বিদেশ থেকে ফেরার সময় আগে প্রতিবার সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম ওজনের একটি করে সোনার বার আনা যেত। এবার সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন কোনো যাত্রী বছরে একবারই শুল্ক দিয়ে একটি সোনার বার আনতে পারবেন। বাজেট ঘোষণার পরদিন গতকাল মঙ্গলবার জারি করা অপর্যটক যাত্রী ব্যাগেজ বিধিমালায় এ কথা বলা হয়েছে।

বিধিমালায় এবার সোনার বার আনার ক্ষেত্রে প্রতি ভরিতে (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) শুল্ক ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে একটি সোনার বার আনার জন্য ৫০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে। আগে ভরিপ্রতি এই শুল্ক ছিল ৪ হাজার টাকা।

কড়াকড়ি করা হয়েছে সোনার গয়না আনার ক্ষেত্রেও। আগে একজন যাত্রী বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় যতবার খুশি ততবার ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না বিনা শুল্কে আনতে পারতেন। এবার সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে একজন যাত্রী বছরে মোট ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না বিনা শুল্কে আনতে পারবেন।

মুঠোফোন আনার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী, বিদেশফেরত একজন যাত্রী দুটি ব্যবহৃত মুঠোফোন ও প্রতিবছর একবারই একটি নতুন মুঠোফোন শুল্ক-কর পরিশোধ ছাড়া আনতে পারবেন। আগে দুটি ব্যবহৃত মুঠোফোনের পাশাপাশি শুল্ক-কর দিয়ে প্রতিবার একটি করে নতুন মুঠোফোন আনা যেত।

আরও পড়ুনদুবাই থেকে অবৈধভাবে এসেছে ৩২ হাজার কোটি টাকার সোনা২০ মার্চ ২০২৫

ব্যাগেজ বিধিমালায় সুবিধা দেওয়ার কারণে গত পাঁচ বছরে যাত্রীদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সোনা আসে। ঢাকার শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে পাঁচ বছরে প্রায় ১৪২ টন সোনা আনেন যাত্রীরা। এসব সোনার বার পাচার হয়ে যায় বলে আলোচনা আছে। সীমান্ত পথে ভারতে পাচার হওয়ার সময় সোনার বার আটকের ঘটনাও ঘটছে। এ পরিস্থিতিতে এবার ব্যাগেজ বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হলো।

ব্যাগেজে নির্ধারিত পণ্যের বেশি পণ্য আনলে ন্যায় নির্ণয় অনুযায়ী শুল্ক-কর পরিশোধ, অর্থদণ্ড ও জরিমানা গুনতে হতে পারে। অতিরিক্ত পণ্য খালাসের জন্য আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের ছাড়পত্র লাগবে। তবে আমদানি নিষিদ্ধ বা আমদানি নিয়ন্ত্রিত পণ্যের ক্ষেত্রে এ সুযোগ নেই।

সোনা আনার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি হলেও ব্যাগেজ বিধিমালায় এবার সুযোগসন্ধানী যাত্রীদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। যেমন ভুলবশত বা অন্য কোনো কারণে যাত্রী ব্যাগেজ ঘোষণা করা না হলে যাত্রীর আগমনের সাত দিনের মধ্যে নিয়ম মেনে ব্যাগেজ ঘোষণা করার সুযোগ ছিল। এবার এই সুযোগ বাড়িয়ে ৩০ দিন করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো যাত্রীর শুল্ক-করযুক্ত পণ্য এনে এই ধারা ব্যবহার করে আইন অনুযায়ী ছাড় পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুনদুবাইফেরত দুই বাংলাদেশির জামাকাপড় পুড়িয়ে চার কেজি সোনা উদ্ধার০৫ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক কর

এছাড়াও পড়ুন:

কোরবানি যেন ‘শো অফ’ না হয়

ঈদের আনন্দ সব মানুষের একরকম হয় না। কোরবানির ঈদ যেমন একজন সামর্থ্যবান মানুষের জন্য উৎসবের উপলক্ষ, তেমনি একজন অসামর্থ্যবান মানুষের জন্য হয়ে দাঁড়ায় নানা অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ আর চাপের কারণ।

নিম্ন আয়ের বা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এক অদ্ভুত দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায় এই ঈদে। একদিকে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে চায়, অন্যদিকে বাজেট, ঋণ, বাজারদর আর সামাজিক চাপে কাতর হয়। পশুর দাম, জবাইয়ের খরচ, বিতরণের ব্যয়—সবকিছু সামলানোর চাপে কোরবানিই দেওয়া সম্ভব হয় না অনেকের পক্ষে।

এখানে একশ্রেণির মানুষ আছেন, যাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দামি গরুকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করে কোরবানিকে প্রতিযোগিতায় রূপ দেন। আর অসামর্থ্যবান পরিবারের মা-বাবা হিসাব করে দেখেন সন্তানদের হাসিমুখের পেছনে কতটা ত্যাগ জমা হয়ে আছে।

কোরবানি করা যেমন ইসলামের একটি মহান শিক্ষা, তেমনি সেটা সাধ্যের মধ্যে করাই মূল শিক্ষা। কিন্তু সমাজে একধরনের অদৃশ্য প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। কে কত বড় গরু কোরবানি দিচ্ছেন, এই প্রতিযোগিতার বোঝা সবচেয়ে বেশি পড়ে মধ্যবিত্তের লোকজনের ঘাড়ে। কারণ, তাঁরা চাইলেও না পারেন দেখাতে, না পারেন বাদ দিতে। মাঝামাঝি থেকে দুই দিক সামলানোই তাঁদের নিয়তি।

তবু তাঁরা কোরবানি করেন। কেউ ধারকর্জ করেন, কেউ সারা বছরের সঞ্চয় ভাঙেন। কারণ, তাঁরা জানেন, সন্তানদের সামনে আনন্দের মুখ গড়ে তুলতে হলে পেছনের ত্যাগ গোপন রাখতে হয়।

এই প্রবণতা কোরবানির মূল শিক্ষা ও উদ্দেশ্যকে আড়াল করে দিচ্ছে। এক পাশে আছে দামি গরুর ভিডিও ভাইরাল করার উন্মাদনা, অন্য পাশে আছে গরিব মানুষদের মধ্যে লুকিয়ে থাকার লজ্জা। একদিকে আলোকসজ্জিত কোরবানি, অন্যদিকে চুপচাপ নীরব থাকা অসহায় পরিবার।

কোরবানির মূল শিক্ষা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা পরিষ্কারভাবে কোরআনে বলেছেন, ‘আল্লাহর নিকট তাদের মাংস ও রক্ত পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ: ৩৭) এই আয়াত আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, কোরবানির বাহ্যিক রূপ নয়, বরং অভ্যন্তরীণ খোদাভীতিই আসল।

কোরবানি এমন এক ইবাদত, যেখানে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই একমাত্র লক্ষ্য। এখানে বড় গরু নয়, বড় নিয়তের মূল্য। এই কোরবানির ঈদে আমাদের দরকার একটু সহমর্মিতা, একটু বুঝেশুনে মূল্যায়ন করা—কে কী করলেন, তার চেয়ে বড় কথা হলো, কে কীভাবে ত্যাগ করলেন।

ঈদ যেন শুধু গরুর দাম নয়, বরং আত্মত্যাগ, সহানুভূতি আর মানবিকতার শিক্ষা দেয়। কোরবানি আমাদের কখনোই অর্থবিত্তের অহংকার দেখানো শেখায় না; বরং শেখায় ত্যাগের মর্মবাণী। তাই কোরবানির পশু কেনার অসুস্থ প্রতিযোগিতা পরিহার করি এবং পশুর দাম গোপন রাখি আর সেটাই প্রকৃত ত্যাগ বলে মনে করি।

ইসতিয়াক আহমেদ শিক্ষার্থী, নওগাঁ সরকারি কলেজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পর্যটক এক্সপ্রেসের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে গেল অটোরিকশা-মোটরসাইকেল, নিহত ১
  • করোনায় ঢাকায় একজনের মৃত্যু
  • সর্বনাশ! এ তো শয়তানের নিশ্বাস!
  • দেশে আবারো করোনায় ১ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৩
  • ঈদযাত্রায় সায়েদাবাদে যাত্রীর চাপ, বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ
  • এই রাতে আলো ছিল, জয় ছিল, আর ছিল একজন হামজা চৌধুরী
  • শেরপুরে ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত, আহত ২
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার ‘সহজ তরিকা’
  • নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো শুধু লেখকই নন, একজন যোদ্ধাও
  • কোরবানি যেন ‘শো অফ’ না হয়