ কোটি পাউন্ড) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিবিসি এ তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি, তবে এটুকু নিশ্চিত যে ‘অপারেশন স্পাইডার’স ওয়েব’ নামের অভিযানটি অন্তত প্রচারের দিক থেকে এক চমকপ্রদ সাফল্য ছিল।
ইউক্রেনের মানুষ এ ড্রোন হামলাকে আগের কিছু বড় সাফল্যের সঙ্গে তুলনা করছেন। যেমন ২০২২ সালে রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরে নৌবহরের প্রধান জাহাজ মস্কভা ডুবিয়ে দেওয়া, কার্চ সেতুতে বিস্ফোরণ, আর পরের বছর সেভাস্তোপোল বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।
১৮ মাস ধরে এ অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। অভিযানের অংশ হিসেবে বেশ কিছু ছোট ড্রোন বিশেষভাবে তৈরি ট্রাকের ভেতর লুকিয়ে রেখে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় পাচার করা হয়। এরপর সেগুলো হাজারো মাইল দূরে রাশিয়ার চারটি ভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ গণমাধ্যমকে যেসব তথ্য দিয়েছে, তার ভিত্তিতে বোঝা যাচ্ছে, এটি এখন পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে পরিকল্পিত ও সফল অভিযান।
১৮ মাস ধরে এ অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। অভিযানের অংশ হিসেবে বেশ কিছু ছোট ড্রোন বিশেষভাবে তৈরি ট্রাকের ভেতর লুকিয়ে রেখে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় পাচার করা হয়। এরপর সেগুলো হাজারো মাইল দূরে রাশিয়ার চারটি ভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আশপাশের বিমানঘাঁটিগুলোর দিকে ড্রোন হামলা চালানো হয়।
ইউক্রেনের টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষা–বিশ্লেষক সেরহি কুজান বলেন, ‘বিশ্বে এর আগে কোনো গোয়েন্দা সংস্থা এমন কিছু করেছে বলে জানা নেই।’
কুজান আরও বলেন, ‘এ কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো আমাদের বিরুদ্ধে দূরপাল্লার হামলা চালাতে সক্ষম ছিল। সেখানে এ রকম মাত্র ১২০টি বিমান আছে, আর আমরা আঘাত করেছি ৪০টিতে। এটি একেবারে দুর্দান্ত একটি সংখ্যা।’
ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত হিসাব নির্ধারণ করা কঠিন। তবে ইউক্রেনের সামরিক ব্লগার ওলেকসান্দর কোভালেনকো বলেন, বোমারু বিমান ও কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল বিমানগুলো পুরোপুরি ধ্বংস না হলেও এর প্রভাবটা বিশাল।
নিজের টেলিগ্রামে চ্যানেল দেওয়া পোস্টে কোভালেনকো লিখেছেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতটাই বেশি যে রাশিয়ার সামরিক শিল্পকাঠামোর এখন যে অবস্থা, তাতে এগুলোকে শিগগিরই পুনরুদ্ধার বা মেরামত করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।’
এ হামলায় যেসব কৌশলগত বোমারু বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার মধ্যে আছে টিইউ-৯৫, টিইউ-২২ ও টিইউ-১৬০। সেগুলো এখন আর তৈরি হয় না বলে পোস্টে উল্লেখ করেছেন ওলেকসান্দর কোভালেনকো। তাঁর মতে, ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বিমানগুলো মেরামত করাটাই কঠিন হবে, আর এর প্রতিস্থাপন একেবারেই অসম্ভব। এর মধ্যে সুপারসনিক টিইউ-১৬০ হারানোর ক্ষতি সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে বলে মনে করেন কোভালেনকো।
কোভালেনকো লিখেছেন, ‘আজ রাশিয়ার বিমানবাহিনী শুধু তাদের দুটি দুর্লভ বিমানই হারায়নি, দলের দুই অনন্য সম্পদ হারিয়েছে।’
এ তো গেল ক্ষয়ক্ষতির দিক। এটা বেশিও হতে পারে আবার কমও হতে পারে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, অপারেশন স্পাইডার’স ওয়েব আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে। তারা এ অভিযানের মধ্য দিয়ে শুধু রাশিয়াকেই বার্তা দেয়নি, ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদের জন্যও বার্তা দিয়েছে।
বিবিসি ইউক্রেনিয়ান সার্ভিসের ওয়েবসাইটে লেখা এক প্রতিবেদনে সংবাদকর্মী সভিয়াতোস্লাভ খোমেনকো সম্প্রতি কিয়েভে এক সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর একটি সাক্ষাতের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
ওই সরকারি কর্মকর্তা হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি সভিয়াতোস্লাভকে বলেছিলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, মার্কিনরা নিজেরাই ধরে নিয়েছে যে আমরা যুদ্ধটা ইতিমধ্যে হেরে গেছি। আর এই ভুল ধারণা থেকেই সব সমস্যার শুরু।’
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা–বিষয়ক সাংবাদিক ইলিয়া পোনোমারেঙ্কো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যকার হট্টগোলের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন।
ইলিয়া বলেন, ‘যখন একটি দেশ হামলার আওতায় আছে, তখন তারা এ ধরনের কথা শুনতে চাইবে না যে “ইউক্রেনের আর ছয় মাস বাকি”, “তোমাদের কিছুই করার নেই”, “শান্তি চাইলে আত্মসমর্পণ করো, রাশিয়াকে হারানো যাবে না”।’
এক্সে বিজনেস ইউক্রেন সাময়িকীর একটি পোস্টে বলা হয়, ‘দেখা যাচ্ছে, সবকিছুর পরও ইউক্রেনের হাতে কিছু কার্ড ছিল। আজ জেলেনস্কি খেললেন ড্রোনের রাজা হয়ে।’
ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল ইস্তাম্বুলে ক্রেমলিনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নতুন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনা করার সময় একটি বার্তা দিয়েছে। সেটি হলো, ইউক্রেন এখনো লড়াইয়ের ময়দানে আছে।
সভিয়াতোস্লাভ খোমেনকোকে ইউক্রেনের ওই সরকারি কর্মকর্তা আরও বলেছিলেন, ‘মার্কিনরা এমন আচরণ করছে, যেন তারা আমাদের জন্য যতটা সম্ভব সবচেয়ে নমনীয় আত্মসমর্পণের শর্ত নিয়ে আলোচনা করছে। আর আমরা তাদের ধন্যবাদ না দিলেই তারা রেগে যায়। কিন্তু আমরা ধন্যবাদ দিতে পারি না। কারণ, আমরা মনে করি না যে আমরা পরাজিত।’
আরও পড়ুনরাশিয়ার চার বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা, ৪০টির বেশি বোমারু বিমান ধ্বংসের দাবি১১ ঘণ্টা আগেরাশিয়া ধীরে ধীরে অবিচল গতিতে দনবাসের যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হলেও কিয়েভের সম্ভাবনাকে এত সহজে উপেক্ষা করা যাবে না বলে মস্কো ও ট্রাম্প প্রশাসনকে বার্তা দিচ্ছে ইউক্রেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
আজ টিভিতে যা দেখবেন (৪ জুন ২০২৫)
আজ ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রীতি ম্যাচে ভুটানের মুখোমুখি বাংলাদেশ ফুটবল দল। রাতে উয়েফা নেশনস লিগের সেমিফাইনালে মুখোমুখি জার্মানি ও পর্তুগাল।
আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচবাংলাদেশ-ভুটান
সন্ধ্যা ৭টা, টি স্পোর্টস
কোয়ার্টার ফাইনাল
বেলা ৩টা, সনি স্পোর্টস ১, ২
জার্মানি-পর্তুগাল
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ৫