Prothomalo:
2025-08-01@00:16:47 GMT

বিরল বালুচাটার সন্ধানে

Published: 2nd, June 2025 GMT

১৪ বছর আগের কথা। বিরল ও দুর্লভ পাখির প্রজনন প্রতিবেশ নিয়ে গবেষণার কাজে পঞ্চগড় এসেছি। বোদা, আটোয়ারী, দেবীগঞ্জ ও পঞ্চগড় সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গাঙটিটি, হলুদ লতিকা হট্টিটিসহ বেশ কিছু প্রজাতির পাখি দেখলাম। সবশেষে ভারত সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়ার কাজীপাড়া এসে ওদের সঙ্গে যোগ হলো অতি বিরল শেখ ফরিদ বা কালো তিতির। কিন্তু এসব পাখির মা ক্ষণে ক্ষণেই খুঁজছিলাম চড়ুই আকারের অতি বিরল আরেকটি পাখিকে। তেঁতুলিয়া শহরের রাস্তার পাশে এই পাখিকে ২০১০ সালে বন্য প্রাণী আলোকচিত্রী প্রয়াত মুনির আহমেদ খান ও তাঁর স্ত্রী পক্ষী আলোকচিত্রী তানিয়া খান দেখেছিলেন। এর পর থেকেই পাখিটিকে দেখার ইচ্ছা। কিন্তু মাত্র এক বছর পর জায়গামতো বারবার গিয়েও পাখিটির দেখা পেলাম না।

এরপর ২০১৭ সাল পর্যন্ত আরও তিনবার তেঁতুলিয়া গেলাম। কিন্তু ফলাফল একই। অবশ্য ২০২০ সালে একজন আলোকচিত্রী রাজশাহীর পদ্মার চরে পাখিটির দেখা পান। এরপর ২০২৩ সালে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বেড়ামন গাঁও চরে বার কয়েক দেখা গেল। অনেকেই ছবি তুললেন। খবর পেয়ে ১১ নভেম্বর পাখিটির সন্ধানে পাখিপ্রেমী আমরা ১১ জন শীত শীত ভোরে ঢাকা থেকে রওনা হলাম। মাওয়ার পুরোনো ফেরিঘাটে নেমে জাকির মাঝির ইঞ্জিন নৌকায় চরের দিকে রওনা হলাম। পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে আমাদের নৌকা যাওয়ার সময় সেতুর সঙ্গে একটা ফটোসেশন হয়ে গেল।

ঠিক ৫০ মিনিট প্রমত্ত পদ্মার বুকে চলার পর নৌকা চরে ভিড়ল। চরের মাটিতে পা রাখতেই স্ত্রী পাখিটির দেখা পেয়ে গেলাম। যে পাখিকে দীর্ঘ সাত বছর ধরে খুঁজছি, আজ তাকে অতি সহজে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লাম। স্ত্রী পাখিটির প্রথম ছবি তোলার ১১ মিনিট পর পুরুষটির দেখা পেলাম। কিন্তু ওর একটি ভালো ছবি তোলার জন্য প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হলো। পরে পাখিটিকে শেরপুরেও দেখা গেল।

এতক্ষণ বিরল যে পাখিটির গল্প বললাম, সেটি এ দেশের আবাসিক পাখি বালুচাটা বা ধুলচাটা। ইংরেজি নাম অ্যাশি-ক্রাউন্ড স্প্যারো-লার্ক বা ফিঞ্চ-লার্ক। অ্যালাইডিডি গোত্রের এই ভরত পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Eremopterix grisea। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাস করে।

বালুচাটা চড়ুই আকারের কীটপতঙ্গভুক পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ১২ থেকে ১৪ সেন্টিমিটার। ওজন ১৪ থেকে ২০ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী ও পুরুষের চেহারায় ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষের মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পেছনটা ধূসর-বাদামি। চোখ বরাবর চওড়া কালো পট্টি। পিঠ বালু-বাদামি। ডানার পালক কালচে ছোপছাপে ভরা। গাল থেকে কান-ঢাকনি ও বুকের দুই পাশ ময়লা সাদা। গলার অর্ধেকটায় কালো রঙের ফিতে। বুক-পেট ও দেহের নিচ চকলেট কালো। অন্যদিকে স্ত্রী একবারেই সাদামাটা। পিঠ ও দেহতলের ওপরে কিছু সূক্ষ্ম লম্বালম্বি দাগসহ দেহ পুরোপুরি বালু-বাদামি। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে চঞ্চু খাটো ও ত্রিকোণাকার, রং হালকা, শিং-ধূসর। চোখ লালচে/হলদে-বাদামি। পা, পায়ের পাতা ও নখ মেটে-বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে অনেকটা মায়ের মতো।

এ পর্যন্ত এদেরকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং ও শেরপুরের চরাঞ্চলে দেখা গেছে। খোলামেলা শুষ্ক পাথুরে এলাকা, কণ্টকময় ঝোপঝাড় ও ঘাসে ঢাকা পরিত্যক্ত খেত, বালুময় নদীতট বা শুকনা জোয়ার–ভাটার কাদাচরে এরা বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট দলে বালুমাটিতে ঘোরাঘুরি বা ধূলিস্নান করতে দেখা যায়। তবে শীতে বড় দলে থাকতে পারে। মাটিতে হেঁটে হেঁটে শুকনা ধূলিময় ভূমি ঠুকরে বিভিন্ন ধরনের বিচি, শক্ত খোলসযুক্ত পোকামাকড়, পিঁপড়া ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ খায়। পুরুষ পাখি বৃত্তাকারে উড়ে উড়ে বাঁশির মতো ‘টুইল-ডিডল-ডিডল.

..’ স্বরে গান গায়।

বছরের যেকোনো সময় প্রজনন করতে পারে। মাটির প্রাকৃতিক খোদলে ঘাস, পালক ও চুল বিছিয়ে বাসা বানায়। বাসার চারদিকে নুড়ি পাথর দিয়ে বেষ্টনী দেয়। অল্প দূরত্বের মধ্যে একাধিক বাসা পাওয়া যায়। ডিম পাড়ে ২ থেকে ৩টি; রং ধূসর-সাদা বা ফিকে হলুদ, তাতে থাকে বেগুনি ও বাদামি ফুটকি ও ছোপ। ডিম ফোটে ১১ থেকে ১৪ দিনে। ১০ থেকে ১২ দিনে ছানারা উড়তে শেখে। মা-বাবা মিলেমিশে ডিমে তা দেওয়া এবং ছানাদের লালন পালন করে। আয়ুষ্কাল প্রায় চার বছর।

আ ন ম আমিনুর রহমান, পাখি ও বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসাবিশেষজ্ঞ

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নিশ্ছিদ্র দাপটে উরুগুয়েকে উড়িয়ে ফাইনালে ও অলিম্পিকে ব্রাজিল

দক্ষিণ আমেরিকার নারী ফুটবলে ব্রাজিল নামটা মানেই আতঙ্ক। কোপা আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দলটি এবারও সেই পরিচয় বজায় রেখেছে। মেয়েদের কোপা আমেরিকার দশম আসরের সেমিফাইনালে উরুগুয়েকে ৫-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে আবারও ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করেছে সেলেসাও নারীরা। শুধু তাই নয়, এই জয় তাদের ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকের টিকিটও নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশ সময় বুধবার অনুষ্ঠিত ম্যাচে মাঠের প্রতিটি বিভাগেই ছিল ব্রাজিলের মেয়েদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য। কোচ রদ্রিগো পাস দেলগাদোর কৌশলে দলটি প্রথমার্ধেই তিন গোল করে উরুগুয়েকে প্রায় ধরাশায়ী করে দেয়। যদিও উরুগুয়ে একটি গোল শোধ দেয় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে, কিন্তু খেলায় ফিরতে পারেনি তারা। বরং নিজেদের একজন খেলোয়াড় লাল কার্ড দেখায় দলটি আরও বিপাকে পড়ে। এর সুযোগ নিয়ে ব্রাজিল আরও দুই গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয়।

ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে ছিল ব্রাজিল। ১১তম মিনিটে মার্তার দুর্দান্ত ক্রস থেকে আমান্দা গুতিয়েরেসের হেডে আসে প্রথম গোল। দুই মিনিটের মাথায় গিও গারবেলিনির গোলের মাধ্যমে ব্যবধান হয় দ্বিগুণ। এরপর ২৬ মিনিটে মার্তা পেনাল্টি থেকে তৃতীয় গোল করেন। বিরতিতে যাওয়ার আগেই ম্যাচ কার্যত নিশ্চিত করে ফেলে ব্রাজিল।

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে ভারত-চীন-ব্রাজিলকে হুঁশিয়ারি ন্যাটোর

ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা মন্থর ব্রাজিলের ছন্দে সুযোগ নিয়ে উরুগুয়ে একটি গোল শোধ দেয়। কিন্তু ৬৫ মিনিটে আমান্দা ফ্রি-কিক থেকে নিজের দ্বিতীয় এবং দলের চতুর্থ গোল করেন। এরপর ৮৬ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় দুদিনিয়ার অসাধারণ শটে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৫-১। উরুগুয়ের গোলরক্ষক সেই শট ঠেকানোর কোনো সুযোগই পাননি।

উল্লেখ্য, কোপার অন্য সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে কলম্বিয়া। ফলে আগামী শনিবার রাতে (২ আগস্ট) ফাইনালে মুখোমুখি হবে ব্রাজিল ও কলম্বিয়া। দুই দলই এখন পর্যন্ত অপরাজিত। গ্রুপ পর্বে তাদের মধ্যে হওয়া ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল, ফলে ফাইনাল হতে যাচ্ছে এক রোমাঞ্চকর লড়াই।

ব্রাজিল যেখানে পাঁচ ম্যাচে চারটি জয় ও একটি ড্র নিয়ে এগিয়ে, সেখানে কলম্বিয়া তিনটি ম্যাচ জিতেছে ও দুটি ড্র করেছে। দুই দলের আক্রমণভাগ, রক্ষণ, এবং মিডফিল্ড; সব বিভাগেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করা যাচ্ছে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ভিপিএনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল
  • দুর্গম অঞ্চলে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এখনো পিছিয়ে
  • রূপ নয়, সাহস দিয়ে জয় করা এক নায়িকা
  • টানা দুই জয়ের পর এবার হার বাংলাদেশের যুবাদের
  • ভারতের অর্থনীতি মৃত, ট্রাম্প ঠিকই বলেছেন: রাহুল
  • হেনরির ৬ উইকেটের পর দুই ওপেনারে নিউজিল্যান্ডের দিন
  • অসুখবিসুখে কষ্ট পেয়ে, বিছানায় পড়ে বাঁচতে চাই না: ববিতা
  • নিশ্ছিদ্র দাপটে উরুগুয়েকে উড়িয়ে ফাইনালে ও অলিম্পিকে ব্রাজিল
  • মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
  • কালীগঞ্জ পৌর শহর যেন মশার স্বর্গরাজ্য