নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ফের প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার
Published: 4th, June 2025 GMT
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির আলোচনা আবারও ব্যর্থ হয়েছে। সোমবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। ইউক্রেন শর্তহীন যুদ্ধবিরতির বিষয়টি তুললে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তা আবারও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এর আগে ১৬ মে প্রথম দফা সরাসরি আলোচনা কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছিল। তবে ইউক্রেন ২০ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে আরও একটি আলোচনার প্রস্তাব করেছে।
এদিকে ওই বৈঠকে দুই পক্ষ মৃত সেনাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশ ৬ হাজার করে সেনার মরদেহ বিনিময় করবে। এই চুক্তির আওতায় আহত ও বন্দি সেনাদেরও ফেরত আনা হবে।
বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। উভয় দেশের আলোচকরা নিশ্চিত করেছেন, তারা গুরুতর আহত সৈন্য ও ২৫ বছরের কম বয়সী সব বন্দি যোদ্ধা বিনিময়েও রাজি হয়েছেন।
আলোচনার পর ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই কিসলিতস্যা বলেন, যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো পক্ষই একমত হতে পারেনি। রাশিয়া নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেই চলেছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে সীমিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করা হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতা মেডিনস্কি বলেছেন, ‘আমরা সম্মুখ সারির কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় দুই থেকে তিন দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করেছি। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সেনাদের মরদেহ সংগ্রহের জন্য এটি দরকার।’
রাশিয়ার সাবেক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে ফেদোরভ বলেন, সোমবার উভয় পক্ষই শান্তি প্রস্তাব পেশ করলেও তারা পরস্পরের মতকে গ্রহণ করতে পারেনি। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান আলোচনাকে ‘চমৎকার’ বলে অভিহিত করেছেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট বলেছেন, জেলেনস্কি ও পুতিনের মধ্যে সরাসরি বৈঠক চান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অন্যদিকে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার পূর্ব ইউক্রেনের বিভিন্ন ফ্রন্ট লাইনে রাশিয়ার গোলাবর্ষণে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ক্রামাটোরস্ক শহরে একজন ও ইলিনিভকা শহরে প্রাণ গেছে দু’জনের। খারকিভ অঞ্চলে কুপিয়ানস্কের দক্ষিণে একটি গ্রামে হামলায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার আচরণে স্পষ্ট হয়েছে, তারা যুদ্ধ শেষ করতে চায় না।
.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে: তারেক রহমান
শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ নিতে ওত পেতে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, সরকারের যেকোনো ভুল সিদ্ধান্তে দেশে গণতন্ত্রে উত্তরণের যাত্রাপথকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কাজেই এ ব্যাপারে সবাইকে বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।
ঢাকার সাভারে শ্রমিক-ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থান-২০২৪ এ ‘নারকীয় আশুলিয়া স্মরণে’ আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বুধবার বিকেলে সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সমাবেশে বলেন, জুলাই আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে এই সাভার–আশুলিয়ায় শ্রমিকদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। হত্যা করে শ্রমিকদের লাশগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। লাশের সঙ্গে এমন বর্বরতা, লাশের সঙ্গে এমন নির্মমতা, মনে হয় কারবালার নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে। ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্টের পতনের দিন, সাভার আশুলিয়ায় গণহত্যা চলেছিল, মানুষের ওপর গণহত্যা চলেছিল।
জনগণ একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে, আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছিলেন বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ হটিয়ে রাষ্ট্র রাজনীতিতে জনগণের অধিকার, আইনের অধিকার প্রতিষ্ঠার আশায়, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আশায় তাঁরা (শহিদেরা) আত্মত্যাগ করেছেন। আজ যদি শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষ জানতে চায়, সেই শহীদদের আত্মা যদি জানতে চায়, গণ–অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি শ্রমজীবী মানুষ শাহাদাত বরণ করেছে; কিন্তু বর্তমানে সরকারে ও প্রশাসনে শ্রমজীবী কর্মজীবী মানুষের অবস্থান কি? পলাতক ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্র সংস্কারের যে কর্মযজ্ঞ চলছে, সেখানেই বা তাদের প্রতিনিধিত্ব কোথায়?
তারেক রহমান বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে, একজন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের অন্যতম প্রধান উপাদান হচ্ছে নির্বাচন। প্রতিটি নাগরিক যাতে নিজের কথা নিজে বলতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করার স্বার্থে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি একটি অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিকে অগ্রাধিকার দেয়। স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন প্রতিটি স্তরে জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নিজের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেলে রাষ্ট্র ও সরকারে জনগণের ইচ্ছা প্রাধান্য পাবে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। শিক্ষাঙ্গন, স্থানীয় সরকার কিংবা জাতীয় সরকার—প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএনপি জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার পক্ষে। কিন্তু এসব নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার নির্ধারণে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারছে কি না, এটি একটি বিরাট প্রশ্ন এই মুহূর্তে জনগণের সামনে।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনাদের সন্তান, স্বজনের মৃত্যু দেশ এবং জনগণকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে। দেশ আপনার শহীদ সন্তানের কাছে ঋণী, প্রতিটি শহীদ পরিবারের কাছে রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সাভার আশুলিয়া কিংবা অন্য কোনো সুবিধাজনক এলাকায় শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষের আত্মত্যাগের সম্মানে একটি বিশেষ স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।’
বুধবার বেলা তিনটায় আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকার দারুল ইহসান মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির এ জনসভা শুরু হয়। সভার শুরুতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। পরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণ–অভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের উপস্থিত পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট তুলে দেন।
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, এমন কিছু করবেন না, যাতে গণতন্ত্র ব্যাহত হয়। ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না, যে অবস্থায় আবার সেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা কোনো সুযোগ পায় দেশে ফিরে আসার।’
গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা ও আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আহত ও শহীদ, বিশেষ করে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টাকা করে অনুদান দেবে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করবে। কিন্তু সেটি কতটুকু বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সেটি আমি জানি না।’
ক্ষমতায় চিরদিন টিকে থাকার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্বরোচিতভাবে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। গোটা জাতি শেখ হাসিনার বিচার চায় বলে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন এবং সেখান থেকে অডিও–ভিডিও ভার্সনে এ দেশে আবার নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য, বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। গোপালগঞ্জে ইতিমধ্যে তাঁরা (আওয়ামী লীগ) সেটি তৈরিও করেছে। জাতিকে রক্ষা করার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি), চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহপরিবার কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তমিজ উদ্দিন, ঢাকা জেলা বিএনপির সহসভাপতি খন্দকার শাহ মইনুল হোসেন, জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস, সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান, সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান মোহনসহ সাভার ও ধামরাই উপজেলা এবং এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।