ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারের লোক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা, অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়ে নেন ৮ লাখ টাকা
Published: 4th, June 2025 GMT
ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারের লোক পরিচয় দিয়ে ফোন করে ওটিপি নিয়ে একজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা সরিয়ে নেয় একটি অপরাধী চক্র। এ ঘটনায় রুহুল আমিন (৪২) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি বলছে, ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের বাসিন্দা রুহুল আমিন একটি প্রতারক চক্র চালান। এই চক্রের সদস্যরা এভাবে প্রতারণা করে মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেন।
সিআইডির ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ মামলাটির তদন্ত করছে বলে আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সিআইডির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘটনার ভুক্তভোগী একজন ব্যবসায়ী। ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের মৌচাক শাখায় তাঁর একটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। গত ২৪ মার্চ বিকেলে প্রতারক চক্রের এক সদস্য তাঁর (বাদী) মোবাইলে কল দিয়ে নিজেকে ওই ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারের লোক পরিচয় দেন। এ সময় তাঁর ব্যাংক হিসাবে কিছু টাকা জমা হবে জানিয়ে মোবাইল নম্বরে পাঠানো ওটিপি দিতে বলেন। ওই ব্যবসায়ী সরল বিশ্বাসে প্রতারক চক্রকে ওটিপি দিয়ে দেন। পরে ওই ব্যবসায়ীর বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক ধাপের লেনদেনে মোট ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঘটনার পর ভুক্তভোগী রমনা মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দেওয়া হলে সংস্থাটির ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন সূত্রের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্ত রুহুল আমিনকে (৪২) শনাক্ত করে। পরে ফরিদপুর জেলা পুলিশের সহায়তায় আজ সকাল ৯টার দিকে ফরিদপুর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযুক্ত রুহুল আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানানো হয়। পাশাপাশি প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র হ ল আম ন তদন ত স আইড
এছাড়াও পড়ুন:
নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো শুধু লেখকই নন, একজন যোদ্ধাও
নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো নাচতে ভালোবাসতেন। সবকিছুর চেয়ে, এমনকি লেখালেখির চেয়ে তিনি নাচ বেশি পছন্দ করতেন।
আশির কোঠায় তাঁর বয়স পৌঁছালে কিডনিজনিত অসুখে তাঁর শরীর যখন শ্লথ হয়ে যায়, তখনো তিনি নিছক গান শুনলেই উঠে দাঁলেড়িয়ে নাচতে শুরু করতেন। ছন্দ তাঁর পায়ে যেভাবে খেলত, শব্দও তেমনি হাতে খেলত, আর তা কাগজে লিখে চলত। নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গোকে আমি মনে রাখব একজন নাচের মানুষ হিসেবে। গত ২৮ মে ৮৭ বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন অনন্তলোকে।
নগুগি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন তাঁর মহান সাহিত্য–ঐতিহ্য দিয়ে। তাঁর সাহিত্য ছিল উদ্ভাবনী শৈলীতে অভিনব আর মৌলিক সমালোচনায় ঋদ্ধ। তাঁর এই সাহিত্য–ঐতিহ্য আমাদের আনন্দের সঙ্গে উৎসাহিত করে আরও ভালো কিছু করার জন্য, আরও সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। আমাদের সমাজগুলোর ভিত গড়ে দেওয়া ঔপনিবেশিক কাঠামোর বিরুদ্ধে আমরা যাঁরা লেখক, কর্মী, শিক্ষক ও মানুষেরা লড়ছি, তাদের জন্য নগুগি অফুরান অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।
২০০৫ সালে নগুগির সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়। এর বহু আগে থেকেই আফ্রিকান সাহিত্যধারার একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক ও নোবেল পুরস্কারের দীর্ঘদিনের দাবিদার ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে পরিচয়ের পর দ্রুতই আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়, তাঁর লেখালেখির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে রয়েছে শিক্ষাদানের ব্যাপারটি। এর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে ছিল তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
নগুগি প্রাঞ্জল হাসিমুখ, ক্লান্তিহীন হাসি আর উচ্ছ্বাসের আড়ালে ছিল এক গভীর ক্ষোভ, যা তাঁর শরীর ও মনের ক্ষতচিহ্নগুলোরই প্রতিচ্ছবি। শৈশব, কৈশোর ও যৌবনে চরম অপরাধমূলক শাসনব্যবস্থার নির্মমতা ও সহিংসতার চিহ্ন তিনি বয়ে চলেছিলেন।
নগুগির বধির ভাইকে ব্রিটিশরা গুলি করে হত্যা করেছিল। তার কারণ হলো চেক পয়েন্টে তিনি ব্রিটিশ সেনার থামার নির্দেশনা শুনতে পাননি। ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে মাউ মাউ বিদ্রোহ (কেনিয়ার সশস্ত্র বিপ্লবীদের সঙ্গে ব্রিটিশ প্রশাসনের লড়াই) তাঁর অন্য ভাইদের বিপরীত দুই পক্ষে ভাগ করে দিয়েছিল।
এ দুটি ঘটনা তাঁর মধ্যে গভীরভাবে এই বোধকে প্রোথিত করে দিয়েছিল যে সহিংসতা ও বিভাজন হলো ঔপনিবেশিকতাকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার দুটি প্রধান চালিকা শক্তি। এমনকি স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মেট্রোপোলের (ঔপনিবেশিক কেন্দ্রের) সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পরও সেটা সত্য।
অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও একটি বিষয়ে আলোচনা উঠলে নগুগি সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠতেন। সেটি হলো ব্রিটিশ শাসন থেকে কেনিয়ান শাসনে রূপান্তরকাল। বাস্তবতা হচ্ছে, কেনিয়া থেকে ব্রিটিশদের বিদায়ের মধ্য দিয়ে ঔপনিবেশিক শাসন বিদায় নেয়নি; বরং নতুন কেনিয়ান শাসকদের হাত ধরে সেটি আরও গভীরভাবে গেড়ে বসেছিল। আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।
একজন লেখক ও নাট্যকার হিসেবে নগুগি একজন যোদ্ধা হয়ে উঠেছিলেন। তিনি তাঁর ভাষাকে জটিল হয়ে ওঠা আফ্রিকান পরিচয়গুলোর (স্থানীয়, গোষ্ঠীগত, জাতীয় ও বিশ্বজনীন) সঙ্গে পুনরায় সংযোগ তৈরির কাজে নিবেদিত করেছিলেন। ব্রিটিশ শাসনের এই ‘সাংস্কৃতিক বোমা’ সাত দশক ধরে ‘নিশ্চিহ্ন’ হয়ে গিয়েছিল।
১৯৬২ সালে কাসপালায় তাঁর প্রথম নাটক দ্য ব্ল্যাক হারমিট প্রকাশিত হয়। খুব দ্রুতই তাঁকে ‘মহাদেশের কণ্ঠস্বর’ বলে ডাকা শুরু হয়। এর দুই বছর পর তাঁর প্রথম উপন্যাস উইপ নট চাইল্ড প্রকাশিত হয়। পূর্ব আফ্রিকান লেখকের লেখা ইংরেজি ভাষার প্রথম উপন্যাস।
নগুগি যখন খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছালেন, তখন সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি ইংরেজি ভাষায় লেখা বন্ধ করবেন। তাঁর মাতৃভাষা গিকুয়ুতে লেখালেখি শুরু করলেন।
নিজের মাতৃভাষায় তাঁর প্রত্যাবর্তন শুধু নিজের ক্যারিয়ার নয়, জীবনের গতিপথকেই মৌলিকভাবে বদলে দিল। উপনিবেশ–উত্তর কেনিয়ান শাসনব্যবস্থার প্রতি নগুগির স্বচ্ছদৃষ্টির সমালোচনা ইংরেজি বা জাতীয় ভাষা সোয়ালির পরিবর্তে তাঁর মাতৃভাষায় মানুষের কাছে পৌঁছাতে লাগল। কেনিয়ার নতুন শাসকদের জন্য সেটা সহ্য করা অসম্ভব হয়ে পড়ল। ফলে তাঁকে ১৯৭৭ সালে কোনো বিচার ছাড়াই এক বছরের জন্য কারাবন্দী করা হলো।
নগুগি যখন গিকুয়ু ভাষায় লেখা শুরু করেন এবং যখন তিনি কারাগারে ছিলেন, তখন তাঁর মধ্যে এই উপলব্ধি এল যে উপনিবেশ-পরবর্তী শাসনের মূলমন্ত্রটা হলো ‘নয়া ঔপনিবেশিকতা’। এটি সেই প্রচলিত ‘নয়া ঔপনিবেশিকতা’ নয়, যেটি উপনিবেশবিরোধী ও উপনিবেশ-পরবর্তীকালের আন্দোলনকারীরা আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার পরও সাবেক উপনিবেশের ওপর ঔপনিবেশিক শাসকদের নিয়ন্ত্রণ বোঝাতে ব্যবহার করতেন।
বরং এটি হলো নতুন স্বাধীন হওয়া নেতাদের নিজ ইচ্ছায় ঔপনিবেশিক শাসনের কলাকৌশল ও ভাষা আত্মস্থ করে নেওয়ার বিষয়টি। তাঁদের অনেকেই (যেমন জোমো কেনিয়াত্তা, যাঁর উদাহরণ নগুগি প্রায়ই দিতেন) ব্রিটিশ শাসনের সময় কারাবরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
সুতরাং প্রকৃতভাবে উপনিবেশ থেকে মুক্তি তখনই সম্ভব, যখন মানুষের মন বিদেশি নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হবে। আর এর জন্য প্রথম, সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের মাতৃভাষায় লেখার স্বাধীনতা।
● মার্ক লেভাইন ইউসি আরভাইনের গ্লোবাল মিডল ইস্ট স্টাডিজ প্রোগ্রামের পরিচালক
আল-জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত