আমি ইসরায়েলসহ বিভিন্ন দেশের অনেক বিশ্লেষকের লেখা পড়ছি, যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন—এত দিন ধরে গাজায় নির্বিচার ব্যাপক বিমান ও স্থল হামলা চালানোর পরও কেন ইসরায়েল সফল হতে পারছে না?

নেতানিয়াহুর ‘নাৎসিসদৃশ’ জায়নবাদী সরকার যুদ্ধের যে তিন মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, সেগুলোর কোনোটিই এখনো অর্জিত হয়নি। যেসব প্রশ্ন এখন সবচেয়ে বেশি সামনে এসেছে, তা হলো ‘ইসরায়েল এখনো হামাসকে ধ্বংস করতে পারছে না কেন?’ ‘এ অবস্থার কারণ কী?’ ‘হামাস এত সাহস পায় কোথা থেকে আর তারা কি ভাঙার মতো নয়?’

এসব প্রশ্ন থেকেই বোঝা যায়, অনেকে বুঝতে পারছেন না যে হামাস হলো এক কঠিন প্রতিপক্ষ এবং ফিলিস্তিনি জনগণ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাঁরা নিজেদের ভূমি ছেড়ে যাবেন না এবং নিজেদের শেষ পর্যন্ত রক্ষা করবেন।

গাজায় ইসরায়েলে অব্যাহত নৃশংস হামলায় অনেক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, প্রতিরোধ নেতাদের কেউ কেউ নিহত হয়েছেন। তারপরও ইসরায়েল গাজায় বিজয় অর্জন করতে পারেনি। হামাস এখনো টিকে আছে, লড়ছে এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে বারবার একই এলাকায় ফিরে যেতে বাধ্য করছে।

প্রাথমিক যে উপসংহার আমরা টানতে পারি, সেটা হলো জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের ‘যুদ্ধযন্ত্র’ ব্যর্থ হয়েছে। তারা গাজায় একধরনের ‘অবসাদ ও ক্ষয়যুদ্ধের’ মধ্যে আটকা পড়েছে। ফলে ইসরায়েলি নেতাদের মধ্যে দুর্বলতা দেখা দিয়েছে, ইসরায়েলি সমাজে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে, সেনাবাহিনী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে, প্রচুর সেনা মানসিক অবসাদে ভুগছেন এবং আত্মহত্যার হার বেড়ে গেছে। এসব কারণে অনেক সেনাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হচ্ছে। ইসরায়েলের জানা দরকার, তারা প্রতিটি যুদ্ধে জয়ী হতে পারে, কিন্তু পুরো যুদ্ধে তারা হারছে।

নেতানিয়াহুর আকঙ্ক্ষা ছিল, গাজার ২১ লাখ ফিলিস্তিনিকে বোমা মেরে ও অনাহারে রেখে ধ্বংস করে দেওয়া। তিনি প্রতিদিনই নির্মম ও বর্বর উপায়ে তা করে যাচ্ছেন। অথচ পশ্চিমা শক্তিগুলো এ গণহত্যা বন্ধে শুধু কথার বুলি শুনিয়ে যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ইসরায়েলকে শ্রদ্ধা দেখাতে বাধ্য করতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

গাজা খালি করার পরিকল্পনাও দিনের পর দিন ব্যর্থ হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নেতাদের ফ্যাসিবাদী বক্তব্যের পরও যাঁদের গাজা থেকে জোর করে তাড়ানো হয়েছিল বা ভুল প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরানো হয়েছিল, তাঁরা সাম্প্রতিক অস্ত্রবিরতির পর গাজায় ফিরেছেন। অবশ্য তাঁদের ঘরবাড়ি কিছুই অবশিষ্ট নেই।

এই ৬০০ দিনের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের সময় ইসরায়েল এমন এক ভয়ঙ্কর শক্তি প্রয়োগ করেছে, যা ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহৃত শক্তির তুলনায় অনেক বেশি।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১৫ টন বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ভিয়েতনাম যুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল প্রায় ১৯ বছর। ওই যুদ্ধে ৯ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি ভিয়েতনামের নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৭৫ টন বোমা ফেলেছে, যা ভিয়েতনামের তুলনায় ১৮ গুণ বেশি।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১৫ টন বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ভিয়েতনাম যুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল প্রায় ১৯ বছর। ওই যুদ্ধে ৯ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি ভিয়েতনামের নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৭৫ টন বোমা ফেলেছে, যা ভিয়েতনামের তুলনায় ১৮ গুণ বেশি।

ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূমিতে থেকে যাওয়ার এবং প্রয়োজনে নিজেদের ভূমিতে মরার দৃঢ় সংকল্প এবং বিশ্বব্যাপী জনমত যেভাবে দ্রুত ইসরায়েলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে—এই দুটি বিষয় ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বুঝে রাখা দরকার, এই বৈশ্বিক সমর্থন এখন শুধু বামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যেই নয়, মধ্যপন্থী ও ডানপন্থীদের মধ্যেও প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

গণহত্যার যৌক্তিক সমালোচনাকে ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ বলে অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা আগের মতো আর কাজ করছে না। এ ‘রুপালি গুলি’ ইসরায়েল ইতিমধ্যেই খরচ করে ফেলেছে।

মধ্য গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় একটি মসজিদ। ২ জুন, দেইর আল–বালাহ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য় ইসর য় ল টন ব ম হয় ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘দ্বিতীয় স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে লিভ-ইন করছি’

ভারতের দক্ষিণী সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী অঞ্জু অরবিন্দ। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে বড় পর্দায় পা রাখেন। মালায়ালাম সিনেমার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী পর্দা শেয়ার করেছেন রজনীকান্ত, মোহনলালের মতো বরেণ্য অভিনেতার সঙ্গে।

অভিনয়ে খ্যাতি কুড়ানোর পাশাপাশি নৃত্যশিল্পী হিসেবেও সুনাম রয়েছে অঞ্জুর। কিন্তু তার ব্যক্তিগত জীবন ঝলমলে নয়। একাধিক বিয়ে করেও সংসারী হতে পারেননি। এখন লিভ-ইন সম্পর্কে রয়েছেন এই অভিনেত্রী। তামিল একটি ইউটিউব চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জীবনের স্পর্শকাতর অংশ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন অঞ্জু। 

সংসারী হওয়ার জন্য বিয়ে করেছিলেন অঞ্জু অরবিন্দ। কিন্তু দুঃখ তার পিছু ছাড়েনি। এ বিষয়ে ৪৬ বছরের অঞ্জু বলেন, “আমার প্রথম বিয়ে ডিভোর্সের মাধ্যমে শেষ হয়। দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু আমার স্বামী মারা যান।” 

আরো পড়ুন:

‘স্যার আপনার সঙ্গে সময় কাটাতে চান’

মুক্তির আগেই বিজয়ের শেষ সিনেমার আয় ২৫১ কোটি টাকা!

এখন লিভ-ইন সম্পর্কে রয়েছেন অঞ্জু অরবিন্দ। তা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, “আমি পাঁচ বছর ধরে লিভ-ইন সম্পর্কে রয়েছি। আমার সঙ্গীর নাম সঞ্জয় আম্বালা পরমবাথ। গত পাঁচ বছর ধরে আমরা সুখে-শান্তিতে বসবাস করছি।”

ক্লাশ এইটে পড়াকালীন নাচ শিখতেন অঞ্জু। নাচের ক্লাসে পরিচয় হয় সঞ্জয়ের সঙ্গে। তার ভাষায়— “সঞ্জয় আমার প্রথম ক্রাশ।” এরপর আর যোগাযোগ ছিল না তাদের। সময় আবার সঞ্জয়-অঞ্জুকে এক করেছে।   

বেঙ্গালুরুতে ‘অঞ্জু অরবিন্দ ড্যান্স একাডেমি’ নামে একটি নাচের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন সঞ্জয়। তার একটি কন্যাসন্তান রয়েছে, যে কলেজে পড়াশোনা করছে। অঞ্জুর মতে— “আমাদের প্রেম কাহিনি নিয়ে একটি সিনেমা নির্মাণ সম্ভব।”

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ