পাইপলাইন কাজের জন্য মঙ্গলবার (৩ জুন) ৮ ঘণ্টা টঙ্গী বিসিকসহ আশেপাশের এলাকায় গ্যাস থাকবে না।

সোমবার (২ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে তিতাস।

তিতাস জানায়, টঙ্গী-কালিগঞ্জ মহাসড়কের রেলক্রসিং এর পাশে টঙ্গী নিমতলী ব্রিজ নামক স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইন মেরামত বা প্রতিস্থাপন কাজের জন্য মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মোট ৮ ঘণ্টা টঙ্গী বিসিক, পাগাড়, মরকুন, শিলমুন, মাজুখান বাজার, আরিচপুর, গোপালপুর ও তালটিয়া বাজার এলাকায় বিদ্যমান সব শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এছাড়া, ওই এলাকার আশেপাশের এলাকায় গ্যাসের স্বল্পচাপ বিরাজ করতে পারে।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

প্লাস্টিক দূষণ রোধে কী করণীয়

এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘এন্ডিং প্লাস্টিক পলুশন’ বা প্লাস্টিক দূষণের অবসান। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির আয়োজনে দিবসটির এবারের ‘হোস্ট কান্ট্রি’ দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির পরিবেশমন্ত্রীর প্রত্যাশা, ‘২০২৫ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবস বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সংরক্ষণে যুগান্তকারী মুহূর্ত হবে। কারণ আমরা আশা করছি, বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক চুক্তি সম্পন্ন হবে। ২০২৫ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আয়োজক দেশ হিসেবে কোরিয়া প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেবে।’ বলা বাহুল্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশও প্লাস্টিক দূষণ রোধের এই মহতী উদ্যোগে ঐকমত্য পোষণ করেছে।

এটা ঠিক, প্লাস্টিকজাত সামগ্রী আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু অব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অব্যবস্থাপনা আমাদের পরিবেশের জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, প্লাস্টিক দূষণ কেন গুরুতর? প্রথমত, প্লাস্টিকের ব্যবহার ও উৎপাদন হিসাব করলে দেখা যায়, শুধু ২০২৫ সালেই বিশ্বে ৫১৬ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক ব্যবহার করা হতে পারে। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, ২০৬০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক ব্যবহার বার্ষিক ১.২ বিলিয়ন টনেরও বেশি হতে পারে।

দ্বিতীয়ত, প্লাস্টিক দূষণের পরিবেশগত প্রভাব গভীরতম সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাউন্ট এভারেস্ট পর্যন্ত বিদ্যমান। প্রতিবছর আনুমানিক ১ কোটি ১০ লাখ টন প্লাস্টিক জলজ প্রতিবেশে যুক্ত হয়। প্রতিবছর প্রায় ১৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক মাটিতে জমা হয়। তৃতীয়ত, প্লাস্টিক দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব ব্যাপক। মানুষের ধমনী, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, এমনকি বুকের দুধেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। প্লাস্টিক মূলত মাইক্রো ও ন্যানোপ্লাস্টিক হিসেবে খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যে প্রতিকূল প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশেও প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। ২০১৯ সালে পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতিবছর দেশে প্রায় ৮৭ হাজার টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ফেলে দেওয়া হয়, যার বেশির ভাগ জলাধার, নদী, সর্বশেষ সমুদ্রে চলে যায়। চারটি বিভাগীয় শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট) জরিপে দেখা যায়, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রায় ৯৬ শতাংশ খাদ্য ও ব্যক্তিগত পণ্য থেকে আসে। এই বর্জ্যের প্রায় ৩৫ শতাংশ সম্পূর্ণরূপে পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির ধারণা অনুসারে, ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য বাংলাদেশের প্রধান নদী ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও গঙ্গার মাধ্যমে সমুদ্রে গিয়ে পৌঁছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০-২১ সালে কভিড অতিমারির সময় স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র ও হাসপাতাল থেকে সারাদেশে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছিল। এর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ২০০ টনের বেশি চিকিৎসা বর্জ্য শুধু ঢাকায় উৎপাদিত হয়। উদ্বেগের বিষয়, এর বেশির ভাগ কোনো ব্যবস্থাপনা ছাড়াই খোলা জায়গা বা ল্যান্ডফিলে ফেলা হয়েছিল।

প্লাস্টিক বর্জ্য অব্যবস্থাপনার এমন হাজারো উদাহরণ দেওয়া যাবে। প্রশ্ন হলো, আমাদের করণীয় কী? বিশেষজ্ঞরা অনেক আগে থেকেই প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করতে প্লাস্টিকের বিকল্প খুঁজে বের করার পাশাপাশি প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের জীবনকাল বৃদ্ধিকরণ বা পুনর্ব্যবহারের হার বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়ে আসছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মতো প্রযুক্তিগত যোগ্যতা অর্জন এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারিনি। 

তারপরও প্লাস্টিক দূষণ রোধে কিছু গ্রহণযোগ্য অর্জন রয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনেক ভালো পদক্ষেপের উদাহরণ এবং পরামর্শ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, কীভাবে প্লাস্টিক দ্রব্যাদি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে দূষণ রোধে করণীয় দায়িত্ব ও অংশীদারিত্বের মধ্যে নিয়ে আসা যায়। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি সম্প্রতি লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে, যাতে শিক্ষার্থীদের পরিবেশবান্ধব নানা দক্ষতা, বিশেষত প্লাস্টিক সম্পর্কিত দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা যায়। এ ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্যও প্রযোজ্য। 

প্লাস্টিক দূষণের জন্য দায়ী কে– উৎপাদনকারী, নাকি ভোক্তা-ব্যবহারকারী; প্লাস্টিক দ্রব্যাদির উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হবে কিনা– এ বিষয়ে বিস্তর বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। সম্প্রতি ফ্রান্সে প্লাস্টিক সমস্যা সমাধানে উৎপাদনকারীকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিবেচনা করে দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তিন দশক আগে এই ধারণা গৃহীত না হলেও তারা ইতোমধ্যে বুঝতে পেরেছে, উৎপাদনকারীর অগ্রগণ্য অংশগ্রহণ ছাড়া শুধু ব্যবহারকারীর সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক ব্যবস্থা সফল হবে না। এটি গুরুত্বপূর্ণ, প্লাস্টিক দ্রব্যাদি উৎপাদন বা ব্যবহারকারী যেই হোক, প্রত্যেককে একটি টেকসই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। একে অপরকে দায়ী করার বদলে সমানভাবে অংশীদারিত্ব নিতে হবে।

প্লাস্টিকজাত দ্রব্যাদি উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা আপাতদৃষ্টিতে সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগতভাবে আমরা লাভবান হতে পারি। দূষণ ব্যবস্থাপনায় ‘সার্কুলার ইকোনমি’ ধারণার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এ পদ্ধতিতে প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার, পুনরুৎপাদন ও বর্জ্য হ্রাসের মাধ্যমে ব্যবহৃত উপকরণকে বারবার কাজে লাগানো যায়। 

নিশ্চিতভাবেই এটি বাংলাদেশের প্লাস্টিক দূষণ কমাতে সাহায্য করবে। কারণ এতে নতুন প্লাস্টিক উৎপাদনের চাপ কমবে এবং পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে। প্রত্যাশা করি, কর্তৃপক্ষ সমন্বিত প্লাস্টিক দূষণ ব্যবস্থাপনায় এগিয়ে যাবে।

ড. মো. মাসুদ পারভেজ রানা: প্রফেসর, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
mprges@ru.ac.bd   

সম্পর্কিত নিবন্ধ